‘একদিন কাজ করলে ছয়শ টাকা পাই। এরমধ্যে দুইশ টাকা ঘর ভাড়া ও লেখাপড়ার জন্য রাখতে হয়। বউয়ের অসুখ, প্রতিদিন ৪০/৫০ টাকার ওষুধ লাগে। এরপর যা থাকে, তা দিয়ে কোনোমত খেয়ে-না খেয়ে দিন যায়।’ 

কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর বাসাবো এলাকার দিনমজুর আব্দুল মাজিদ। তিনি বলেন, ‘চাল-ডাল থেকে তেল-নুন সব কিছুর দাম বেশি। যা আয় করি তা দিয়ে এখন চলা যায় না। কাজ শেষে যাওয়ার সময় রাস্তায় কম দামে যে সবজি পাই তাই কিনে নেই।’

মাস মাংস কেনেন কি না জানতে চাইলে মাজিদ বলেন, ‘কাজ করে কয় টাকা পাই? শাক-সবজি কিনেই সংসার চলে না। মাছ মাংস কেমনে কিনব?’ 

তিনি বলেন, ‘আমার বয়স এখন ৬২ বছর হইল। সব সময় শরীর ভালো থাকে না। আগের মতো গায়ে শক্তিও পাই না। তাই প্রতিদিন কাজ থাকে না। মাসে গড়ে ১৪-১৫ হাজার টাকা আয় হয়। ঘরভাড়া, ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে হিমসিম খাচ্ছি। এই খাতে ঠিকঠাক টাকা খরচ করলে মাস শেষে বাজারের পয়সা থাকে না।’

আব্দুল মাজিদের মতো নিম্ন আয়ের অনেক মানুষ এখন দ্রব্যমূল্যের কষাঘাতে পিষ্ট। জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছেন এসব শ্রমজীবীরা। আয় কম খরচ বেশি হওয়ায় আয়-ব্যয়ের হিসাব কষতে এখন দিন পার করছেন। বাজারের আগুনে শুধু নিম্ন আয়ের মানুষ নয়, মধ্যবিত্তরাও দিশেহারা বলে জানা গেছে।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন জাহিদ হাসান। জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় মাসের হিসাব কষতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। ঢাকা পোস্টকে জাহিদ বলেন, ‘বাজারে এলেই হাজার টাকা শেষ। মাস শেষে বেতন পাই কত? বাচ্চাদের জন্য দুধ কিনতে হয়। মাসে ছয়টা প্যাকেট লাগে। আগে প্রতি প্যাকেট ৩৪০ টাকায় কিনতাম; এখন ৩৭০ টাকা। ১৮ টাকার সাবান এখন ২২ টাকা। তেলের দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। চাল-ডালসহ সব নিত্যপণ্যেরই দাম বেশি। মাস শেষে ঘরভাড়াসহ সংসারের অন্যান্য খরচ মেটাতে বিপাকে পড়তে হচ্ছে।’ 

তিনি বলেন, ‘দাম বাড়ার কারণে এখন মাছ-মাংসও ঠিকমতো কিনতে পারি না। গত ছয় মাসেও গরুর মাংস কিনি নাই। মাঝেমধ্যে ফার্মের মুরগি কিনতাম। এটার দামও বেড়ে গেছে। একটি ডিম কিনতে এখন ১০ টাকা লাগে। কী কিনব?  আমাদের মতো নিম্ন-মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষের কষ্টের শেষ নেই। আমরাতো ইচ্ছে করলেই টিসিবির লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনতে পারি না।’  

রাজধানীর বাসাবো এলাকার দিনমজুর আব্দুল মাজিদ

 

রাজধানীতে বাজারদরের চিত্র 

রাজধানীর মতিঝিল, খিলগাঁও, মুগদা ও সেগুনবাগিচা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারের সবচেয়ে সস্তা পাঙ্গাশ মাছের দামও কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে। এককেজি ওজন বা মাঝারি আকারের পাঙ্গাশ ১৫০ টাকা আর বড় পাঙ্গাশ বিক্রি হচ্ছে ১৯০-২০০ টাকায়। রুই-কাতলা মাছ আকারভেদে ২৮০-৪০০ টাকা, নওলা ২৫০ টাকা কেজি, কালবাউশ ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি, শিং,  মাগুর ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা, ট্যাংরা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, আইড় মাছ ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। চাষের কই মাছ বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়, যা গত সপ্তাহেও বিক্রি হয়েছে ২০০-২৫০ টাকায়। তেলাপিয়া কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৬০-২৫০ টাকা। এছাড়া প্রতিকেজি চিংড়ি আকারভেদে ৬০০ থেকে ১২০০ টাকা কেজি, ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা কেজি। গত সপ্তাহেও এই আকারের ইলিশের দাম ছিল ৬০০ টাকা।   

শীতের মৌসুমে সবজির দাম সাধারণত কম থাকে। কিন্তু এবার ছিল তার ব্যতিক্রম। ঢাকার বাজারগুলোতে গড়ে প্রতি পিস মাঝারি আকারের ফুলকপি ৩৫-৪০ টাকা আর বড় আকারের ফুলকপির দাম ৫০ টাকা, বাঁধাকপি ৩০-৪০ টাকা, শিম প্রতিকেজি ৬০ টাকা, বেগুন ৬০ থেকে ৭০ টাকা, শালগম ৪০ টাকা, করলা ৭০, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, কচুর মুখি ৫০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা। খিরা ৪০, পেঁপে ৩০, গাজর ৪০, টমেটো ৩০ থেকে ৪০ টাকা, মূলা ৩০ থেকে ৪০ টাকা আর আলু বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকায়। 

রাজধানীর বাজারগুলোতে এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ডিমের দাম। গত সপ্তাহে ১১০ টাকায় এক ডজন ফার্মের মুরগির ডিম এখন বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। এছাড়া গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ টাকায় আর খাসির মাংসের কেজি ৯০০ টাকা। 

পেঁয়াজ বিক্রেতা আল আমিন বলেন, ‘গত সপ্তাহে পেঁয়াজ ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি বিক্রি করেছি। তিনদিন হলো বিক্রি করছি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি, হঠাৎ দাম বেড়েছে। গত রোববার আড়তে মাল আনতে গেছি বেশি দামে কিনতে হয়েছে। খরচসহ পেঁয়াজের কেনা দামই এখন ৪০ টাকার বেশি পড়ে।’

এসআই/এইচকে