মিশরীয় উড়োজাহাজ লিজ নেওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মাধ্যমে তদন্ত চেয়েছে সংসদীয় কমিটি। বৃহস্পতিবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির কার্যবিবরণী থেকে এ তথ্য জানা গেছে। বৃহস্পতিবারের বৈঠকে এ কার্যবিবরণীর অনুমোদন দেওয়া হয়।

আগের বৈঠকে সংসদীয় সাব কমিটির প্রতিবেদনের প্রেক্ষাপটে মন্ত্রণালয়ের তৈরি করা সারসংক্ষেপ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। মন্ত্রণালয়ের সারসংক্ষেপে কমিটির সদস্যরা সন্তুষ্ট না হয়ে অধিকতর তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠানোর সুপারিশ করেন। তবে, বৃহস্পতিবারের বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ বিষয়ক কোনো অগ্রগতি সম্পর্কে জানানো হয়নি। 

দশম সংসদের বিমান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি দুটি মিশরীয় বিমান লিজ নেওয়া নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল।  সেসময় লিজে অনিয়মের অভিযোগ তুলে তা তদন্তে কমিটি একটি সাব কমিটিও গঠন করেছিল। চলতি একাদশ সংসদের কমিটিও নতুন করে একটি সাব কমিটি গঠন করেছে। সাব কমিটি বেশ কিছু অনিয়ম পেয়ে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়ের কাছে সুপারিশ করে। পাশাপাশি কমিটি জড়িতদের ডেকে ব্যাখ্যা নিয়েছে।

আগের বৈঠকে কমিটির সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, মিশরীয় এয়ারক্র্যাফট লিজ প্রক্রিয়ার দুর্নীতি সম্পর্কিত সাব কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে মন্ত্রণালয় যে সারসংক্ষেপ তৈরি করেছে তা অসমাপ্ত ও পূর্ণাঙ্গ নয়। তিনি ব্যারিস্টার তনজীবুল আলমকে প্রথমে আইনের আওতায় আনা উচিত বলে মন্তব্য করেন। এছাড়া তিনি লিজ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠানোর সুপারিশ করেন।

কমিটির সদস্য তানভীর ইমাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তদন্তের পর সাব কমিটি যেসব সুপারিশ করেছে, সেগুলোকে মন্ত্রণালয়ের সারসংক্ষেপে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। তিনি সুপারিশসমূহ তদন্ত করে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দুদকে পাঠানোর প্রস্তাব করেন।

আরেক সদস্য সৈয়দা রুবিনা আক্তার বলেন, দীর্ঘ দেড় বছর ধরে তদন্ত করে সাব কমিটি প্রতিবেদন দিল কিন্তু এর ওপর মন্ত্রণালয় যে সারসংক্ষেপ প্রস্তুত করেছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি সাব কমিটির সুপারিশ মন্ত্রণালয়ের পরিবর্তে পিবিআই বা দুদককে দিয়ে অধিকতর তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেন। কমিটির সদস্য কানিজ ফাতেমাও দ্রততার সঙ্গে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করেন।

পরে বৈঠকে দুটি মিশরীয় এয়ারক্র্যাফট লিজ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগে গঠিত সংসদীয় সাব কমিটির প্রতিবেদন বিশেষ করে চুক্তিপত্র প্রণয়ন এবং যান্ত্রিক পরীক্ষা-নিরীক্ষাকরণ টিমের কার্যক্রম ত্রুটিপূর্ণ থাকায় স্থায়ী কমিটির সুপারিশসহ এসব বিষয়ে  অধিকতর তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠানোর সুপারিশ করা হয়।

২০১৪ সালে পাঁচ বছরের চুক্তিতে ইজিপ্ট এয়ার থেকে বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর উড়োজাহাজ দুটি লিজ নিয়েছিল বিমান। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফ্লাইট পরিচালনার পর একটির ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। উড়োজাহাজটি সচল রাখতে ইজিপ্ট এয়ার থেকেই ভাড়ায় আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন। দেড় বছরের মাথায় নষ্ট হয় বাকি ইঞ্জিনটিও। উড়োজাহাজটি সচল রাখতে ইজিপ্ট এয়ার থেকে আবারও ভাড়ায় আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন। পরে ভাড়ায় আনা ইঞ্জিনও নষ্ট হয়ে যায়। 

সেই ইঞ্জিন মেরামত করতে যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়। তবে কোনো সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়নি। সে কারণে ইজিপ্ট এয়ার  ও মেরামতকারী কোম্পানি – উভয়কেই অর্থ দিতে হয়েছে বিমানকে। দুটি বোয়িং ৭৭৭-২০০ উড়োজাহাজের পেছনে পাঁচ বছরে বাংলাদেশ বিমানের ক্ষতি হয়েছে ১১শ কোটি টাকা। দুটি উড়োজাহাজের জন্য প্রতিমাসে বিমান ১১ কোটি টাকা করে ভর্তুকি দিয়ে আসছিল। সেই দায় থেকে ২০২০ সালের মার্চ মাসে মুক্ত হয় বিমান।

কমিটির সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটি সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, কাজী ফিরোজ রশীদ ও তানভীর ইমাম অংশ নেন।

এদিকে সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কমিটি বিমান বন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ সুসংবদ্ধভাবে ব্যবহারের লক্ষ্যে বিদ্যমান নীতিমালা পরিমার্জনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে। কমিটি হোটেল সোনারগাঁও ও হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালকে যথাযথভাবে পরিচালনার স্বার্থে নির্বাহী কমিটি গঠনসহ প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ করার সুপারিশ করে।

এইউএ/আরএইচ