রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে দুদকের প্রতিবেদন পেশ

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে ২০২০ ও ২০২১ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

রোববার (২০ মার্চ) সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে দুদক চেয়ারম্যান মঈনউদ্দিন আবদুল্লাহর নেতৃত্বে বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ করা হয়। এ সময় দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) মো. মোজাম্মেল হক খান, কমিশনার (তদন্ত) জহুরুল হক ও দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন উপস্থিত ছিলেন। দুদকের জনসংযোগ দপ্তর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

দুদক জানায়, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪-এর ২৯(১) ধারা অনুযায়ী দুদকের বার্ষিক প্রতিবেদন রাষ্ট্রপতি সমীপে প্রতিবছর পেশ করার বিধান রয়েছে। কিন্তু বৈশ্বিক অতিমারি কোভিড ১৯-এর প্রাদুর্ভাব ও বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে ২০২০ সালের প্রতিবেদন যথাসময়ে প্রণয়ন করা সম্ভব হয়নি। তাই এ বছর ২০২০ ও ২০২১ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন একত্রে প্রণয়ন করা হয়েছে।

বার্ষিক প্রতিবেদনে কমিশনের কার্য-সম্পাদন, সম্পাদিত কাজের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক জবাবদিহিতা এবং সরকার প্রদত্ত সম্পদের ব্যবস্থাপনার বিস্তারিত তথ্যসহ কমিশনের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বলে দুদক জানিয়েছে।

দুদক সূত্রে আরও জানা যায়, কমিশন তার দায়িত্বের অংশ হিসেবে স্ব-উদ্যোগে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানকে দুর্নীতিমুক্ত ও জনবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২৫টি প্রাতিষ্ঠানিক টিম গঠন করেছে। প্রাতিষ্ঠানিক টিমসমূহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিদ্যমান আইন, বিধি, পরিচালনা পদ্ধতি ও জনসেবা সংক্রান্ত সফলতা ও সীমাবদ্ধতার দিকগুলো পর্যালোচনা করে বাস্তবায়নযোগ্য সুনির্দিষ্ট সুপারিশমালা প্রণয়ন করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তরে প্রেরণ করেছে।

দুদক জানায়, কমিশন দুর্নীতি প্রতিরোধে সামাজিক শক্তিকে জাগ্রত করার প্রয়াসে নানাবিধ অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সততা ও নিষ্ঠাবোধ সৃষ্টির লক্ষ্যে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে শিক্ষকদের সম্পৃক্ত করে ২৭ হাজার ৬২৯টি সততা সংঘ গঠন এবং ৫ হাজার ৭৫৬টি সততা স্টোর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের সাংগঠনিক কাঠামোতে গোয়েন্দা, পর্যবেক্ষণ, সম্পদ ব্যবস্থাপনা, এনফোর্সমেন্ট ইউনিট গঠনের পর এতে প্রয়োজনীয় জনবল পদায়ন, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কার্যক্রমে গতিশীলতা আনা হয়েছে। গত দুই বছরে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কমিশনের ১৪৫ জন কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। কমিশনের মহাপরিচালক, পরিচালকসহ চারজন কর্মচারী মৃত্যুবরণ করেছেন।

দুর্নীতিতে সাজার হার ৬০ শতাংশের বেশি

দুদক জানায়, ২০২০ সালে নিম্ন আদালতে দুদক ও বিলুপ্ত ব্যুরোর মোট বিচারাধীন ৩ হাজার ৩৮২টি মামলার মধ্যে ১৭৬টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। যার মধ্যে কমিশনের পক্ষে রায় হয়েছে ১২১টিতে। কমিশনের মামলায় সাজার হার ৭২ শতাংশ এবং বিলুপ্ত ব্যুরোর মামলায় সাজার হার ৪৮ শতাংশ। অর্থাৎ, গড়ে সাজার হার শতকরা ৬৮.৭৫ শতাংশ।

আবার ২০২১ সালে মোট ৩ হাজার ৪৩৪টি মামলার মধ্যে ২০৩টির নিষ্পত্তি হয়েছে। যার মধ্যে কমিশনের পক্ষে রায় হয়েছে ১১৯টিতে। কমিশনের মামলায় সাজার হার ৬০ শতাংশ এবং বিলুপ্ত ব্যুরোর মামলায় সাজার হার ৩০ শতাংশ। অর্থাৎ, গড়ে সাজার হার শতকরা ৫৮.৬২ শতাংশ।

দুদকের সাফল্যের মধ্যে রয়েছে

কমিশনের এনফোর্সমেন্ট ইউনিট ২০১৯ সাল থেকে সাংগঠনিক কাঠামোতে যুক্ত হয়ে কাজ করছে। কোভিড-২০১৯ এর কারণে পূর্ববর্তী বছরগুলোর তুলনায় অভিযান পরিচালনা কম হলেও এ ইউনিটের মাধ্যমে ২০২০ সালে ৪৮৭টি এবং ২০২১ সালে ২৪৫টি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।

২০১৮ সাল থেকে গোয়েন্দা ইউনিট কমিশনের সাংগঠনিক কাঠামোতে যুক্ত হয়েছে। ২০২১ সালের শেষ পর্যন্ত মোট ৬৬৫টি অভিযোগ গোপনে তথ্যানুসন্ধানের জন্য গৃহীত হয়, যার মধ্যে ২৫০টির নিষ্পত্তি হয়েছে এবং ৪১৫টি অভিযোগের গোপন তথ্যানুসন্ধান চলমান রয়েছে। তথ্যানুসন্ধানের পর গোয়েন্দা প্রতিবেদনের সুপারিশের ভিত্তিতে কমিশন চেয়ারম্যানের অনুমোদনক্রমে ১৫৪টি অভিযোগ প্রকাশ্য অনুসন্ধানের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে।

কমিশনের দৈনিক ও সাম্প্রতিক সেল (যাচাই-বাছাই কমিটি) ২০২০ সালে ১৮ হাজার ৪৮৯টি অভিযোগ বাছাই করে ৮২২টি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করেছে এবং ২ হাজার ৪৬৯টি অভিযোগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিভিন্ন দপ্তরে প্রেরণ করেছে। ২০২১ সালে ১৪ হাজার ৭৮৯টি অভিযোগ হতে ৫৩৩টি অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ এবং ২ হাজার ৮৮৯টি অভিযোগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিভিন্ন দপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে।

কমিশনের কর্মকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এমনকি কঠোর লকডাউনকালেও অনলাইনে পিপিএ ও পিপিআর-এর ওপর ৭৯ জন প্রশিক্ষণার্থীর ১৫ দিনের সিপিটিইউ-এর ফ্ল্যাগশিপ প্রশিক্ষণসহ আমেরিকার জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট আয়োজিত বিট কয়েন, ক্রিপ্টো কারেন্সি, ই-মেইল,হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াতে সংঘটিত অপরাধের বিষয়ে অনলাইনে প্রশিক্ষণ হয়েছে। এছাড়া অফিস ব্যবস্থাপনা, সুশাসন, শুদ্ধাচারসহ নানা বিষয়ে ৮ শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। 

কমিশনের অনুসন্ধান ও তদন্ত কার্যক্রমে তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহারের লক্ষ্যে ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব স্থাপন করে কর্মকর্তাদের দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

কমিশনের বিদ্যমান জনবল কাঠামো যৌক্তিক করার জন্য কমিশনের মহাপরিচালক (মানিলন্ডারিং)-এর নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন  করা হয়েছে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের আইন ও বিধিমালা যুগোপযোগী করে পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের জন্য কমিশনের সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে শুরু করে তদন্ত ও মামলা পরিচালনা সংক্রান্ত কাজ যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ ও পরিবীক্ষণের জন্য একটি ওয়েবভিত্তিক আইপিএমএস সফটওয়্যার তৈরি এবং আনুষঙ্গিক হার্ডওয়্যারসহ একটি সার্ভার কক্ষ স্থাপন কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে।

আরএম/এইচকে