নালা-খাল পরিষ্কারে সিডিএর কাছে ১০০ কোটি টাকা চাইলেন মেয়র
বর্ষার আগে নগরের নালা-খাল পরিষ্কারে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) কাছে ১০০ কোটি টাকা চেয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী।
বুধবার জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আয়োজিত সমন্বয় সভায় সভাপতির বক্তব্যে মেয়র এ অর্থ চান।
বিজ্ঞাপন
সভাপতির বক্তব্যে মেয়র বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনের প্রকল্পের অধীনে নগরের ওয়ার্ডগুলোতে বেশ কিছু ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। এসব ড্রেনের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও রক্ষণাবেক্ষণে চট্টগ্রাম সেটি করপোরেশনের কোনো বরাদ্দ নেই। বর্তমানে করপোরেশনের ফান্ডের অবস্থাও ততো ভালো না। এ পরিস্থিতিতে নালা-খাল মেনটেইন্যান্সের দায়িত্ব করপোরেশনের পক্ষে নেওয়া সম্ভব নয়। কারণ করপোরেশনে ফান্ড ও প্রয়োজনীয় জনবলের অভাব রয়েছে।
তিনি বলেন, যদি সিডিএ নালা-খাল পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কাজে কোনো বরাদ্দ দিতে না পারে সে ক্ষেত্রে আমাদের বরাদ্দের জন্য মন্ত্রণালয়ের কাছে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।
বিজ্ঞাপন
সভায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ এবারের জলাবদ্ধতা অন্যবারের মতো হবে না বলে আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা প্রকল্পের চলমান চার বছরের কাজের মধ্যে এখনো দুই বছরের কাজ বাকি। এখনই শতভাগ ফলাফল পাব তা মনে হয় না। নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে কর্ণফুলী নদীর ড্রেজিংও প্রয়োজন। প্রয়োজনে এ বিষয়ে পানি বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া যায়।
জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্পের আওতাভুক্ত ৮ দশমিক ৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ পৃথক সাতটি খালের উন্নয়ন কাজ শেষ হয়েছে বলে সভায় জানানো হয়। সভায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কয়েকজন কাউন্সিলর বলেন, বর্ষার পূর্বে খালের মাটি ও বাঁধ অপসারণ, নালার স্ল্যাভ ঠিক করা ও প্রকল্পের কাজের সঙ্গে কাউন্সিলরদের সমন্বয় করা প্রয়োজন ।
জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল শাহ আলী বলেন, আসন্ন বর্ষার আগে অর্থাৎ চলতি এপ্রিল মাস পর্যন্ত আমরা কাজ করতে পারব। তিনি বলেন, আমরা নগরীর বিভিন্ন এলাকায় খালগুলোতে ১৭৬ কিলোমিটারের মিটারের মতো রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেছি। জলাবদ্ধতা নিরসন কাজে এটা বড় অগ্রগতি বলা যায়। পাশাপাশি অনেক এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানও চালাতে হচ্ছে। পুরো প্রকল্পের কাজ সমানতালে করা সময়সাপেক্ষ। কারণ এখানে বহু প্রতিবন্ধকতা আছে। তবে এ বছর নগরীর প্রবর্তক মোড়ে প্রতিবারের মতো জলাবদ্ধতা হবে না বলে আশা করা যায়। কারণ প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস অপসারণসহ এর পেছনের খালের অবৈধ স্থাপনা সরানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, নগরীর পাঁচলাইশ, কাপাসগোলা, কাতালগঞ্জ এলাকায় খালের সম্প্রসারণ করা যায়নি বলে এখনো ওই এলাকা জলমগ্ন হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় ব্রিজের নিচ দিয়ে ওয়াসা ও কর্ণফুলী গ্যাসসহ বিভিন্ন সেবা সংস্থার সংযোগ লাইনের কারণে জলাবদ্ধতা হচ্ছে । সংযোগ লাইনের সঙ্গে বিভিন্ন ময়লা আবর্জনা আটকে গিয়ে পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা হয়।
তিনি আরও বলেন, শহরের পানি খালে নিতে হলে ড্রেন নির্মাণ করা লাগবে। যে কাজ আমরা ইতোমধ্যে শেষ করেছি। এসব ড্রেনের স্ল্যাব বা ঢালু করে তৈরি করা হয়েছে, যাতে পানি সহজে খালে পৌঁছাতে পারে। আমরা মোট ৫০ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ করেছি। রিটেইনিং খালের নির্মাণ কাজও এখন দৃশ্যমান হচ্ছে। যে সাতটি খালের উন্নয়ন কাজ শেষ হয়েছে তা বুঝে নিতে ইতিমধ্যে সিডিএকে পত্র দিয়ে অবহিত করেছি। প্রকল্পে আমাদের কাজ হলো অবকাঠামোগত কাজ শেষে বুঝিয়ে দেওয়া। রক্ষণাবেক্ষণ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো করবে। প্রকল্প পরিচালক জুনের মধ্যে ১৮টি খালের রিটেইনিং ওয়ালের কাজ শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
লে. কর্নেল শাহ আলী জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে ২৩ খালের স্লুইস গেইট নির্মাণ ও ১২টি খালের রেগুলেটর নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষনের কাজ সম্পন্ন না হওয়াকে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এসব কাজে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা লাগবে। তবে মে মাসের মধ্যে পাম্প বসানোর কাজ সম্পন্ন হবে। এজন্য প্রশিক্ষিত লোকবল নিয়োগ করা গেলে জলাবদ্ধতা নিরসনের সুফল কিছুটা দৃশ্যমান হবে। তবে পুরোপুরি সুফল পেতে আগামী বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
চসিকের টাইগারপাসস্থ কনফারেন্স রুমে আয়োজিত এ সভায় উপস্থিত ছিলেন চসিকের প্যানেল মেয়র মো. গিয়াস উদ্দিন, ওয়ার্ড কাউন্সিলর ড. নিছার উদ্দিন আহমদ মঞ্জু, মো. মোবারক আলী, মো. ইসমাইল, আবদুল মান্নান প্রমুখ।
কেএম/আরএইচ