স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের পর স্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে আমাদের কণ্ঠকে স্তব্ধ করার প্রক্রিয়া চলছিল। আজ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে। নতুন প্রজন্ম মন খুলে আঁকতে পারছে, মনের ভাষা প্রকাশ করছে। 

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে আলোচনা সভা, প্রকাশিতব্য স্মারকগ্রন্থ ‘অনশ্বর পিতা’র মোড়ক উন্মোচন এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস ২০২২ উপলক্ষে শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত ‘রঙ তুলিতে আঁকি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ’ শীর্ষক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন মন্ত্রী।

শনিবার বিকেলে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি (স্পেশাল ব্রাঞ্চ) পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মনিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, খুব কাছ থেকে আমি বঙ্গবন্ধুকে দেখেছি। তখন আমি ডিগ্রি ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র। আমি উদগ্রীব থাকতাম কখন তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেবেন।

মন্ত্রী বলেন, তিনি (বঙ্গবন্ধু) সবসময় প্রস্তুত থাকতেন। বারবার জেলেও গেছেন। দিনক্ষণ হিসাব করে কারা কর্তৃপক্ষ পরে জানায় বঙ্গবন্ধু ৩ হাজার ৫৩ দিন জেলেই কাটিয়েছেন। কারাগারে বসেই তিনি অনেক ইতিহাস লিখে গিয়েছেন। আবার জেল থেকে বাইরে বের হলেই প্রান্ত থেকে প্রান্তরে ঘুরে বেড়িয়েছেন। কারাগারের রোজনামচা লিখে গেছেন। সিক্রেট ডকুমেন্টসে তারই প্রমাণ পাচ্ছি। এসবিতে রক্ষিত ছিল সে সিক্রেট ডকুমেন্ট।

ভাষা আন্দোলনের শুরুতেই পাকিস্তানের জাতির পিতা কায়েদে আজমের মুখের ওপর ভাষার প্রশ্নে বঙ্গবন্ধু প্রতিবাদ করেছিলেন  জানিয়ে তিনি বলেন, ১৯৪৮ সালে কায়েদে আজম যখন ঘোষণা করেন, উর্দুই হবে রাষ্ট্রভাষা, তখন তার মুখের ওপর বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, নো নো, বাংলা হবে রাষ্ট্রভাষা। জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার দৃশ্য তিনি মানতে পারেননি। তখন থেকেই তার শুরু জেলে যাওয়া-আসা। বঙ্গবন্ধু সত্যকে উপলব্ধি করতেন। আমাদের স্বাধীন হতেই হবে৷ পাকিস্তান নামক দেশ হবার পর থেকেই সেটি তিনি লালন করা শুরু করেন। কারণ এক শোষক থেকে আরেক শোষকের হাতে আমরা পড়ে গিয়েছিলাম।

তিনি আরও বলেন, মার্চের ৩ তারিখে আমরা পতাকা উড়িয়ে জানিয়েছিলাম আমরা স্বাধীন দেশ চাই। নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের পরও বঙ্গবন্ধুকে ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছিল না। তিনি ছাত্রনেতাদের বলতেন, তোমরা তৈরি থাকো, যুদ্ধ ছাড়া আমাদের গতি নেই। বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন। তবে তিনি আলোচনার পথ তিনি বন্ধ রাখেননি। অপেক্ষা করলেন। ২৪ মার্চ পর্যন্ত অপেক্ষা করেছেন। তিনি বলেছেন, রক্তের ওপর পা দিয়ে সিদ্ধান্ত বদলাতে পারবো না। ২৫ মার্চ পর্যন্ত কিছু হচ্ছিল না। আলোচকরা চলে যাচ্ছিল। ওই রাতেই অপারেশন সার্চলাইট শুরু হলো সবকিছু তছনছ করে দেওয়ার পরিকল্পনা থেকে।

আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, মৃত্যু অবধারিত জেনেও সম্মুখযুদ্ধ করে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল বীর বাঙালি৷ এ দুঃসাহস আমরা পেয়েছিলাম বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে। যে শক্তিতে আমরা বলীয়ান। রাজারবাগের পুলিশও সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। শুধু রাজারবাগ নয়, সারাদেশই সহযোগিতা করেছিল। তখন থেকে শুরু লড়াই, মুক্তিযুদ্ধ। সে লড়াইয়ে আমরা ৯ মাসে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিলাম। বঙ্গবন্ধুকে আজ ভালবাসায় স্মরণ করি, স্মরণ করি বঙ্গমাতাকে।  

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ, অতিরিক্ত  আইজিপি(প্রশাসন) ড. মইনুর রহমান, ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম, র‌্যাব মহাপরিচালক(ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, ডিএমপি'র অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) কৃঞ্চ পদ রায়।

জেইউ/আরএইচ