ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীদের মধ্যকার সংঘর্ষের ঘটনার তৃতীয় দিন চললেও এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। এ ঘটনায় কাউকে আটকও করেনি পুলিশ।

যদিও এ ঘটনায় এক যুবক নিহত হয়েছে। শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। তবে পুলিশ জানিয়েছে, পুলিশের ওপর হামলা, সম্পদের ক্ষতি ও হত্যার ঘটনায় মামলা করা হবে।

বুধবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) নিউ মার্কেট জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) শাহেন শাহ মাহমুদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখনো মামলা হয়নি, তবে মামলা হবে।

এছাড়া যেই দুইটি দোকানকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের সূত্রপাত তাদের কাউকেও আটক করা হয়নি বলেও তিনি জানান।

তিনি বলেন, এ ঘটনায় এখনো কাউকে আটক করা হয়নি। ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিন নিউমার্কেটের ভেতরে সরেজমিনে দেখা যায়, পুলিশ সদস্যরা মার্কেটের দোকানীদের সঙ্গে কথা বলছেন। তারা ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ-খবর নিচ্ছেন।

এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) সংঘর্ষের সময় নিউমার্কেট এলাকায় অ্যাম্বুলেন্সে হামলার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হবে। এদিন সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে আহত নাহিদ হোসেন নামের এক পথচারী রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এছাড়া, দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ১০ জনের বেশি সাংবাদিকসহ আহত হয়েছেন শতাধিক। এসব ঘটনায় পৃথক পৃথক মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে পুলিশ।

সোমবার রাত ১২টার দিকে রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে চলা এ সংঘর্ষে কয়েকজন শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ী আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এসময় আহত হন বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যও।

মঙ্গলবার সকালে আবারও সংঘর্ষে জড়ান শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীরা। মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে তারা ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকেন। ছাত্রদের অনেকে হেলমেট পরে এবং লাঠি হাতে নিয়ে সংঘর্ষে জড়ান। ব্যবসায়ী-কর্মচারীরাও লাঠিসোটা ও লোহার রড নিয়ে ছাত্রদের ওপর হামলা চালানো শুরু করেন। 

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ সংঘর্ষ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে গোটা নিউ মার্কেট ও সায়েন্সল্যাব এলাকায়। থেমে থেমে সারাদিন চলে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। এতে শতাধিক শিক্ষার্থী এবং প্রায় অর্ধশত ব্যবসায়ী-কর্মচারী আহত হন। দুই শিক্ষার্থীসহ বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হন। সংঘর্ষে গুরুতর আহত হওয়া কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মী নাহিদ হোসেন মঙ্গলবার রাতে ঢাকা মেডিকেলে মারা যান। ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থী আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি আছেন রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে।

সংঘর্ষের খবর সংগ্রহে গিয়ে ব্যবসায়ী ও দোকান কর্মচারীদের হামলায় আহত হয়েছেন বিভিন্ন গণমাধ্যমের অন্তত ৯ জন সাংবাদিক। শিক্ষার্থী-ব্যবসায়ীদের এ সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সংঘর্ষ শুরু হলেও পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে ১২টার দিকে। ফলে বাধাহীনভাবে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া আগের রাতের সংঘর্ষের পর মঙ্গলবার সকালে পুলিশের কোনো সতর্কতামূলক পদক্ষেপ সেখানে দেখা যায়নি। 

এমএসি/আরএইচ