দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন

ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল হকের ১৬৪ ধারায় আদালতে দেওয়া বক্তব্যের সূত্র ধরেই বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী ও নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) দুদকের প্রধান কার্যালয়ে অর্থ লোপাটের ঘটনায় ওই দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের পর দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

দুদক সচিব বলেন, পিকে হালদারের অর্থ আত্মসাৎ সংক্রান্ত মামলায় ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল হককে গত বছর রিমান্ডে নেয় দুদক। রিমান্ড শেষে তিনি বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারা জবানবন্দি দিয়েছেন। সেখানে নিজের দোষ স্বীকার করে দুজনের নাম বলেছেন যারা লিজিং লুটের নেপথ্যে ছিলেন। তাদের একজন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম ও ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী।

দুদক সচিব বলেন, রাশেদুল হকের জবানবন্দিতে নাম আসায় দুদক ওই দুজনকে আজ তলব করে। তাদের বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে। পরবর্তীতে তাদের বক্তব্যের সঙ্গে তথ্য উপাত্ত মিলিয়ে দেখে আইনগতভাবে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তাদের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করবেন কি-না জানতে চাইলে দুদক সচিব বলেন, ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে যাদের নাম আসবে তাদের প্রত্যেকের বক্তব্য তদন্তকারী কর্মকর্তা রেকর্ড করবেন।

পিকে হালদার সংশ্লিষ্টদের তথ্য দিতে গিয়ে দুদক সচিব বলেন, ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের অর্থ আত্মসাতে ২২টি ও এফএএস ফাইন্যান্সের অর্থ আত্মসাতে ১২টি সর্বমোট ৩৪টি মামলা হয়েছে। বিভিন্ন পর্যায়ের মোট ১২ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া ১০ আসামি আদালতে নিজের দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।

সম্পদ ক্রোকের বিষয়ে মাহবুব হোসেন বলেন, এক হাজার কোটি টাকা সমমূল্যের সম্পদ ফ্রিজ ও ক্রোক করা হয়েছে। ৬৪ ব্যক্তি যেন বিদেশ যেতে না পারেন ইমিগ্রেশনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। ৩৩ জনের অবৈধ সম্পদের নোটিশ জারি করে যাচাই চলমান রয়েছে।

লিজিং কোম্পানিগুলোর অনেক অনিয়মের খবর সংবাদে আসে, শোনা যায় প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে পিকে হালদার সংশ্লিষ্টরা। দুদক এসব বিষয়ে কিছু করবে কি-না জানতে চাইলে দুদক সচিব বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান হোক বা যেকোনো প্রতিষ্ঠানই হোক আইন বহির্ভূত কোনো কিছু করলে দুদক ব্যবস্থা নেবে।

এর আগে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী ও নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমকে সকাল ১০টা থেকে দুপুর সোয়া ২টা পর্যন্ত চার ঘণ্টাব্যাপী জিজ্ঞাসাবাদ করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান।

জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তারা সাংবাদিকদের এড়িয়ে যান। কোনো প্রশ্নেরই জবাব দেননি দুজনের কেউই। এর মধ্যে এস কে সুর চৌধুরী শুধু একটি কথাই বলেছেন। তা হলো- ‘আমার যা বলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে বলেছি’।

আদালতে দেওয়া রাশেদুল হকের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির বিষয়ে দুদক সূত্রে জানা যায়, রিলায়েন্স ফাইন্যান্স ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলোচিত প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের নির্দেশেই প্রতিষ্ঠানটিতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স থেকে অর্থ লোপাটের তথ্য ধামাচাপা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক এক ডেপুটি গভর্নরকে মাসিক দুই লাখ টাকা করে মাসোহারা দিতেন। জবানবন্দিতে সবচেয়ে বেশি উঠে এসেছে সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার সুর (এস কে) চৌধুরীর নাম। বাংলাদেশ ব্যাংকের অডিট টিমকে ম্যানেজ করতে লাখ লাখ টাকা ঢেলেছেন পি কে হালদার এমনটা দাবি করেছেন জবানবন্দিতে।

আরএম/ওএফ