মো. শাহরিয়ার আলম /ফাইল ছবি

দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিবেদনের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যে প্রতিবেদন করেছে তাতে অতীতের মতো একটা ধারাবাহিকতা দেখা গেছে। প্রতিবেদনে অনেক গৎবাঁধা বিষয় আছে। ফান্ডামেন্টাল অনেক কিছু ভুল আছে।

বুধবার (১৩ এপ্রিল) মার্কিন প্রতিবেদন নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিবেদনটি কেবল প্রকাশিত হয়েছে। এ প্রতিবেদনটার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ শুরু করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় বলতে পারি, এ প্রতিবেদন বাংলাদেশে সরকার বিরোধী যেসব প্রোপাগান্ডা মেশিন আছে; সেগুলো থেকে প্রাথমিকভাবে তথ্যগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে। দুঃখের বিষয় হলো- অতীতের মতো একটা ধারাবাহিকতা এ প্রতিবেদনে আছে। গৎবাঁধা বিষয় আছে। প্রতিবেদনে ফান্ডামেন্টাল অনেক কিছু ভুল আছে।’

২০২১ সালে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর মঙ্গলবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়েও প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বাংলাদেশ নিয়ে ৭৪ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘নিরাপত্তা বাহিনীর ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতিতে সরকারের দায়মুক্তি দেওয়ার যে অভিযোগ করা হয়েছে তাতেও মিথ্যাচার রয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আমরা নাকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুই-একজন সদস্যের ওপর ব্যবস্থা নিয়েছি। এটা ঠিক নয়। গত তিন বছরে র‍্যাব ও পুলিশের ১৯০ জন সদস্যকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এতগুলো লোককে চাকরিচ্যুত করার পরও সেখানে দু’একজন কীভাবে বলা হয়?’

বাংলাদেশের ধর্ম, ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে রিপোর্ট প্রকাশের অনুরোধ জানান প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এলজিবিটিদের জন্য বাংলাদেশে আইন নেই এবং বাংলাদেশ তাদের প্রয়োজন মেটাতে পারছে না। এটা আমাদের ইসলাম ধর্মের পরিপন্থী। পৃথিবীর এমন একটা মুসলিম দেশ দেখান যারা এলজিবিটিকে অনুমোদন দেয়। যত দেশ বা সংস্থা থেকে চাপ আসুক না কেন এলজিবিটি প্রশ্নে কোনো ছাড় দেবে না বাংলাদেশ। এটা বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে বিরোধিতা করা হবে। ধর্মের সঙ্গে বিরোধিতা করা হবে।’

প্রতিবেদনে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক বন্দী আখ্যা দেওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়  উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলার বিষয়টিও এখানে নিয়ে আসা হয়েছে। তাকে রাজনৈতিক বন্দী বলা হয়েছে। তিনি তো রাজনৈতিক বন্দী নন। আমরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যতবার এ নিয়ে কথা বলেছি, সেখানে আমরা সকল প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। তাকে মানবিক কারণে জেল থেকে মুক্তি দিয়ে বাসায় থাকতে দেওয়া হয়েছে। তার বিদেশে যাওয়ার প্রশ্নটাও অমূলক ছিল।’

প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভুল তথ্য এসেছে জানিয়ে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘রোহিঙ্গা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কতটা আন্তরিক। রোহিঙ্গা প্রশ্নে কেউ যদি আমাদের মানবিকতা শেখাতে আসে আমার মনে হয় তাদের নৈতিক স্খলন হয়েছে। যারা এটা করার চেষ্টা করবেন। আমি বলছি না যে, এ রিপোর্টে করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু রোহিঙ্গা প্রশ্নে আমরা কতটা সিরিয়াস এটা বোঝানোর জন্য করছি।’

‘এখন পর্যন্ত যা দেখেছি তাতে মনে হয়েছে, রোহিঙ্গা ইস্যুটিও ভুলভাবে মার্কিন রিপোর্টে তুলে ধরা হয়েছে। ১০/১২ জন রোহিঙ্গা ভাসানচর থেকে পালানোর সময় নৌকাডুবি হয়ে তাদের মৃত্যু হয়েছে। এটাও কী আমাদের দোষ? আমাদের ঘাড়ে এ দোষ চাপানো হয়েছে’ বক্তব্যে যোগ করেন প্রতিমন্ত্রী।

প্রতিবেদনের ভুল ব্যাখ্যা নিয়ে ওয়াশিংটনের অবস্থান জানতে চাওয়া হবে জানিয়ে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘আমরা তাদের এ প্রতিবেদনের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া কয়েকদিনের মধ্যে দিয়ে দেব। প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে আগামী রোববার ও পরবর্তীতে মার্কিন সরকারের সঙ্গে আমাদের যে সিরিজ অব মিটিংস হবে, এগুলোর প্রতিটি বিষয়ও তাদের কাছ থেকে জানতে চাইব। আমাদের অবস্থান কোথায় কী আছে সেটাও তাদেরকে জানাব।’

এর আগে সচিবালয়ে মার্কিন প্রতিবেদন নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। প্রতিক্রিয়ায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সেখানে তথ্যের গরমিল রয়েছে বলে মনে করছেন তিনি।

এনআই/ওএফ