র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে চিঠি : জবাবে যা বলল ইইউ
আর্থসামাজিক ব্যাপক উন্নয়ন সত্ত্বেও বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি উদ্বেগ বাড়াচ্ছে বলে মনে করছেন ইউরোপীয় কমিশনের হাই রিপ্রেজেন্টিটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট জোসেফ বোরেল ফনটেলস। এ বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বলে নিশ্চিত করেন তিনি।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য ইভান স্টেফানেকের চিঠির জবাবে এসব কথা বলেন জোসেফ বোরেল।
বিজ্ঞাপন
প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে এবং ঘন বসতিপূর্ণ একটি দেশ হয়েও বাংলাদেশ দারিদ্র্য দূরীকরণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে সফলতা অর্জন করেছে তার প্রশংসা করেন। ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতায় অবদান রাখার জন্যও বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য ইভান স্টেফানেক গত ২০ জানুয়ারি র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট বোরেল বরাবর একটি চিঠি দেন। ৫৭ দিন পর গত ১৮ মার্চ ওই চিঠির জবাব দেন জোসেফ বোরেল। বোরেলের ওই চিঠির একটি কপি ঢাকা পোস্টের হাতে এসেছে।
চিঠির শুরুতে বোরেল ইভানকে ধন্যবাদ জানান বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে তার উদ্বেগের জন্য।
বিজ্ঞাপন
এরপর তিনি প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে এবং ঘন বসতিপূর্ণ একটি দেশ হয়েও বাংলাদেশ দারিদ্র্য দূরীকরণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে সফলতা অর্জন করেছে তার প্রশংসা করেন। ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতায় অবদান রাখার জন্যও বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি।
তবে আর্থসামাজিক উন্নয়ন সত্ত্বেও বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি যে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে সেটি চিঠিতৈ উল্লেখ করেন বোরেল। তিনি বলেন, বিশেষ করে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সংকোচনের বিষয়টি প্রতিনিয়ত উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। জাতিসংঘের কমিটি এগেইনস্ট টর্চার (সিএটি) ও জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারসহ স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতন ও নিষ্ঠুরতার বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আসছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুম বড় রকমের উদ্বেগের বিষয় হয়ে রয়েছে। এক্ষেত্রে তদন্তের পাশাপাশি দায়ীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা প্রয়োজন। এছাড়া ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নাগরিকদের মত প্রকাশে বাধা দিচ্ছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার এ আইনের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নিশ্চিত করার যে ইঙ্গিত দিয়েছে তাকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন স্বাগত জানায়।
চিঠিতে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করে বোরেল লিখেছেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগসহ সব বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ও আলোচনা করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এসব বিষয়ে সামনের বিভিন্ন ফোরামেও আলোচনা অব্যাহত রাখা হবে বলে জানান তিনি।
বিশেষ করে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সংকোচনের বিষয়টি প্রতিনিয়ত উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। জাতিসংঘের কমিটি এগেইনস্ট টর্চার (সিএটি) ও জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারসহ স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতন ও নিষ্ঠুরতার বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আসছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুম বড় রকমের উদ্বেগের বিষয় হয়ে রয়েছে। এক্ষেত্রে তদন্তের পাশাপাশি দায়ীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা প্রয়োজন।
চিঠিতে ইইউর সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নানা দিক তুলে ধরেন বোরেল। তিনি বলেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সব দিকের পাশাপাশি মানবাধিকার বিষয়ে আমাদের এজেন্ডা নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আমাদের ধারাবাহিক সংলাপ হচ্ছে। আসন্ন ইইউ-বাংলাদেশ জয়েন্ট কমিশন এবং সাব গ্রুপ অন গুড গভর্ন্যান্স অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস-এ এসব বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
বোরেলকে পাঠানো চিঠিতে স্টেফানেক যা লিখেছিলেন
বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিশেষ করে, পুলিশ ও র্যাবের দ্বারা ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত এক হাজার ১৩৪টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এসব তথ্যের ভিত্তিতে আমি আপনাকে র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য আপনার ক্ষমতা ব্যবহারের অনুরোধ করছি।
২০ জানুয়ারি পাঠানো চিঠিতে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য ইভান স্টেফানেক লেখেন, বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির জন্য আমি আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দলের অমানবিক আচরণ প্রকাশিত হয়েছে। নির্বাচনের ফলাফল পরিবর্তন ও রাজনৈতিক ভিন্নমত দমন এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এই পরিস্থিতি বর্তমানে খুবই মারাত্মক। কারণ মার্কিন সরকার বর্তমান পুলিশের আইজিপি, যিনি আগে র্যাবের প্রধান ছিলেন, তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বিশেষত টেকনাফের কাউন্সিলর একরামুল হককে ২০১৮ সালের মে মাসে হত্যা করার জন্য এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
ম্যাগনিটাইনেজ গ্লোবাল প্রোগ্রামের আওতায় বাংলাদেশের আরও পাঁচ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা ও যুক্তরাষ্ট্রের অনেক সিনেট সদস্য বছরের পর বছর ধরে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা বলছিলেন।
দ্য ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস বলছে, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিশেষ করে, পুলিশ ও র্যাবের দ্বারা ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত এক হাজার ১৩৪টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এসব তথ্যের ভিত্তিতে আমি আপনাকে র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য আপনার ক্ষমতা ব্যবহারের অনুরোধ করছি।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে পৃথকভাবে এ নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট (রাজস্ব বিভাগ) ও পররাষ্ট্র দপ্তর।
এনআই/এসএসএইচ/জেএস