ভোটার তালিকায় যুক্ত হওয়ার মাধ্যমেই একজন নাগরিক জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডি পান। বর্তমানে এনআইডি ছাড়া দেশের কোনো নাগরিকই সরকারি-বেসরকারি সেবা পান না। তবে ভুল হওয়া এনআইডি নিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে। তাই এনআইডি করার ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। 

ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, যেসব নাগরিক নতুন করে ভোটার তালিকায় যুক্ত হবেন, তারা অবশ্যই ফরম-২ শিক্ষাগত সনদ, জন্মনিবন্ধনের সঙ্গে মিল রেখে পূরণ করবেন। তাহলে সঠিক ও নির্ভুল এনআইডি পাওয়া সম্ভব হবে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভোটার তালিকা হালনাগাদ কর্মসূচি-২০২২ সুষ্ঠু ও সুচারুরূপে সম্পন্নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় করণীয়র বিষয়ে সম্প্রতি পরিপত্র জারি করেছে।

গত সোমবার (২৮ মার্চ) নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সহকারী সচিব মো. মোশাররফ হোসেন স্বাক্ষরিত পরিপত্রে বলা হয়, ভোটার তালিকা হালনাগাদ কর্মসূচি-২০২২ এ বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারযোগ্য ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহ ও সুপারভাইজার কর্তৃক যাচাই কার্যক্রম ২০ মে থেকে পরবর্তী তিন সপ্তাহ ভোটারের বাড়ি বাড়ি গিয়ে চলমান রাখার বিষয়ে কমিশন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। ২০০৭ সালে ১ জানুয়ারি অথবা তার পূর্বে যাদের জন্ম তাদের এবং বিগত ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে যারা বাদ পড়েছেন তাদের নিবন্ধনের জন্য তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এছাড়া যাদের জন্ম ১ জানুয়ারি ২০০৬ সাল ও ১ জানুয়ারি ২০০৭ সালের পরে তাদের যথাক্রমে ২০২৪ ও ২০২৫ সালের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি করা হবে। একইসঙ্গে কর্মসূচিতে ভোটার তালিকা থেকে মৃত ভোটারের নাম কর্তন এবং আবাসস্থল পরিবর্তনের কারণে স্থানান্তরের বিষয়ে কার্যক্রম গৃহীত হবে।

ভোটারযোগ্য ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহ ও নিবন্ধন

ভোটার তালিকা হালনাগাদ কর্মসূচি-২০২২ এ যাদের জন্ম ২০০৫ সালের ১ জানুয়ারি বা তার আগে এবং বিগত ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে যারা বাদ পড়েছেন তারা নিবন্ধন করতে পারবেন। তথ্য সংগ্রহকারীরা ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করবেন। নিবন্ধনের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পূরণকৃত ফরম-২ এর সঙ্গে অনলাইন জন্ম সনদ অথবা এসএসসি বা সমমান পরীক্ষা পাসের সনদের ফটোকপি সংগ্রহ করতে হবে। এছাড়া অন্যান্য কাগজপত্র যেমন; নাগরিক সনদ, প্রত্যয়নপত্র/বাড়ি ভাড়া/হোল্ডিং ট্যাক্স/যেকোনো ইউটিলিটি বিল পরিশোধের রশিদের কপি জমা দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। 

নিবন্ধন কেন্দ্রেও ভোটাররা উপস্থিত হয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রদর্শনপূর্বক ভোটার হিসেবে নিবন্ধন করতে পারবেন। ভোটার নিবন্ধন ফরম-২ এর সঙ্গে জন্ম সনদ বা অন্যান্য কাগজাদি সংযুক্ত করে গেঁথে রাখতে হবে। ভোটার তালিকা আইন ২০০৯ এর ধার ৩(কক) এ নামের সংজ্ঞায় শিক্ষা সনদসমূহের পাশাপাশি জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন, ২০০৪ এর অধীন নিবন্ধিত নামকে নিবন্ধনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।

‘হিজড়া লিঙ্গ’

সরকার বাংলাদেশের হিজড়া জনগোষ্ঠীকে ‘হিজড়া লিঙ্গ’ হিসেবে চিহ্নিত করে স্বীকৃতি প্রদানের প্রেক্ষাপটে ভোটার তালিকায় নতুন অন্তর্ভুক্তি করতে পারবেন। তবে হিজড়া জনগোষ্ঠীকে ভোটার হিসেবে নিবন্ধনের ক্ষেত্রে তাদের সনাক্তকরণের জন্য সমাজসেবা অফিসের প্রত্যয়ন অথবা স্থানীয় জনপ্রতিনিধির প্রত্যয়নের ভিত্তিতে নিবন্ধন করতে হবে। এ বিষয়ে যথাযথ দৃষ্টি রাখাতে হবে যে তারা যেন ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে কোনভাবেই বঞ্চিত না হয়।

ভোটার তালিকা থেকে মৃত ব্যক্তির নাম কর্তন

ভোটার তালিকাভুক্ত ভোটারদের মধ্যে যারা ইতোমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন অথচ ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত আছেন তাদের নাম ভোটার তালিকা বিধিমালা, ২০১২-এর ২৬(৬) মোতাবেক কর্তনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তথ্য সংগ্রহকারীরা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত মৃত ভোটারের নাম কর্তনের লক্ষ্যে ফরম-১২ পূরণপূর্বক সংগ্রহ করবেন। ফরম-১২ এর সঙ্গে অবশ্যই ‘মৃত্যু সনদ’ বা ডাক্তারের সনদ বা চেয়ারম্যান/মেয়র/কাউন্সিলের প্রত্যয়নপত্র সংযুক্ত করে রাখতে হবে। এ লক্ষ্যে ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা/সিটি কর্পোরেশনের জন্ম ও মৃত্যু রেজিস্টার থেকে মৃত ভোটার সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা যেতে পারে। তবে মৃত ভোটারের তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে জীবিত ভোটারের নাম লিপিবদ্ধ না হয় সে বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

ভোটার এলাকা স্থানান্তর

এক ভোটার এলাকা থেকে অন্য ভোটার এলাকায় স্থানান্তরের লক্ষ্যে ফরম-১৩ (স্থানান্তর) পূরণপূর্বক প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদিসহ সরাসরি স্থানান্তরিত এলাকার থানা/উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে জমা প্রদানের পর যথাযথ যাচাই-বাছাই ও তদন্ত সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট ভোটারের ভোটার এলাকা স্থানান্তর করা যেতে পারে। এছাড়া, তথ্য সংগ্রহকারী বাড়ি বাড়ি গিয়েও ভোটার স্থানান্তরের তথ্য সংগ্রহ করে তা সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রেশন অফিসারের কার্যালয়ে প্রেরণ করবেন।

ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্তকরণ

ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে ভোটারযোগ্য নারীদের রেজিস্ট্রেশনের বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বিশেষ করে নারী জনপ্রতিনিধিদের (উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, সিটি/পৌরসভার এলাকার সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর এবং ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত আসনের সদস্যসহ নির্বাচিত নারী জনপ্রতিনিধিদের) সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। জনগুরুত্বপূর্ণ এ কাজে নারীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য তাদের উক্ত কমিটিতে দায়িত্ব পালনের আবশ্যকতা রয়েছে। বিশেষ করে তারা প্রচারের কাজে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন ও সহযোগিতা প্রদান করতে পারেন।

নিবন্ধন কার্যক্রম

নিবন্ধন কেন্দ্রে ভোটারের তথ্য সঠিকভাবে এন্ট্রির ক্ষেত্রে ডাটা এন্ট্রির পর তার তথ্যাদি মুদ্রণ করে আবেদনকারীর স্বাক্ষর গ্রহণ এবং স্বাক্ষরিত প্রিন্ট কপিটি নিবন্ধন ফরম ও অন্যান্য ডকুমেন্টসের সাথে স্ক্যান করে সংশ্লিষ্ট ভোটারের ডাটার সঙ্গে সংযুক্ত করে রাখতে হবে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট ভোটারের আইরিশ এবং ১০ আঙ্গুলের ছাপের বায়োমেট্রিক গ্রহণ করতে হবে।

নিবন্ধন কার্যক্রমের সমন্বয়

ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম সুষ্ঠু ও সুচারুরূপে সম্পন্ন করার জন্য আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসার, সিনিয়র জেলা/জেলা নির্বাচন অফিসার ও উপজেলা নির্বাচন অফিসারের কার্যক্রমে নিবিড় সমন্বয় থাকতে হবে। তাদের ভোটার তালিকা হালনাগাদের নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা এবং ভোটার তালিকা হালনাগাদ সংক্রান্ত বিভিন্ন পর্যায়ের সমন্বয় কমিটির কার্যক্রমে সক্রিয় সমন্বিত ভূমিকা পালন করতে হবে।

এসআর/এসকেডি