মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলায় আইনের তোয়াক্কা না করে প্রতিনিয়তই তিন ফসলি জমির মাটি কাটার মহোৎসবে মেতেছে প্রভাবশালী একটি মহল। এর ফলে ওই এলাকার কৃষি জমিসমূহ ভাঙন ও জমিতে ফসল উৎপাদন করতে না পেরে নির্বিকার হয়ে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।

অন্যদিকে, লতব্দী ইউনিয়নের উত্তর পাশে ধলেশ্বরী নদীর পাড় ঘেঁষে ১২ থেকে ১৫টি অবৈধ ইটভাটা এসব প্রভাবশালী ও তাদের ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছে। এসব অবৈধ ভাটার ধোঁয়ায় পরিবেশও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষ বিভিন্ন রোগ, শ্বাসকষ্ট, হাঁচি কাশিসহ চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এ অবস্থায় এসব প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী ও কৃষকদের পাশে দাঁড়াচ্ছে না কেউ। অসহায় হয়ে সবাই এখন প্রধানমন্ত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।

শুক্রবার (১ এপ্রিল) রাজধানীর শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের প্রধান ফটকের সামনে অবৈধভাবে ফসলি জমির মাটি কাটা ও বালু উত্তোলন এবং পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। 

মানববন্ধনের পাশাপাশি এ বিষয়ে দিনব্যাপী ফটো সাংবাদিক ফোজিত শেখ বাবুর আলোকচিত্র প্রদর্শনী “কৃষক বাঁচাও”ও প্রদর্শিত করা হয়। দুপুর ১১টা থেকে এই প্রদর্শনী চলে বিকেল ৬টা পর্যন্ত।

মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন ভুক্তভোগী এলাকা সিরাজদিখান উপজেলার লতব্দী ইউপি চেয়ারম্যান হাফেজ মো. ফজলুল হক। এছাড়াও ভুক্তভোগী সাধারণ কৃষক, জনগণ ও মুন্সিগঞ্জের ১৪টি সংগঠনের কর্মীরা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।

এই আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহম্মদ। ফ্রান্সের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান সরকার বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের কিউরেটর ও সাবেক শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান (এন আই খান) প্রধান আলোচক হিসেবে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেন।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সরকারের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তিন ফসলি জমির মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে প্রভাবশালী মহল। অন্যদিকে প্রশাসন নামকাওয়াস্তে অভিযান পরিচালনা করলেও পুরোপুরি আন্তরিকতা দেখা যায়নি। অভিযোগ রয়েছে- যারা এ অবৈধ ব্যবসা করছেন তারা প্রতিদিন টাকা দেন। অর্থের বিনিময়ে প্রশাসনের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে নেন। কোনো অভিযানের বিষয়টি আসলে এসব কর্মকর্তারা আগেই ভূমিখেকোদের জানিয়ে দেন। ফলে আগে থেকেই তারা সাবধান হয়ে যান।

বক্তারা বলেন, মুন্সিগঞ্জের বাসাইল, লতব্দী ও বালুরচরে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০০ বিঘা ফসলি জমির মাটি কেটে সমুদ্রের মতো করা হয়েছে। বর্তমানে আরও প্রায় ১০০-১৫০ বিঘা জমির মাটি কাটার মহাপরিকল্পনা চলছে।
লতব্দী ইউনিয়নের উত্তর পাশে ধলেশ্বরী নদীর পাড় ঘেঁষে ১২ থেকে ১৫টি অবৈধ ইটের ভাটা প্রভাবশালী ও তাদের ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছে। যা গ্রামের মাত্র ২০০ গজের মধ্যে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা জমির মাটি ১৫ থেকে ২০ ফুট গভীর করে কেটে নিয়ে ভাটায় সরবরাহ করছে। ফলে বিক্রমপুরের আলু বলে খ্যাত জেলার যে লক্ষ্যমাত্রা তা অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না। সরিষা, ডাল, ধানসহ কোনো শস্যই চাষ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এবং হস্তক্ষেপ কামনা করছি যাতে এই সমস্যা সমাধান হয়।

এইউএ/এসকেডি