ঈদ সামনে রেখে চট্টগ্রামের ফুটপাতে বেড়েছে কেনাবেচা

চট্টগ্রাম নগরে ভ্যান চালান মোহাম্মদ হোসেন মিয়া। বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগরে। ঈদের সময় ঘনিয়ে আসায় সন্তানদের জন্য ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছেন চট্টগ্রামের নিউমার্কেট এলাকার ফুটপাতে। শুক্রবার দুপুরে ফুটপাতে প্যান্টের দোকানের সামনে কথা হয় তার সঙ্গে।

তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভ্যান চালিয়ে যা আয় হয়, তা দিয়েই  সংসার চলাতে হয়। সেখান থেকেই কিছু টাকা জমিয়ে ছেলের জন্য ঈদের পোশাক নিতে এসেছি। দুই ছেলের জন্য প্রতি বছর ঈদের পোশাক ফুটপাত থেকেই কেনা হয়। 

তিনি আরও বলেন, ফুটপাতে অল্প দামে পছন্দের পোশাক পাওয়া যায়। তাই ফুটপাত থেকে ছেলেদের জন্য শার্ট ও প্যান্ট নিলাম। নিজের জন্য ও স্ত্রীর জন্য এখনও কিছু কেনা হয়নি। 

হোসেন মিয়ার মতো নিম্নবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্তদের ঈদের কেনাকাটার প্রথম পছন্দ ফুটপাতের দোকান। চট্টগ্রাম নগরের নিউমার্কেট, রেলওয়ে স্টেশন এলাকা, তামাকুমন্ডি লেনের সামনের অংশ, ইপিজেড, আগ্রাবাদসহ বিভিন্ন  এলাকার ফুটপাতে জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা। পাশাপাশি কেনাকাটা জমে উঠেছে নগরের পৌর জহুর হকার্স মার্কেটে। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, ঈদ উপলক্ষে বিশেষ প্রস্তুতিও নিয়েছেন ফুটপাত ও হকার্স মার্কেটের দোকানিরা। ফুটপাতের দোকানগুলোতে আগে ছাউনি না থাকলেও এখন উপরে ত্রিপল দেওয়া হয়েছে। শার্ট, প্যান্ট, থ্রি-পিস, পাঞ্জাবি, বেল্ট, জুতার দোকানে বেশ ভিড়। পছন্দসই দামে পছন্দসই পোশাক কিনতে ক্রেতারা ভিড় করছেন হকার্স মার্কেটে। কেউ এসেছেন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে, বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে, আবার অনেকে এসেছেন একা। দোকান ঘুরে সেরে নিচ্ছেন ঈদের কেনাকাটা। 

রেলওয়ে স্টেশনের বিপরীত পাশের ফুটপাতে কথা  হয় গার্মেন্টসকর্মী ফারুকের সঙ্গে। কাজ করেন চট্টগ্রামের কর্ণফুলী এলাকার একটি কারখানায়। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুই ছেলের জন্য চারশ টাকা দিয়ে দুটি প্যান্ট নিলাম। এখানে কম টাকায় জিনিস পাওয়া যায়, তাই এখানে ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছি। আমার কাছে যে টাকা আছে তা দিয়ে ভালো মার্কেটে যেতে পারব না। তাই ফুটপাতই ভরসা।

নিউমার্কেট এলাকার ফুটপাত থেকে নিজের জন্য ৫০০ টাকা দিয়ে  জুতা কিনেছেন গার্মেন্টসকর্মী ইমন খান।  তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন,  কম দামে এখানে ভালো জুতা পাওয়া যায়। তাই জুতা নিয়েছি। আমার সঙ্গে বন্ধুরাও এসেছে।

মোহাম্মদ কামরুল নামের এক শিক্ষার্থী নগরের নিউমার্কেট এলাকার ফুটপাতে টিশার্ট কিনতে এসেছেন।  তিনি বলেন, টিশার্ট কেনার জন্য এসেছি। ঘুরে ঘুরে দেখছি। দামে পছন্দ হলে কিনে নিয়ে যাব।

রেলওয়ে স্টেশনের ফুটপাতের দোকানি ইমু ডাকা পোস্টকে বলেন, এখানকার ফুটপাতে ১৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৪০০ টাকায় ভালো জিনিস পাওয়া যায়। ১৫ রমজানের পর থেকে কাস্টমার বেড়েছে।  তবে বন্ধের দিন হওয়ায় আজ (শুক্রবার) কাস্টমার অনেক বেশি। সামনের দিনে বেচা-বিক্রি আরও বাড়বে বলে আশা করছি।

ইমুর দোকান থেকে দুই দোকান সামনে গেলেই প্যান্টের দোকান। দাম হাঁকাচ্ছেন দোকানি ইয়াসিন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনার কারণে দুই বছর ঈদে তেমন বেচা-বিক্রি হয়নি। এ বছর কিছুটা হচ্ছে। সামনে বিক্রি বাড়বে বলে আশা করছি।

নিউমার্কেট এলাকার ফুটপাতের দোকানদার মোহাম্মদ ইউসুফ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফুটপাতে ১৫০ থেকে ৭০০ টাকায় প্যান্ট পাওয়া যায়। তিনি বলেন, আমরা যে প্যান্ট ৫০০ টাকায় বিক্রি করি মার্কেটগুলোতে তা ৮০০- ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঈদের বেচা-বিক্রি জমে উঠেছে।  ভালো বিক্রি হচ্ছে। আমার দোকানে প্রতিটি শার্টের দাম ২০০ টাকা। এত দিন ৬-৭ হাজার টাকা বিক্রি হতো। আজ ছুটির দিন হওয়ায় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বিক্রি হবে বলে আশা করছি।

ফুটপাতে জুতা বিক্রেতা গিয়াস উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফুটপাতে যে জুতা বিক্রি হয়, তার বেশিরভাগই দেশীয় কারখানায় তৈরি। একই কোয়ালিটির জুতা শোরুমের তুলনায় আমরা কম দামে বিক্রি করি।  প্রত্যাশা অনুযায়ী বিক্রি শুরু হয়নি। তবে আজ বন্ধের দিনে বিক্রি অনেকটা বেড়েছে।

এদিকে, পৌর জহুর হকার্স মার্কেটে ভিড় দেখা গেছে। কাপড়সহ বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী কিনতে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ সকাল থেকেই ভিড় করছেন।  এ মার্কেটের সিরাজ গার্মেন্টসের বিক্রেতা মোহাম্মদ দিদারুল  আলম খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ১৫ রমজানের পর থেকেই ঈদের কেনাকাটা বেড়েছে। আজ অন্য দিনের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি বিক্রি হবে বলে আশা করি। 

একই মার্কেটের জিন্স কর্নারের দোকানি জাহিদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন,  প্রত্যাশা অনুযায়ী বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতাদের পছন্দ অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকারের প্যান্ট দোকানে তুলেছি।  বিক্রি বেশি হওয়ায় আমরা খুশি।

হকার্স মার্কেটে ছেলে-মেয়ের জন্য ঈদের পোশাক কিনতে আসা হাফসা আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন,  ছেলে-মেয়ের জন্য পোশাক খুঁজছি। অন্য সময়ের তুলনায় দাম বেশি চাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। 

চট্টগ্রাম হকার্স সমিতির ৩ নম্বর ইউনিটের সভাপতি মোহাম্মদ ওমর ফারুক নিউমার্কেটে নিজ দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা হয় তার । তিনি বলেন, স্বজনদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে মালামাল কিনেছি। গত দুই বছর ঈদে ব্যবসা হয়নি। করোনার আগে ঈদে যেমন হতো, এবার তেমন হচ্ছে না। মানুষের হাতে টাকা নেই মনে হচ্ছে । 

চট্টগ্রামের  সম্মিলিত হকার্স ফেডারেশনের সভাপতি মিরন হোসেন মিলন বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর ভালো বিক্রি হচ্ছে। ১৫ রমজানের পর থেকেই ঈদ বাজার জমজমাট বলতে পারি। আজ তো অনেক ভিড়।

কেএম/আরএইচ