সহিংসতার ভয়ের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী কার্যক্রম
সহিংসতার ভয় রুদ্ধ করে দেয় নারীদের, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের নারীদের সম্ভাবনা, তাদের এগিয়ে চলার পথ। এ ভয়কে রুখে দিতে তাদের মধ্যে নেতৃত্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০২২ উপলক্ষে শুরু হচ্ছে দেশব্যাপী কার্যক্রম ও প্রচারণা অভিযান।
আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ ও বাংলাদেশি উন্নয়ন সংস্থা জাগো ফাউন্ডেশন একসঙ্গে যুবদের একত্রিত করছে ‘সহিংসতার ভয় আর নয়’ শীর্ষক অভিযানে।
বিজ্ঞাপন
সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত আওয়াজ তুললেও সহিংসতার ভয় এবং এ ভয়ের প্রভাব নিয়ে কথা বলা হয় সামান্যই। অথচ যুবদের, বিশেষ করে যুব নারীদের জীবনে এ ভয়ের রয়েছে ভয়াবহ প্রভাব। আর তাই প্রথমবারের মতো সহিংসতার ভয়ের বিরুদ্ধে নানা কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে একত্রিত হবে সারাদেশের যুবরা।
সোমবার প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ঢাকাস্থ কান্ট্রি অফিসে দুই সংস্থার প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয় এই প্রচারণা অভিযানের।
বিজ্ঞাপন
আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের গার্লস রাইটস ডিরেক্টর কাশফিয়া ফিরোজ, ক্যাম্পেইন ম্যানেজার সেমন্তি মঞ্জরী, জাগো ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা করভি রাখসান্দ ও সহকারী পরিচালক এশা ফারুকী।
আলোচনায় কাশফিয়া ফিরোজ বলেন, সহিংসতার এই ভয় শুধু কিশোর-কিশোরীদের জীবনেই সীমাবদ্ধ নয়। আর তাই, সহিংসতার ভয়ের বিরুদ্ধে প্রচারণা শুরুর প্রাক্কালে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ দেশের সব বিভাগ থেকে পারিবারিক বলয়, রাস্তা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অনলাইনসহ বিভিন্ন পরিমণ্ডল থেকে ‘সহিংসতার ভয়’ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে।
তিনি বলেন, প্রায় ১২ হাজার অংশগ্রহণকারীর ওপর জরিপ পরিচালনার মাধ্যমে আমরা জানতে পারি, ৮১ দশমিক ৬ শতাংশ নারী গণপরিসরে বিভিন্ন রকম হয়রানির শিকার হন। ৮৬ দশমিক ৮ শতাংশ নারী ও কিশোরী জানান, তারা নিজ পরিবারেই বিভিন্ন ধরনের সহিংসতার শিকার হয়েছেন।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৭৪ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী তাদের শিক্ষক, সিনিয়র স্টুডেন্ট দ্বারা বিভিন্ন বিরূপ ও অশালীন মন্তব্যের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেন। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বিরূপ মন্তব্যের শিকার হওয়ার কথা জানান অংশগ্রহণকারীদের ৫৭ শতাংশ, আর কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার কথা জানিয়েছেন অংশগ্রহণকারীদের ৫৬ শতাংশ।
কাশফিয়া ফিরোজ বলেন, জরিপে প্রাপ্ত তথ্য থেকে আমরা জানতে পারি, ভয়ের কারণে অনেক সময় বাবা-মায়েরা মেয়েদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, খেলাধুলা, পিকনিকে অংশগ্রহণ করতে দিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। সহিংসতার ভয়ের এ বলয়কেই আমরা আমাদের কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে ভাঙতে চাই।
করভি রাখসান্দ বলেন, আগ্রাসন কিংবা জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার ভয় নারীর জীবনকে সীমাবদ্ধ করে তোলে। আমরা চাই সমাজের প্রতিটি জায়গা, প্রতিটি স্তর হবে সবার জন্য নিরাপদ।
শুরুতেই ঢাকা, রংপুর, বরিশাল ও কক্সবাজার থেকে নির্বাচিত ২০ জন যুব দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ নেবেন, যেন তারা নিজ নিজ কমিউনিটিতে গিয়ে তাদের কমিউনিটির তরুণদের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সহিংসতার ভয়ের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করতে পারেন। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলবে গণপ্রচারণা অভিযান।
পুরো ক্যাম্পেইনটি শেষ হবে একটি জাতীয় আলোচনার মধ্য দিয়ে, যেখানে যুবদের মধ্য থেকেই উঠে আসবে সহিংসতার ভয়বিষয়ক চ্যালেঞ্জের গল্প এবং তা মোকাবিলার পথ।
দেশের উন্নয়নে একদিকে যেমন কন্যাশিশু ও যুব নারীদের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে, অন্যদিকে তারাই হচ্ছেন সহিংসতার শিকার, বাঁধা পড়ছেন সহিংসতার ভয়ের শেকলে।
সহিংসতার এ ভয়ের বিরুদ্ধে অ্যাডভোকেসির মাধ্যমে আগামী দশ বছর কাজ করার দেশীয় কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই এবারের আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে সামনে রেখে দেশব্যাপী কার্যক্রমের এ আয়োজন।
নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা, তাদের কাজের প্রশংসা এবং ভালোবাসা প্রকাশের পাশাপাশি অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সাফল্য উদযাপনের উদ্দেশ্যে নানা আয়োজনে পালিত হয় নারী দিবস। নারীদের অধিকার অর্জন উদযাপন এবং লিঙ্গ বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইকে সমর্থনের জন্য পালিত এ দিনটিকে নানা কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে উদযাপন করে থাকে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ। এ বছরের বৈশ্বিক ও জাতীয় প্রতিপাদ্য ‘টেকসই আগামীর জন্য, জেন্ডার সমতাই আজ অগ্রগণ্য’। বৈশ্বিক ক্যাম্পেইন থিম হচ্ছে, ‘ব্রেক দ্য বায়াস’।
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বৈশ্বিক ক্যাম্পেইনের সঙ্গে মিল রেখে ‘বাঁধা পড়তে নয়, ভাঙতে এসেছি’ ট্যাগলাইন নিয়ে পালন করতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২২। চলবে মাসব্যাপী নানা কার্যক্রম।
আরএইচ