মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশ সদস্যরা

দায়িত্ব পালনকালে পুলিশের সদস্যরা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে তাদের নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। মাঠ পর্যায়ে দায়িত্বরতদের হরহামেশা এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। তাৎক্ষণিক চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতকল্পে ২৪ ঘণ্টা টেলিমেডিসিন সার্ভিস চালুর দাবি তুলেছেন পুলিশের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা।

এ বছর পুলিশ সপ্তাহে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে রাজারবাগের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত পুলিশ প্রধানের দরবারে এ দাবি ছাড়াও স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সংক্রান্ত বেশ কিছু দাবি উত্থাপিত হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদরদপ্তরের ওয়েলফেয়ার বিভাগের এআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা বলেন, করোনাকালে ২৪ ঘণ্টার জন্য টেলিমেডিসিন সেবা চালু করা হয়েছিল। সংক্রমণ কমে যাওয়ায় ওই সেবা বন্ধ হয়ে গেছে। পুলিশ সদস্যরা চান ২৪ ঘণ্টার টেলিমিডিসিন সেবাটা কেন্দ্রীয়ভাবে চালু হোক। এ নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। আশা করা যায়, শিগগিরই সেবাটি পূর্ণ সক্ষমতার সঙ্গে চালু করা সম্ভব হবে।

নিজস্ব ডায়াগনস্টিক সেন্টার স্থাপন

প্রতিটি জেলা ও বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালে অফিসার ও ফোর্সের কল্যাণে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নিয়োগ এবং বিভিন্ন প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার জন্য পুলিশের নিজস্ব ডায়াগনস্টিক সেন্টার স্থাপনের দাবি উত্থাপন করেছেন এসএমপির কর্মকর্তারা। এছাড়াও সিলেট পুলিশ সুপার বান্দরবান, ১ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, কমান্ড্যান্ট (আরআরএফ), রংপুর, অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট ও নাটোর পুলিশ সুপারও দরবারে একই দাবি উত্থাপন করেছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পুলিশ হাসপাতাল থেকে প্রেসক্রিপশন মিললেও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয় বেসরকারি কিংবা সরকারি অন্য হাসপাতালে। এক্ষেত্রে যদি নিজস্ব হাসপাতালে প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকত, তাহলে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের ভোগান্তি কমত, বাঁচত সময়ও।

সারদায় পুলিশ একাডেমিতে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নিয়োগ

বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি হাসপাতালে বেশ কয়েকজন ডাক্তারের পদ শূন্য। তাই জরুরি ভিত্তিতে শূন্য পদগুলোতে চিকিৎসক নিয়োগ করাসহ একজন বিশেষজ্ঞ অর্থোপেডিক্স ডাক্তার নিয়োগ দেওয়ার দাবি উত্থাপন করা হয় সারদার বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি থেকে। বিষয়টি দেখভাল করার দায়িত্ব পালন করছিল ডিআইজি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ও ডিসিপ্লিন বিভাগ এবং হিউম্যান রিসোর্স বিভাগ।

পুলিশ হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা

কুড়িগ্রাম পুলিশ সুপার ও ডিএমপির একজন ডিসি বিভাগীয় শহরগুলোতে অত্যাধুনিক পুলিশ হাসপাতাল ও পুলিশের জন্য একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের দাবি উত্থাপন করেন। পাশাপাশি কোনো পুলিশ সদস্য গুরুতর অসুস্থ বা আহত হলে জরুরিভাবে তার সুচিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা যায় কি না সে দাবি উত্থাপন করেন পাবনার পুলিশ সুপার।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, মেডিকেল সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে বাবা-মাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তেমনি স্ত্রীর বা স্বামীর বাবা-মাকেও অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। প্রত্যেক পুলিশ ও নন-পুলিশ সদস্যকে শারীরিকভাবে সুস্থ রাখতে প্রতিবছর অন্তত একবার সরকারিভাবে স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও উঠে আসে।

কল্যাণ তহবিল থেকে এককালীন চিকিৎসা সাহায্য

বাংলাদেশ পুলিশে কর্মরত সদস্যরা ক্যান্সার, কিডনি সমস্যা ও হার্টের সমস্যার মতো বড় ধরনের রোগে আক্রান্ত হলে পুলিশ কল্যাণ তহবিলে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সামান্য পরিমাণ অর্থ এককালীন সাহায্য হিসেবে দেওয়া হয়। অবশিষ্ট অর্থ ধার-দেনা করে সংগ্রহ করতে হয়। এতে পরিবারকে বড় ধরনের ঋণে পড়তে হয়। এক্ষেত্রে বড় কোনো রোগে আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের সম্পূর্ণ চিকিৎসাব্যয় পুলিশ কল্যাণ তহবিল থেকে দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে বলে দাবি উত্থাপন করেন বগুড়া আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের এক কর্মকর্তা।

এক অনুষ্ঠানে ঢাকা পোস্টের পক্ষ থেকে টেলিমেডিসিন সেবা চালুর বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, করোনাকালে বিশেষ পরিস্থিতিতে টেলিমেডিসিন সেবা চালু করেছিলাম। এটাকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। তবে আমরা অধিক গুরুত্ব দিচ্ছি বাস্তবসম্মত চিকিৎসাকে। এক সময়কার ২৫০ শয্যার কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল এখন সাড়ে ১১শ  শয্যার হয়েছে। আধুনিক সরঞ্জামাদি সংযুক্ত করা হয়েছে। এ বছরই হার্টের রোগে ভোগা পুলিশ সদস্যদের কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে হার্টে রিং পরানো যাবে। পাশাপাশি আগামী দুই বছরের মধ্যে ঢাকা বিভাগীয় একটি পুলিশ হাসপাতাল তৈরি করা হবে।

আইজিপি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ধরনের দায়িত্ব ও কাজের পরিবেশের কারণে বিশেষ ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। শ্বাসকষ্ট, কিডনি, ক্যানসার ও হার্টের সমস্যা হচ্ছে। আমরা ইতোমধ্যে ডায়ালাইসিস ইউনিট যুক্ত করেছি। যেখানে কিডনি রোগে আক্রান্ত ১০০ থেকে ১৫০ পুলিশ সদস্য ডায়ালাইসিস সুবিধা পাচ্ছেন। আমরা ক্যাথ ল্যাব (কার্ডিয়াক ক্যাথেটারাইজেশন) সংযুক্ত করছি। এর ফলে আর বাইরে যেতে হবে না হার্টের রোগীদের। ইন হাউজ রিং পরানো যাবে।

ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, এ মুহূর্তে আমরা কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে ক্যানসার ল্যাব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছি। কাজ শুরু হয়েছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে আশা করছি ক্যানসারের ইউনিট যুক্ত হবে। তখন ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের কেমোথেরাপি দিতে বাইরে যেতে হবে না।

ঢাকায় হচ্ছে বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতাল

আইজিপি বলেন, অন্যান্য বিভাগে ছোট-বড় পুলিশ হাসপাতাল থাকলেও ঢাকায় নেই। সেজন্য ঢাকায় বিভাগীয় একটি পুলিশ হাসপাতাল তৈরি হচ্ছে। প্রথমবারের মতো কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের পাশাপাশি ঢাকাতেই বিভাগীয় হাসপাতাল হচ্ছে। ইতোমধ্যে সরকার সম্মতি দিয়েছে। এটি হয়ে গেলে ঢাকার কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চাপ কমবে।

সদস্যদের পুরো চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে চায় পুলিশ

এককালীন চিকিৎসা সহায়তা বাড়ানোর দাবি উত্থাপিত হয়েছে। সেটি বাড়ানোর উদ্যোগ রয়েছে কি না জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, চিকিৎসা সহায়তা তো চিকিৎসার জন্যই। আমরা সেটিই নিশ্চিত করতে চাই। পাঁচ লাখ, ১০ বা ১৫ লাখ টাকা না দিয়ে পুরো চিকিৎসার ব্যবস্থাটাই যেন পুলিশ হাসপাতালে করা যায়, সে চেষ্টাই আমরা করছি।

জেইউ/আরএইচ