ত্রাণ বিতরণে আরও বেশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে চায় সরকার। এজন্য ইউনিক আইডির (স্মার্ট কার্ড) মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এ আইডিতে সুবিধাভোগীদের বিস্তারিত তথ্য থাকবে। যন্ত্রে পাঞ্চ (সংযোগ) করে নিতে হবে ত্রাণ। ফলে অনিয়ম করার সুযোগ একেবারেই কমে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, বিষয়টি বাস্তবায়ন করতে নতুন একটি প্রকল্প নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ৫০ লাখ হতদরিদ্র মানুষের তালিকা তৈরি করা হবে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে আরও জানা গেছে, তালিকা অনুযায়ী সুবিধাভোগীদের দেওয়া হবে ইউনিক আইডি। এ আইডিতে জন্ম নিবন্ধন নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নম্বরের তথ্য থাকবে। এছাড়া মোবাইল নম্বর, ব্যাংক হিসাব নম্বর, পরিবারের লোকসংখ্যা, তাদের সম্পদ এবং আয়ের তথ্যসহ আরও তথ্য থাকবে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এক্ষেত্রে নতুন পদ্ধতিতে ত্রাণ বিতরণ করা হবে। ত্রাণ বিতরণের সময় বিতরণকারীদের কাছে থাকবে পাঞ্চ (সংযোগ) যন্ত্র। এর মাধ্যমে পাঞ্চ করে ত্রাণ নিতে হবে। পাঞ্চ করা ছাড়া কেউ ত্রাণ নিতে পারবে না। এতে করে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে আরও বেশি স্বচ্ছতা আসবে বলে মনে করছেন তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ত্রাণ বিতরণে আরও বেশি স্বচ্ছতা আনতে সরকার কাজ করছে। ডিজিটাল অ্যাপের মাধ্যমে যেন ত্রাণ কার্যক্রম ও মানবিক সহায়তা দেওয়া যায়, সেজন্য উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

এজন্য একটি প্রকল্প নেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এটি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, প্রকল্পের মাধ্যমে হতদরিদ্র মানুষের তালিকা তৈরি করা হবে। তাদেরকে বিভিন্ন তথ্য সম্বলিত স্মার্ট কার্ড দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ করা হলে কে কতবার সরকারি সহায়তা গ্রহণ করেছে, তার সঠিক হিসাব থাকবে। ফলে ত্রাণ বিতরণে আরও বেশি স্বচ্ছতা আসবে বলেও মনে করেন তিনি।

জানা গেছে, করোনাকালে সাত কোটিরও বেশি মানুষকে মানবিক সহায়তা করেছে সরকার। এ সময় ত্রাণ বিতরণে বিভিন্ন অনিয়মের চিত্রও গণমাধ্যমের খবরে প্রকাশ পেয়েছিল।

এসব কারণে ১০০ জনপ্রতিনিধিকে বহিষ্কার করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এর মধ্যে ৬৪ জনই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য। আর ইউপি চেয়ারম্যান আছেন ৩০ জন। বাকিরা পৌর কাউন্সিলর, জেলা পরিষদ সদস্য ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান বলে জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরকার দরিদ্র মানুষের জন্য ত্রাণ বরাদ্দ রাখলেও অনেক সময় জনপ্রতিনিধিরা অনিয়ম করে থাকেন। এক্ষেত্রে সরকারের বদনাম হয়। বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়ও বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, আমরা চাই জনপ্রতিনিধিরা অনিয়ম করার সুযোগ যাতে না পায়। সুযোগ না পেলে অনিয়মও হবে না। ইউনিক আইডি দিয়ে পাঞ্চের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ করা হলে এসব অনিয়ম একেবারেই কমে আসবে বলে আমরা আশা করছি। সেজন্য আমরা বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি।

এসএইচআর/এসএসএইচ