এক কিলোমিটার যেতে সময় লাগছে ২০ মিনিট
উত্তরার রাজলক্ষ্মী থেকে বসুন্ধরায় অফিস করেন মাহমুদুল হাসান শরীফ। দূরত্ব ৬ কিলোমিটার। তবে তীব্র যানজটের কারণে দ্রুত যে যাবেন, সে সুযোগ নেই। তিনি বলেন, প্রতিদিন রাজলক্ষ্মী থেকে একইভাবে যাতায়াত করি। ১৫ মিনিটের রাস্তা এখন ২ ঘণ্টায় যাই। শরীফের দেওয়া তথ্য হিসেবে তার এক কিলোমিটার রাস্তা পার হতে সময় লাগছে ২০ মিনিট।
সকাল থেকে রাজধানী জুড়ে যানজটের চিত্র এখন প্রতিদিনেরই। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জটের তীব্রতা যেন আরও বাড়তে থাকে। দুপুর শেষে কিছুটা কমলেও তা ফের বেড়ে যায়। রমজান শুরুর পর থেকে এই যানজটের পরিমাণ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) সরেজমিন সায়েন্সল্যাব থেকে বিজয় সরণি বাস ভ্রমণ করে দেখা যায়, রাস্তায় থেকে থেমে গাড়ি এগোচ্ছে। শাহবাগ থেকে বাংলামোটর পার হতে খুব বেশি সময় না লাগলেও কারওয়ান বাজার সিগন্যালে এসে বাস থেমে যায়। প্রায় আধ ঘণ্টা একই জায়গায় ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে গাড়িগুলোর।
বিজ্ঞাপন
এদিকে যানজটের কারণে অনেকে হেঁটে সিগন্যাল পার হয়ে অন্য বাস ধরছেন। তবে সে গাড়িও যে অনেক দূর এগিয়েছে, তা নয়। কারণ কারওয়ান বাজার থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত পুরো রাস্তা যানজটে স্তব্ধ হয়ে আছে। ব্লক হয়ে গেছে কারওয়ান বাজার থেকে সাত রাস্তা যাওয়ার রাস্তাও।
যাত্রীরা বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আগে সড়কে যানবাহন কম ছিল। সম্প্রতি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সশরীর ক্লাস শুরু হয়েছে। আবার রমজান মাসকে ঘিরে যানজট বেড়েছে। তাছাড়া, রাস্তার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলমান থাকায় যানজট কমছে না।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় যানজটের শিকার হওয়া কয়েকজন ভুক্তভোগীর কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছে ঢাকা পোস্ট। পাঠকদের জন্য তথ্যগুলো তুলে ধরা হলো-
যানজটের কারণে প্রতিদিনের মতো আজও ৮টার আগে বাসা (শাহবাগ) থেকে বের হয়েছেন আল রাজি। কিন্তু বিজয় সরণি পর্যন্ত যেতেই লেগেছে প্রায় এক ঘণ্টা সময়। সময় মতো নিজের কর্মস্থল মহাখালীতে পৌঁছাতে পারেননি তিনি।
আল রাজি বলেন, রমজানের আগে অফিস যেতে খুব বেশি একটা সমস্যা হতো না। এখন সাহরি খেয়ে খুব বেশি বিশ্রামের সময় পাই না। কারণ ৮টার আগে বের না হলে সময় মতো অফিসে যেতে পারব না। ঠিক সময়ে অফিসে না যেতে পারলে বেতন থেকে টাকা কেটে রাখা হবে। জানি না এ শহর কখনো যানজটমুক্ত হবে কিনা!
সকাল সোয়া ৮টায় সায়েদাবাদ থেকে বাসে উঠেছেন রেজাউর রহমান। সোয়া ১০টায় মগবাজার রেলক্রসিং পর্যন্ত আসতে পেরেছেন। তিনি বলেন, রমজানে কি শান্তিতে একদিনও অফিসে আসতে পারবো না? ওয়াসার লাইনে পানি নাই, বাসায় গ্যাস নাই, সাথে যুক্ত হইছে উন্নয়নের যানজট। ৩০ মিনিটের অফিস যাত্রায় দুই থেকে আড়াই ঘণ্টায়ও অফিসে পৌঁছানো যায় না!
দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি জাতীয় দৈনিকে কাজ করেন ইশতিয়াক হোসেন। তিনি জানান, খিলগাঁও থেকে কারওয়ান বাজার আসতে ২০ মিনিটের বেশি লাগার কথা নয়। কিন্তু যানজটের কারণে সেই পথ আসতে সময় লেগেছে ২ ঘণ্টা।
প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্য ও বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকে রাজধানীর বিমানবন্দর, নতুন বাজার, গুলশান, বনানী, মহাখালী, সাতরাস্তা, বাড্ডা, রামপুরা, বিজয় সরণি, জাহাঙ্গীর গেট, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, বাংলামটর, শাহবাগ, সদরঘাট, ধানমন্ডি, নিউ মার্কেট, মগবাজার, মিরপুর রোড, সাতমসজিদ রোড, মতিঝিল, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন স্থানে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
এএজে/এমএইচএস