প্রায় সাড়ে ৩৬ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক সচিব মো. আতাহারুল ইসলাম ও বিদেশে পলাতক রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদারসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

ফাস (এফএএস) ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড থেকে ওই টাকা আত্মসাতের অভিযোগে রোববার (১৩ মার্চ) সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. রাকিবুল হায়াত বাদী হয়ে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ মামলাটি দায়ের করেন। 

দুদকের জনসংযোগ শাখা বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। 

ক্যাসিনো অভিযানের ধারাবাহিকতায় আলোচিত পিকে হালদারের বিরুদ্ধে প্রায় তিন হাজার ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ ওঠার পর এখন পর্যন্ত ৩১টি মামলা দায়ের করে দুদক।

এবারের মামলার আসামিরা হলেন- রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক এমডি প্রশান্ত কুমার হালদার (পিকে হালদার), সুখাদা প্রোপার্টিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান রতন কুমার সমাদ্দার ও এমডি অভিতাভ অধিকারী, ফাস ফাইন্যান্সের চেয়ারম্যান মো. সিদ্দিকুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহরিয়ার,  পরিচালক এম এ হাফিজ, কাজী মাহজাবিন মমতাজ, সোমা ঘোষ, ডা. উদ্দাব মল্লিক, মো. আতাহারুল ইসলাম, অরুণ কুমার কুন্ডু, অঞ্জন কুমার রায়, প্রদীপ কুমার নন্দী, ফাস ফাইন্যান্সের স্বতন্ত্র পরিচালক বীরেন্দ্র কুমার সোম, সিনিয়র অফিসার মৌসুমী পাল, ম্যানেজার আহসান রাকিব, প্রাক্তন সিনিয়র অফিসার তাসনিয়া তাহসিন রোজালিন, ফাস ফাইন্যান্সের ভিপি ও আইসিসি অ্যান্ড রিকভারি হেড মো. মনির হোসেন, সাবেক ভিপি ও সিএফও মো. মনিরুজ্জামান আকন্দ, সাবেক এসভিপি ও এসএমই প্রধান মো. আজিমুল হক এবং সাবেক এসইভিপি ও সিএডির প্রধান প্রাণ গৌরাঙ্গ দে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতারণা ও জাল জালিয়াতির মাধ্যমে সুখাদা প্রোপার্টিজ লিমিটেডের নামে একটি ভুয়া ও কাগুজে প্রতিষ্ঠানকে ফাস ফাইন্যান্স থেকে ৪০ কোটি ঋণ অনুমোদন করেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে ৩৬ কোটি  ৩৭ লাখ ৮৮ হাজার ৮৯৫ টাকা আত্মসাৎ করেন। এসব অর্থ বিভিন্ন লেয়ারিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানি ও ব্যক্তির ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে অবস্থান গোপন করে পাচার করে অপরাধ করেন। 

দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬ সালের ২৬ জুন সুখাদা প্রোপার্টিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান রতন কুমার সমাদ্দার ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক অমিতাভ অধিকারী ৪০ কোটি টাকা ঋণের জন্য ফাস ফাইন্যান্সে আবেদন করেন। ঋণের আবেদনের সময় জামানত হিসেবে ঢাকার খিলক্ষেত এলাকার ৩৪ দশমিক ২৫ শতাংশ জমির কথা উল্লেখ করা হয়। কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই ছাড়াই গ্রাহকের আবেদনের তথ্যের ভিত্তিতে ফাস ফাইন্যান্সের সিনিয়র অফিসার মৌসুমী পাল ও ম্যানেজার আহসান রাকিব ঋণ প্রস্তাব প্রস্তুত করে ক্রেডিট কমিটিতে উপস্থাপন করেন। ফাস ফাইন্যান্সের সাবেক সিনিয়র অফিসার তাসনিয়া তাহসিন রোজালিন ঋণ প্রস্তাবের সঠিকতা যাচাই করেন। এর দুইদিন পর ২৮ জুন ঋণ প্রস্তাবটি ক্রেডিট কমিটির সভায় যাচাই-বাছাই ও কোনো ধরনের আপত্তি ছাড়াই অনুমোদন করে। ঋণ আবেদনের তিনদিন পর ২৯ জুন ঋণ প্রদানের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়।  

দুদকের অনুসন্ধান সূত্রে আরও জানা গেছে, রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক এমডি প্রশান্ত কুমার হালদারের বিরুদ্ধে কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ জমা পড়ে দুদকে। কমিশন অভিযোগ অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধানের নেতৃত্বে একটি অনুসন্ধানী দল গঠন করে। 

দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা ফাস ফাইন্যান্সের ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়ে প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষ করে ৫২৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ১৩টি মামলা দায়ের করার সুপারিশ তুলে ধরে কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করেন। কমিশন প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে ১৫ ফেব্রুয়ারি মামলাগুলো দায়েরের অনুমোদন দেয়। প্রতিটি মামলায় রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক এমডি প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালাদার ও ফাস ফাইন্যান্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. রাসেল শাহরিয়ারসহ ২৯ জনকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে চারটি মামলায় আসামির তালিকায় আছেন সাবেক সচিব মো. আতাহারুল ইসলাম। 

আরএম/জেডএস