করোনাকালে সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে আত্মত্যাগের স্বীকৃতি স্বরূপ পুলিশ সদস্যরা পাচ্ছেন ‘করোনা ইনসিগনিয়া’ ব্যাজ। কয়েক মাস আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পুলিশের ইউনিফর্মে এই ব্যাজ পরার অনুমতি দেয়।

পিতলের তৈরি এ ব্যাজের লট চীন থেকে সম্প্রতি দেশে এসেছে। চলতি সপ্তাহ থেকে ধাপে ধাপে পুলিশ সদস্যদের নতুন এ ব্যাজ পাওয়ার কথা রয়েছে। ব্যাজটি পেতে তাদের খরচ করতে হচ্ছে ১৩০ টাকা করে।

জানা গেছে, চলতি সপ্তাহের মধ্যে পুলিশের ইউনিটগুলোকে সদরদপ্তর থেকে এ ব্যাজ সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। ইউনিট পুলিশ সদস্যদের নাম অনুযায়ী স্ব স্ব কর্মস্থলে এ ব্যাজ পৌঁছে দিচ্ছে। এরইমধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সদস্যসহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যরা এ ব্যাজ বুকে পরা শুরু করেছেন।

সোমবার ডিএমপির উপ-পুলিশ পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা ব্যাজ পরার বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে তিনি এ ব্যাজ পেয়েছেন। তিনি ইউনিফর্মে এটি পরা শুরু করেছেন।

পুলিশ সদরদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত ডিসেম্বর-জানুয়ারির দিকে করোনাকালে সর্বোচ্চ স্বীকৃতি হিসেবে এ ব্যাজ পরার অনুমতি চেয়ে পুলিশ সদরদপ্তর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানানো হয়। আবেদনে বলা হয়, করোনাকালে যখন স্বজনরা পরিবারের সদস্যের মরদেহ দাফন না করে ফেলে রেখে যান, তখন পুলিশ সদস্যরা এগিয়ে আসেন। নিজ দায়িত্বে স্ব স্ব ধর্মের নিয়ম অনুযায়ী দাফন বা সৎকার করেন তারা।

সম্প্রতি আরএমপির পুলিশ কমিশনার কর্মকর্তাদের করোনা ইনসিগনিয়া ব্যাজ পরিয়ে দেন

এছাড়া চিকিৎসা সহায়তা, লকডাউনে নিয়ম মানতে বাধ্য করা এবং কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করাসহ পুলিশের নানা কার্যক্রম আবেদনে তুলে ধরা হয়। আবেদনে আরও বলা হয়, এসব কাজের স্বীকৃতি হিসেবে একটি বিশেষ ব্যাজ পরার অনুমতি দিলে পুলিশ সদস্যদের কর্মস্পৃহা বাড়বে এবং তারা উজ্জীবিত হবেন। পুলিশ সদরদপ্তরের এ দাবি যৌক্তিক মনে করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এতে অনুমোদন দেয়।

পুলিশ সদর দপ্তরের লজিস্টিকস বিভাগ সূত্রে জানা যায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতির পর ব্যাজ তৈরির জন্য চীনের একটি কোম্পানির সঙ্গে এ সংক্রান্ত চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী কোম্পানিটি মাসখানেক আগে পিতলের তৈরি ‘করোনা ইনসিগনিয়া’ ব্যাজের কয়েকটি নমুনা সংশ্লিষ্টদের দেখায়। এসব নমুনার মধ্যে একটি ঠিক করে পুলিশের প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার সদস্যের জন্য ব্যাজের অর্ডার দেওয়া হয় কোম্পানিটিকে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি এ ব্যাজের বড় একটি লট চীন থেকে দেশে এসেছে। এরপরেই বিতরণ শুরু হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসপি পদমর্যাদার এক পুলিশ কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রায় তিন মাস আগে অনুমতি দেওয়া হলেও তখন ব্যাজ ছিল না। সম্প্রতি চীন থেকে পিতলের তৈরি এ ব্যাজের বিশাল লট পুলিশ সদরদপ্তরে এসেছে। সেখান থেকে পুলিশ সদস্যদের নাম অনুযায়ী বিভিন্ন ইউনিটে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এটি তৈরি করতে ১১০-১৩০ টাকা খরচ হয়ে থাকতে পারে।

করোনা পরিস্থিতিতে সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে কাজ করেছে পুলিশ

যা থাকছে পুলিশের নতুন ব্যাজে

পুলিশ সদরদপ্তর সূত্রে জানা যায়, পিতলের তৈরি এ ব্যাজের আকৃতি করোনাভাইরাসের মতো। ব্যাজের মাঝখানে বসানো রয়েছে মুষ্টিবদ্ধ হাতে বাঁটসহ একটি ছুরি। ব্যাজে বাঁটসহ ছুরি দিয়ে ভাইরাসটিকে বিদ্ধ করা হয়েছে, যা করোনাকালে পুলিশ সদস্যদের অদম্য ও কার্যকরী মোকাবিলার প্রতীক। আর মুষ্টিবদ্ধ হাত দিয়ে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় সম্মুখযোদ্ধাদের দৃঢ় প্রত্যয়ের বিষয়টিকে বোঝানো হয়েছে।

‘করোনা ইনসিগনিয়া’ ব্যাজের বিষয়ে পুলিশ সদরদপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মো কামরুজ্জামান বলেন, দুই থেকে আড়াই মাস আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করোনার ব্যাজ পরার বিষয়টিতে অনুমতি দিয়েছেন। অনেক পুলিশ সদস্য এ ব্যাজ পরছেন। করোনার সময় ফ্রন্টলাইনার হিসেবে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা। ফ্রন্টলাইনার হিসেবে কাজ করে এ পর্যন্ত প্রায় ২৮ হাজার পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গেছেন ১০৭ জন। এ আত্মত্যাগ ও প্রাণ উৎসর্গ করাকে শ্রদ্ধা জানানো এবং এই ‘স্পিরিট’ বজায় রাখার জন্যই এ ব্যাজ।

এমএসি/এআর/