যানজটের সঙ্গে ঢাকা শহরের মানুষ নিজেকে মানিয়ে নিলেও গেল কয়েকদিনের পরিস্থিতি স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে খারাপ। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রতিটি সড়কেই লেগে থাকছে যানজট।

এরমধ্যে আজ দুপুর ১২টা থেকে তিন দফা দাবি আদায়ে নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। ফলে সায়েন্সল্যাব, নিউমার্কেট, নীলক্ষেত মোড়, আজিমপুরসহ আশপাশের এলাকায় সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

কথায় কথায় নীলক্ষেত অবরোধ করা কোনো সমাধান হতে পারে না। এটা রাজধানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। প্রতি মিনিটে অসংখ্য মানুষ যাতায়াত করে এ সড়ক দিয়ে। এই অবরোধের ফলে তারা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।

এই অবরোধের কারণে ওই সড়কে আটকে পড়াদের চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়েছে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়াতেও দেখা গেছে সাধারণ মানুষকে। অপেক্ষা করেও শেষ পর্যন্ত গাড়ির চাকা না চলায় হেঁটেই গন্তব্যে রওয়ানা হতে হয়েছে তাদের। 

সাধারণ মানুষ বলছেন, কথায় কথায় নীলক্ষেত অবরোধ করা কোনো সমাধান হতে পারে না। এটা রাজধানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। প্রতি মিনিটে অসংখ্য মানুষ যাতায়াত করে এ সড়ক দিয়ে। এই অবরোধের ফলে তারা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। অন্যদিকে রিকশা চালকরাও ভাড়া চাইছেন অন্যদিনের তুলনায় অনেক বেশি।

আন্দোলনের ফলে আটকে থাকা মোটরসাইকেল নিয়ে ইউটার্ন নিতে গেলে বিপত্তিতে পড়েন এক চালক।

 

মৌমিতা পরিবহনের বাসের চালক চাঁন মিয়া বলেন, চার ঘণ্টা ধরে বসে আছি। কখন ছাড়বে বলতে পারছি না। এভাবে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা কতটা কষ্টের তা বোঝানো যাবে না।

আসাদ হোসেন নামে এক পথচারী বলেন, অসুস্থ এবং বৃদ্ধরা বেশি সমস্যায় পড়েছেন। অনেকেই দূর-দূরান্ত থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরছিলেন। দুই ঘণ্টারও বেশি সময় এই গাড়িগুলো রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। গরম, রোদে অসহনীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

আটকে থাকা মৌমিতা পরিবহনের বাসের চালক চাঁন মিয়া বলেন, চার ঘণ্টা ধরে বসে আছি। কখন ছাড়বে বলতে পারছি না। এভাবে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা কতটা কষ্টের তা বোঝানো যাবে না। সারাদিনই যদি এক জায়গায় বসে থাকতে হয় তবে মালিকের জমার টাকা তুলব কীভাবে?

পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে শুরুতেই ডাইভারশন দেওয়া হয়েছে বলে জানান নিউমার্কেট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সাহেব আলী। তিনি বলেন, সায়েন্স ল্যাবরেটরি এবং আজিমপুরের পলাশী মোড় থেকে ডাইভারশন দেওয়া হয়েছে। তবে গাড়ির চাপ বেশি থাকায় ডাইভারশনে কাজ হচ্ছে না। আশপাশের সংযোগ সড়ক ও মহাসড়কগুলোতে এর প্রভাব পড়েছে। নিউমার্কেট থানা পুলিশ ও লালবাগ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে আছে। 

যে তিন দফা দাবিতে সড়ক অবরোধ 
• করোনা সংক্রমনের কারণে ২০১৭-১৮, ১৮-১৯, ১৯-২০ সেশনের সকল বিভাগের অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের প্রমোশোন দিয়ে পরবর্তী বর্ষে পরীক্ষা সুযোগ দিতে হবে।

• দর্শন বিভাগের প্রশ্নের মানবণ্টন পরিবর্তন করতে হবে।

• গণহারে ফেল করার কারণ ও প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে এবং এর স্থায়ী সমাধান করতে হবে।

এ বছর করোনার অজুহাতে ৮০ নম্বরের পরীক্ষা ৪ ঘণ্টা না হয়ে ২ ঘণ্টায় অনুষ্ঠিত হয়। এ কারণে শিক্ষার্থীরা বরাদ্দ সময়ের সাথে নম্বরের সমন্বয় করে পরীক্ষা দিতে পারেনি। তাই অধিকাংশ শিক্ষার্থীই অকৃতকার্য হয়েছে।
অবরোধের কারণ ওই সড়কে আটকে পড়াদের চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়েছে

যা বলছেন শিক্ষার্থীরা 
সরকারি বাঙলা কলেজের শিক্ষার্থী ইমরান হোসেন বলেন, করোনার আগে সাত কলেজের অনার্সের পরীক্ষা হতো ৮০ নম্বরের এবং সময় বরাদ্দ ছিল ৪ ঘণ্টা। কিন্তু এ বছর করোনার অজুহাতে ৮০ নম্বরের পরীক্ষা ৪ ঘণ্টা না হয়ে ২ ঘণ্টায় অনুষ্ঠিত হয়। এ কারণে শিক্ষার্থীরা বরাদ্দ সময়ের সাথে নম্বরের সমন্বয় করে পরীক্ষা দিতে পারেনি। তাই অধিকাংশ শিক্ষার্থীই অকৃতকার্য হয়েছে।

ইকবাল নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, করোনাকালে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে পরীক্ষা নিয়েছে। প্রশ্নের সাথে সময়েরও সমন্বয় করা হয়। সেক্ষেত্রে আমরা এটাকে এক ধরনের বৈষম্য বলতে পারি। করোনার কারণে আমরা এক বর্ষে ২ বছর অতিক্রম করে ফেলেছি। যেখানে ৪ বছরে অনার্স শেষ হওয়ার কথা ছিল। এখন নতুন পরীক্ষা পদ্ধতির কারণে যদি শিক্ষার্থীদের আরও ১টি বছর চলে যায়, তবে আমরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হব।

আন্দোলনের সমন্বয়ক বাংলা কলেজের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাগর নেওয়াজ বলেন, দাবি না মেনে নেওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। প্রয়োজনে এখানেই আমরণ অনশন করব। তবু আমাদের দাবি মেনে নিতে হবে।

আরএইচটি/এনএফ/জেএস