মাঠ প্রশাসনে কর্মরত এক কর্মকর্তা

একসময় প্রশাসনে নারীদের সংখ্যা তুলনামূলক কম থাকলেও প্রতিনিয়ত তাদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। প্রশাসনে বর্তমানে কাজ করছেন দেড় হাজার নারী। কর্মক্ষেত্রে তাদের এখনও রয়েছে নানা চ্যালেঞ্জ। সেগুলো মোকাবিলা করেই কাজ করে যাচ্ছেন নারীরা।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে প্রশাসনে কর্মরত আছেন ১ হাজার ৫৩২ জন নারী। এর মধ্যে সচিব ও সমমর্যাদায় মোট ১২ জন নারী কর্মরত আছেন। অতিরিক্ত সচিব পদে ৫৮ জন এবং যুগ্মসচিব পদে কাজ করছেন ১২৩ জন নারী।

কেন্দ্রীয় প্রশাসনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মাঠ প্রশাসনেও নারীদের উপস্থিতি বাড়ছে। জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদে ৮ জন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পদে ১৩৮ জন এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদে ১৪৬ জন নারী কর্মরত আছেন।

প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মরত নারীরা জানান, কাজ করতে গিয়ে তাদের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়। নিজেদের যোগ্যতা ও দক্ষতা দিয়েই তা মোকাবিলা করেন তারা।

বর্তমানে প্রশাসনে কর্মরত আছেন ১ হাজার ৫৩২ জন নারী। এর মধ্যে সচিব ও সমমর্যাদায় মোট ১২ জন নারী কর্মরত আছেন। অতিরিক্ত সচিব পদে ৫৮ জন এবং যুগ্মসচিব পদে কাজ করছেন ১২৩ জন নারী

জানতে চাইলে বিসিএস উইমেন নেটওয়ার্কের সভাপতি ও খাদ্যসচিব ড. মোছা. নাজমানারা খানুম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বর্তমানে নারীদের অবস্থান পজিটিভলিই দেখি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার প্রেক্ষিতে নারী উন্নয়নের পদক্ষেপগুলো খুব সুস্পষ্ট। সবদিক দিয়েই নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে। তবে নারীদের  চ্যালেঞ্জের মুখেও পড়তে হয়।

তিনি বলেন, প্রশাসনে কর্মরত নারীদের চ্যালেঞ্জগুলোর রূপ পরিবর্তন হয়। প্রথম দিকে প্রশাসনে যেসব নারী ঢুকেছিল, তখন যে চ্যালেঞ্জ ছিল, সেটা এখন নেই। যেমন— তখন যোগাযোগের সমস্যা ছিল, যাতায়াতের সমস্যা ছিল। আমাদের সময় গাড়িগুলো অত ভালো ছিল না, রাস্তাঘাটও অত ভালো ছিল না। কিন্তু এখন এসব সমস্যা নেই। তাই সেসব চ্যালেঞ্জও এখন নেই।

তবে রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিকসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ এখনও বিদ্যমান বলে জানান ড. মোছা. নাজমানারা খানুম। তিনি বলেন, নারীদের সবার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে হয়। সমন্বয়ের জায়গায় অনেক সময় নারীরা যেভাবে কাজ করতে চান, সেখানে হয়ত বিভিন্ন রকমের প্রেশার গ্রুপ কাজ করে।

সচিব আরও বলেন, পদোন্নতি এবং পদায়নের ক্ষেত্রে অনেকটাই স্মুথ হয়ে গেছে। নিচের লেভেলে ইনসাফ করেই হচ্ছে। তবে ওপরের লেভেলে এখনও একটু ঘাটতি রয়ে গেছে। আমাদের আরও বস্তুনিষ্ঠভাবে, যেমন— নারীদের যেখানে যে প্রাপ্য আছে, তাদের কর্মদক্ষতা অনুযায়ী সেটা দেওয়া (প্রয়োজন)। 

চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) অঞ্জনা খান মজলিশ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের কাজটাই চ্যালেঞ্জিং। মাঝে-মধ্যে চ্যালেঞ্জ তো নিতে হয়। সেক্ষেত্রে আমাদের যোগ্যতা, দক্ষতা এবং বুদ্ধিমত্তা দিয়ে সেগুলো মোকাবিলা করতে হয়।

যেমন একটি চ্যালেঞ্জই বলি, যখন আমাকে ডিসি হিসেবে এখানে পদায়ন করা হয়, তখনই আমার নামের সঙ্গে জেলা প্রশাসক না বলে বলল নারী ডিসি। আমার নামের সঙ্গে প্রথমে জেন্ডার বৈষম্য চলে আসল। বলবে জেলা প্রশাসক বা ডিসি, সেখানে বলছে নারী ডিসি। একজন পুরুষ যখন জেলা প্রশাসক হয় তখন তো তাকে বলে না পুরুষ ডিসি। কিন্তু যখন একজন নারী ডিসি হিসেবে আসল, তখন বলা হলো নারী ডিসি। নামের আগে নারী ডিসি পদবি যোগ করা, এটাই এক ধরনের চ্যালেঞ্জ, বলেন তিনি।

ডিসি অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, সমাজে নারীর প্রতি এখনও যে একটা আস্থা তৈরি হয়নি, এটাই হচ্ছে তার প্রমাণ। এটা আমাদের চ্যালেঞ্জ। আমাদের প্রমাণ করতে হয়, আমরা আমাদের যোগ্যতা বলে কাজ করতে পারি। এ চ্যালেঞ্জগুলো প্রতিনিয়তই আমাদের মোকাবিলা করতে হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কাজ করতে গিয়ে বাধা-চাপ সেভাবে আমি ফিল করিনি। কারণ আমি যে কাজটিই নিয়েছি, আমার মতো করে যোগ্যতা-দক্ষতা দিয়েই করেছি। সেক্ষেত্রে আমি কোনো ধরনের বাধা বা চাপ ফিল করিনি।

তবে একজন ইউএনও জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় প্রশাসনের চেয়ে মাঠ প্রশাসনে কাজ করা বেশি চ্যালেঞ্জের। কারণ এখানে রাজনৈতিকসহ নানা ধরনের চাপ মাথায় নিয়ে কাজ করতে হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই ইউএনও বলেন, কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন চাপ আসে। সেগুলোর অধিকাংশই রাজনৈতিক। এগুলো মোকাবিলা করেই আমরা কাজ করি।

এসএইচআর/এসএসএইচ