ঈদযাত্রায় নীলসাগর ট্রেনে সৈয়দপুর যাবেন সকাল। শুক্রবার (২১ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে কমলাপুর রেলস্টেশনে অগ্রিম টিকিটের জন্য অপেক্ষা শুরু করেন ঢাকা কলেজের এই শিক্ষার্থী। দীর্ঘ ১৫ ঘণ্টা অপেক্ষার পর আজ (শনিবার) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পেয়েছেন কাঙ্ক্ষিত টিকিট। কিন্তু সকালের মতো সবার ভাগ্য সুপ্রসন্ন নয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও বিনা টিকিটেই চলে যেতে হচ্ছে অনেককে।

চেয়ার কীভাবে এনেছেন- জানতে চাইলে সকাল বলেন, চেয়ার বাসে করে এনেছি। প্রতিবারই টিকিট কাটতে দাঁড়িয়ে থাকার ভোগান্তি পোহাতে হয়। সেজন্যই এবার চেয়ার এনেছি বাসা থেকে।

টিকিটপ্রত্যাশী রাজউককর্মী শিপুল রানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজ ভোর ৫টা থেকে কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসের টিকিটের জন্য অপেক্ষা করছি। এখনো কাউন্টারের সামনেই যেতে পারিনি। এখন (বেলা সাড়ে ১১টা) শুনছি টিকিট নেই। অনেকে লাইন ভেঙে চলে যাচ্ছে। খুলনার টিকিট না পেয়ে অনেকে নাটোরের টিকিট নিচ্ছেন। তবে, কালোবাজারে টিকিট বিক্রির খবর এখনো শুনিনি।

কমলাপুর রেলস্টেশনের ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার জানিয়েছেন, কমলাপুর রেলস্টেশনে ১৬টি লাইনে ঈদযাত্রার অগ্রিম টিকিট বিক্রি হচ্ছে। আজ ২৭ হাজার ৮৫৩টি টিকিট বিক্রি হবে। এর মধ্যে অনলাইনে ১২ হাজার ১৫৭টি ও কাউন্টার থেকে বিক্রি হবে ১৫ হাজার ৬৯৬টি। তবে টিকিট পেতে স্টেশনে হাজার-হাজার মানুষ অবস্থান নিয়েছেন।

এদিকে অগ্রিম টিকিট বিক্রির ক্ষেত্রে কমলাপুর রেলস্টেশনের ১৮ ও ১৯ নম্বর কাউন্টার দুটি নারীদের জন্য বিশেষভাবে রাখা হয়েছে। ওই দুটি কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতাও নারী। দূর-দূরান্ত থেকে এসে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকাটা তাদের জন্য ভোগান্তি বলে জানিয়েছেন নারী টিকিটপ্রত্যাশীরা।

নারায়ণগঞ্জের ভূলতা থেকে অগ্রিম টিকিট কাটতে এসেছেন আতিয়া সুলতানা। তিনি একটি টেক্সটাইল কারখানার মেডিকেল অফিসার। আতিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, সকাল ৭টা থেকে দাঁড়িয়ে এখন টিকিট পেলাম। এটা অনেক ভোগান্তির। ৪ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে সিল্কসিটি ট্রেনের টিকিট পেলাম। অনলাইনে টিকিট বিক্রির কথা থাকলেও পাইনি। তাই বাধ্য হয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে এখানে আসতে হয়েছে। 

রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২৭ এপ্রিলের টিকিট দেওয়া হচ্ছে আজ (২৩ এপ্রিল)। একইভাবে ২৮ এপ্রিলের টিকিট পাওয়া যাবে ২৪ এপ্রিল (রোববার), ২৯ এপ্রিলের টিকিট ২৫ এপ্রিল (সোমবার), ৩০ এপ্রিলের টিকিট ২৬ এপ্রিল (মঙ্গলবার) এবং ১ মের টিকিট ২৭ এপ্রিল (বুধবার) বিক্রি করা হবে।

এবার ‘টিকিট যার, ভ্রমণ তার’ এই স্লোগান বাস্তবায়নে যাত্রীদের এনআইডি-জন্ম সনদ ফটোকপি কাউন্টারে প্রদর্শন করে টিকিট ক্রয় করতে হবে। এনআইডি ছাড়া অন্য কোনো পরিচয়পত্র দিয়ে ট্রেনের টিকিট কাটা যাবে না।

কমলাপুর রেলস্টেশনসহ মোট পাঁচটি স্টেশন থেকে অগ্রিম টিকিট বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে কমলাপুর স্টেশন থেকে পশ্চিমাঞ্চলগামী ও খুলনাগামী স্পেশাল ট্রেনের টিকিট, ঢাকা বিমানবন্দর থেকে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী সব আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট, তেজগাঁও স্টেশন থেকে দেওয়া হচ্ছে ময়মনসিংহ, জামালপুরগামী ও দেওয়ানগঞ্জ স্পেশালসহ সব আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে দেওয়া হচ্ছে মোহনগঞ্জগামী মোহনগঞ্জ ও হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট এবং ফুলবাড়িয়া (পুরোনো রেলওয়ে স্টেশন) থেকে সিলেট ও কিশোরগঞ্জগামী সব আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

এমএইচএন/ওএফ