নাহিদ, পেশায় কুরিয়ার সার্ভিসের ‘ডেলিভারিম্যান’। কামরাঙ্গীরচরের রনি মার্কেটের পাশে দেওয়ানবাড়িতে ছোট্ট একটি ঘরে সংসার পেতেছিলেন ছয় মাস আগে বিয়ে করা নববধূ ডালিয়াকে নিয়ে। প্রতিদিনের মতো মঙ্গলবারও কুরিয়ারের কাজে বের হয়েছিলেন নাহিদ। কে জানত, ওই যাওয়াই তার শেষ যাওয়া হবে!

মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন নাহিদ। বেধড়ক মারধরে জ্ঞান হারিয়ে দীর্ঘ সময় রাস্তায় পড়েছিলেন। পরে শুভ নামের এক ব্যক্তি আহত অবস্থায় নাহিদকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান।

বিকেলে নাহিদের পরিবার খবর পান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সূত্রে। ততক্ষণে নাহিদ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লাইফ সাপোর্টে। রাত ৯টা ৪০ মিনিটে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন

মাত্র ছয় মাস আগে বিয়ে করে সুখের সংসার পেতেছিলেন নাহিদ। কোনো অপরাধ না করেই প্রাণ গেল তার। শুধু নাহিদের জীবনই নয় পরিবার, নববধূ ডালিয়ার স্বপ্ন ও আহ্লাদ রূপ নিয়েছে বিষাদে।

নিহত নাহিদের মামাত ভাই মো. নাজিম জানান, নাহিদের বাবার নাম নাদিম হাসান। তিনি ম্যাটাডোর ইন্ডাস্ট্রিতে চাকরি করেন। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে নাহিদ সবার বড়। বিয়ের পর সংসার চালাতে কুরিয়ার সার্ভিসের ডেলিভারিম্যানের কাজ নিয়েছিলেন। কামরাঙ্গীরচরের ওই ছোট্ট ঘর আজ বিষাদের গল্প।

‘সকালে বাসা থেকে অফিসের উদ্দেশ্যে বের হন নাহিদ। পরে আমরা ফেসবুকে তার হাসপাতালে ভর্তির খবর জানতে পারি। মঙ্গলবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।’

নাজিম বলেন, খবর শোনার পর নাহিদের মা, সদ্য বিয়ে করা স্ত্রী বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। কিছুতেই তাদের শান্ত করা যাচ্ছে না। এদিকে, মরদেহ গ্রহণের জন্য দুই ঘণ্টা ঢামেকে অপেক্ষায় আমরা।

ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বাচ্চু মিয়া জানান, নিহত নাহিদ হাসান এলিফ্যান্ট রোডের বাটা সিগন্যাল এলাকার একটি কুরিয়ার সার্ভিসে চাকরি করতেন। ঢামেকের জরুরি বিভাগে ওয়ানস্টপ ইমার্জেন্সি সার্ভিসের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৯টা ৪০ মিনিটে তার মৃত্যু হয়।

তিনি আরও জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় শিক্ষার্থীসহ চারজন ভর্তি ছিলেন। তাদের মধ্যে একজন মারা গেছেন। প্রথম থেকেই তিনি আশঙ্কাজনক ছিলেন। শুভ নামের একজন দুপুরে আহত অবস্থায় নাহিদকে হাসপাতালে আনেন। নিউ মার্কেট এলাকায় সংঘর্ষের সময় আহত অবস্থায় নাহিদ রাস্তায় পড়েছিলেন বলে জানিয়েছেন শুভ।

নিহত নাহিদের বাবা নাদিম হাসান বলেন, আমার ছেলের তো কোনো অপরাধ ছিল না। আমার ছেলে ঢাকা কলেজের ছাত্র না, নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীও না। নিরাপরাধে প্রাণ গেল ছেলেটার। মাত্র বিয়ে করা ছেলেটার বউকে কী জবাব দেব? ছেলে হত্যার বিচারই বা আমি কার কাছে চাইব?

‘পুলিশ সব তথ্য নিয়েছে। এখনও মেডিকেলে আছি, ময়নাতদন্ত চলছে। মরদেহ রাতেই নিয়ে যাব কামরাঙ্গীরচরে। কাল মামলা করব।’

বাচ্চু মিয়া জানান, শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনায় আহত আরও তিনজন হাসপাতালে ভর্তি। তারা হলেন- নিউ সুপার মার্কেটের রেডিমেড কাপড় দোকানের কর্মচারী মোরসালিন (২৬), ইয়াসিন (২০) এবং ঢাকা কলেজের দর্শন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী কানন চৌধুরী (২৩)। তাদের মধ্যে মোরসালিনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

সোমবার রাতে নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বাধে। রাত ১২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত চলে সংঘর্ষ। মঙ্গলবার সকাল থেকে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আবারও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন শিক্ষার্থীরা। দুপুর ১টার দিকে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

জেইউ/এমএইচএস