নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থীকে হয়রানির অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাডজান্ট ফ্যাকাল্টিকে (খণ্ডকালীন শিক্ষক) মারধর করেছে শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় মারধরের স্বীকার ওই শিক্ষক নর্থ সাউথের প্রক্টরসহ ৫ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।

সম্প্রতি রাজধানীর ভাটারা থানায় মামলাটি করেন আতিকুর রহমান খান নামের ওই শিক্ষক।

ভাটারা থানা জানায়, আতিকুর রহমান নর্থ সাউথে খণ্ডকালীন পড়ালেও তিনি মূলত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) নিয়মিত শিক্ষক। মামলায় নর্থ সাউথের ৫ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মারধর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে। আসামিরা হলেন- হয়রানির অভিযোগকারী ওই নারী শিক্ষার্থী, শায়েখ আফসার ফাহিম, দীপঙ্কর দাশ, হাইমিন আল মঈদ ও তানজিব ইসলাম মিথিল।

রোববার (১৭ এপ্রিল) ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজ্জাদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মামলাটি তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তের পর বিস্তারিত ঘটনা জানা যাবে।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, নর্থ সাউথের শিক্ষার্থী (হয়রানির অভিযোগকারী নারী শিক্ষার্থী) ওই শিক্ষকের কাছে একটি কোর্সের পরীক্ষার প্রশ্ন চেয়েছিলেন। তিনি দিতে রাজি হননি বলে ক্ষিপ্ত হয়ে ৫ বন্ধুকে দিয়ে তাকে মারধর ও হেনস্তা করান ওই নারী শিক্ষার্থী।

এদিকে ঘটনাটির ছবি ও ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া ও অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে বরং আতিকুরকেই বহিষ্কার করায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আবু নোমান এম আতাহার আলী ও সেই পাঁচ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেও আরেকটি মামলা করেছেন শিক্ষক আতিকুর রহমান খান।

সেই মামলায় অভিযোগ করা হয়, সম্প্রতি বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি কফি শপে ডেকে নিয়ে শিক্ষককে মারধর করেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী। সেটির ছবি ও ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে তাকে হেনস্তা করা হয়েছে।

এ বিষয়ে প্রকৃত ঘটনা না জানা গেলেও প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট অ্যালায়েন্স অব বাংলাদেশ (পুসাব) জানায়, আতিকুর রহমান ওই ছাত্রীকে হয়রানি করেছেন। এ কারণে তাকে বহিষ্কার করেছে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়াও তাকে আজীবনের জন্য ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

পুসাব দাবি করে, ক্লাসের এক শিক্ষার্থী ম্যাথ বুঝতে আতিকুরের বিশ্ববিদ্যালয় অফিস রুমে গেলে তিনি ওই শিক্ষার্থীকে নানাভাবে হয়রানি শুরু করেন। আতিকুর বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীকে দেখা করার প্রস্তাব দিতে থাকেন। মধ্যরাতে নিয়মিত ফোন দিয়ে উত্ত্যক্ত করতেন। শিক্ষার্থী দেখা না করতে টিউশনসহ বিভিন্ন অজুহাত দিতে থাকে। কিন্তু আতিকুর উল্টো শিক্ষার্থীকে বলেন বাইরে টিউশনি না করিয়ে বরং তাকে পড়াতে। এজন্য তিনি ওই শিক্ষার্থীকে আইফোনসহ বিভিন্ন দামি উপহার দেওয়ার প্রস্তাব দেন।

উপায় না পেয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের সহযোগিতায় অভিযুক্ত আতিককে বসুন্ধরার একটি ক্যাফেতে দেখা করার কথা বলেন। এ সময় আগে থেকে উপস্থিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা অভিযুক্তকে হাতে নাতে ধরে ফেলেন। আতিক এক লাখ টাকা দিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করার প্রস্তাবও দেন। শিক্ষার্থীরা তাকে ধরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অফিসে সোপর্দ করলে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার এবং আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়।

এআর/এমএইচএস