করোনা মোকাবিলায় বিমসটেককে একযোগে কাজ করার আহ্বান
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন
করোনাভাইরাস পরিস্থিতি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিমসটেকভূক্ত দেশগুলোকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন। সোমবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) আয়োজিত ‘বে অব বেঙ্গল ইকোনমিক ডায়ালগ ২০২১: পোস্ট কোভিড চ্যালেঞ্জেস ইন দ্য বে অব বেঙ্গল রিজিয়ন’ শীর্ষক চারদিনব্যাপী ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের উদ্বোধন পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।
করোনা মোকাবিলায় বিমসটেক একটি উপযুক্ত ফোরাম উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির মধ্যে সদস্য দেশগুলোকে আরও দৃঢ়তা নিয়ে কাজ করতে হবে এবং করোনা পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নতুন নতুন কৌশল প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিতে হবে।’
বিজ্ঞাপন
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ বিমসটেকভূক্ত অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও উৎকর্ষে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এ লক্ষ্যে আসিয়ান ও সার্কের সদস্যভূক্ত সাতটি রাষ্ট্রের সমন্বয়ে গঠিত বিমসটেক ফোরামে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য হিসেবে ১৯৯৭ সালে যোগদান করে। তারপর থেকেই এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য, কানেক্টিভিটি, কৃষি, সংস্কৃতি, মানুষে মানুষে যোগাযোগ প্রভৃতির উন্নয়নে অন্যান্য সদস্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশ একযোগে কাজ করে যাচ্ছে।’
বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন (বিমসটেক) হচ্ছে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, মিয়ানমার, নেপাল, শ্রীলংকা ও থাইল্যান্ডের সমন্বয়ে গঠিত একটি আঞ্চলিক জোট। বর্তমানে সংস্থাটির নতুন মহাসচিব ভুটানের তেনজিন লেখফেল। তার আগের মহাসচিব ছিলেন বাংলাদেশের মো. শাহীদুল ইসলাম। তিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করছেন।
বিজ্ঞাপন
আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে পারস্পরিক উন্নয়ন এখনকার কূটনীতির মূলনীতি বলে বিবেচিত, বক্তব্যে যোগ করেন মোমেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সর্বপ্রথম আঞ্চলিক সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছিলেন। তখন থেকেই আঞ্চলিক সহযোগিতার বিষয়টি বাংলাদেশের সংবিধান ও কূটনীতির অপরিহার্য অংশ। এরই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিভিন্ন আঞ্চলিক ফোরামে যুক্ত থেকে সম্মিলিত সহযোগিতার মাধ্যমে আঞ্চলিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করে চলছে।
মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিমসটেক ফোরামে প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য হিসেবে যোগদান করে এ ফোরামের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। এর অংশ হিসেবে বিমসটেক প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে ঢাকায় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বিমসটেক সচিবালয়। এছাড়াও বিমসটেক ফোরামের ব্যবসা-বাণিজ্য ও উন্নয়নের নেতৃত্বদানকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সদস্য দেশগুলোর সাথে যুগপৎভাবে এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে একটি কার্যকর মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ অগ্রসর ভূমিকা পালন করছে।
এ সময় মোমেন বিমসটেককে একটি সম্ভাবনাময় ফোরাম হিসেবে সম্মিলিত যোগাযোগের মাধ্যমে এ অঞ্চলে নতুন নতুন ব্যবসায় ক্ষেত্রের সুযোগ অনুসন্ধান ও তার কার্যকর ব্যবহারে সচেষ্ট থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বিমসটেক ১৯৯৭ সালের ৬ জুন গঠন করা হয়। শুরুতে বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা এবং থাইল্যান্ড এ চারটি দেশ সংস্থাটি শুরু করে। তখন অবশ্য এর নাম ছিল বিআইএসটি-ইসি। পরবর্তীতে সংস্থাটি শুরুর ছয় মাসের মাথায় মিয়ানমার এতে অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত মন্ত্রী পর্যায়ের ২য় বৈঠকে নেপালকে পর্যবেক্ষকের মর্যাদা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ২০০৩ সালে নেপাল ও ভুটানকে সংগঠনটির পূর্ণ সদস্যের পদ প্রদান করা হয়। ২০০৪ সালে সংগঠনের প্রথম আনুষ্ঠানিক শীর্ষ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ সংগঠনটির নাম পরিবর্তনের পক্ষে মত দেন এবং সংগঠনটির পরিবর্তিত নামটি দাঁড়ায় বিমসটেক।
সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হানের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিমসটেকের মহাসচিব তেনজিন লেকপেল, থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি পার্মানেন্ট সেক্রেটারি চুতিনটন স্যাম গংসাংগদি, ভুটানের ঊর্ধ্বতন উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ ড. কিনলে দর্জি ও বিমসটেকের প্রাক্তন মহাসচিব সুমিত নাকানডালা প্রমুখ।
এনআই/এমএইচএস