করোনা সংক্রমণের কারণে অমর একুশে বইমেলায় এবার প্রথম শুক্রবারে ছিল না ‘শিশু প্রহর’। কিন্তু আজ দ্বিতীয় শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) মেলার দশম দিনে ‘শিশু প্রহর’ রাখা হয়। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সকাল থেকেই শিশুদের পদচারণায় জমজমাট হয়ে ওঠে পুরো মেলা চত্বর। বিশেষ করে মেলার শিশু চত্বরটি। অভিভাবকদের সঙ্গে দলবেঁধে মেলায় এসেছে নানা বয়সের শিশু-কিশোররা। এক স্টল থেকে অন্য স্টলে ঘুরে ঘুরে দেখছে নিজেদের পছন্দের বই। কেউবা মেতে উঠেছে রঙপেন্সিল দিয়ে ছবি আঁকতে।

শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় বইমেলার দ্বার খুলতেই অভিভাবকের সঙ্গে ভিড় করতে থাকে শিশু-কিশোররা। সকালে মেলা ঘুরে দেখা যায়, অমর একুশে বইমেলায় দর্শনার্থীদের ভিড় চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে বাংলা একাডেমি শুক্রবারের মেলার একটা অংশকে ‘শিশুপ্রহর’ ঘোষণা দেওয়ায় অনেক অভিভাবক শিশুদের নিয়ে ভিড় করছেন। মেলায় আসা শিশু-কিশোরদের বইয়ের পছন্দের তালিকায় রয়েছে কমিকস, রূপকথা, গল্প, সায়েন্স ফিকশন, গণিত নিয়ে মজার খেলা ও ছড়ার বইগুলো। 

একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফজলুর রহমান শুক্রবার ছুটির দিনে স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে বইমেলায় ঘুরতে এসেছেন। জানালেন, তিনি এবং তার স্ত্রী দুজনই ব্যাংকে চাকরি করেন। তাই চাইলেও অন্যদিন মেলায় আসতে পারেন না। আজ ছুটির দিন সকালে মেয়েকে নিয়ে বই মেলায় এসেছেন। মেয়েও বিভিন্ন স্টলে ঘুরে ঘুরে নিজের পছন্দের বই কিনেছেন।

ফজলুর রহমানের মেয়ে জানান, মেলা থেকে ভূতের বই, মজার গণিত খেলার বই, রহস্যময় গল্পের বই কিনেছে। কারণ, এই বইগুলো তার ভালোলাগে। প্রতি বছর বাবা-মায়ের সঙ্গে মেলায় আসে সে। অনেক বই কেনে। 

রাজধানীর পোস্তগোলা থেকে বাবার সঙ্গে মেলায় ঘুরতে এসেছে ছোট্ট শিশু মায়েশা। তার বাবা আরিফুল ইসলাম জানান, শুক্রবার ছুটির দিন সপরিবারে বই মেলায় এসেছেন। বড় মেয়ে হুমায়ূন আহমেদের বই পড়তে পছন্দ করে। তাই মেয়েকে গল্পের বই কিনে দিয়েছেন। আর ছোট মেয়ে জন্য সিসিমপুরের বই কিনেছেন।

এবার মেলার দশম দিনে দ্বিতীয় শুক্রবার শিশু প্রহরে শিশুদের জন্য অঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা শিশুরা রঙপেন্সিল দিয়ে আঁকছে পছন্দের বিভিন্ন ছবি। 

রাজধানীর সেগুনবাগিচা থেকে বাবা তরিকুল ইসলামের সঙ্গে মেলায় ঘুরতে গেছেন শিশু ফাইয়াজ আহমেদ। মেলায় অঙ্কন প্রতিযোগিতায় এঁকেছে নিজের পছন্দের বাঘ। অঙ্কন শেষে সেটা নিয়ে এসেছে বাবাকে দেখানোর জন্য।

ফাইয়াজ আহমেদ জানাল, তার ভালোলাগে ফুল, পাখির ছবি আঁকতে। অঙ্কন প্রতিযোগিতার অংশ নিয়ে জাতীয় ফুল শাপলা ও জাতীয় পশু রয়েল বেঙ্গল টাইগারের ছবি এঁকেছে। 

শুক্রবার ছুটির বই মেলায় শিশু-কিশোরদের আগমনে বিক্রি বেড়েছে মেলার শিশু চত্বরের স্টলগুলোতে। এই অংশের স্টল মালিকরা জানান, ছুটির দিন ছাড়া অন্য দিন মেলায় শিশু-কিশোরদের উপস্থিত কম থাকে। কারণ, অভিভাবকদের ছাড়া তারা আসতে পারে না। তাই এই সময় শিশু চত্বরে বইয়ের বেচা-কেনাও কম হয়। শুক্র-শনিবার অভিভাবকরা শিশু-কিশোরদের মেলায় নিয়ে আসেন। এই দুই দিন বিক্রিও অন্যান্য দিনের তুলনায় কয়েকগুণ বেড়ে যায়।

শিশু চত্বরের ছোটদের স্টলের ম্যানেজার আজাদ বলেন, অন্যান্য দিনের তুলনায় আজ বিক্রি অনেক বেড়েছে। সকাল থেকে অভিভাবকরা শিশুদের নিয়ে মেলায় আসছেন। শিশুরা বিভিন্ন স্টল ঘুরে ঘুরে নিজেদের পছন্দের বই কিনছে।  

লেখকরা বলছেন, শিশুদের বই পড়তে দিতে হবে। সেটা যেকোনো ধরনের বই হতে পারে। তাহলে তাদের মেধার বিকাশ হবে। তারা বড় হয়ে নিজের দেশ, বড় বড় মানুষদের সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে উঠবে। বই না পড়ে সারাদিন টেলিভিশনে দেখলে শিশুদের মেধার বিকাশ হবে না। 

জনপ্রিয় লেখক জাফর ইকবাল বলেন, শিশুরা যদি ভূত-পেত্নী পছন্দ করে তাহলে তো কিছু করার নেই। শিশুদের বই পড়াটাই গুরুত্বপূর্ণ। একটা বই পড়ার জন্য যে সময়টা দিতে হয় সেটা গুরুত্বপূর্ণ। আর সেটা করার জন্য আমি যদি ভুত-প্রেত, রোবট দিয়ে শুরু করি তাতে কোনো সমস্যা নেই। শিশু বড় হলে তখন তার নিজস্ব পছন্দ একটা দাঁড়াবে। তখন সে হয়তো দেশ-বিদেশের বড় বড় মানুষ সম্পর্কে জানতে চাইবে।

তিনি আরো বলেন, শিশুদের জোর করে একটা বিষয়ের ওপর ঠেলে দিয়ে লাভ নেই। পৃথিবীর সব জায়গায় শিশুরা ভূত-প্রেত, সুপারম্যান পড়ে। কিন্তু পড়তে হবে, এটাই আমার কথা। শুধু বসে বসে টেলিভিশন দেখবে, কার্টুন দেখবে এটা হবে না। এটা করলে শিশুর বিকাশ হবে না।

এএইচআর/এইচকে