নিউ মার্কেট এলাকায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার এক নম্বর আসামি বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট মকবুল হোসেনকে শুক্রবার মোহাম্মদপুর থেকে গ্রেপ্তারের পর তিন দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ।

পুলিশের দায়ের করা ওই মামলায় মকবুলসহ মোট ২৪ জনের নাম উল্লেখ রয়েছে। অ্যাডভোকেট মকবুল নিউ মার্কেট থানার বিএনপির সাবেক সভাপতি। বর্তমানে তিনি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য।   

যে দুটি দোকানের বাগবিতণ্ডাকে কেন্দ্র করে এত বড় সংঘর্ষ ঘটে, সে দুটিরই মালিক অ্যাডভোকেট মকবুল। সিটি করপোরেশন থেকে বরাদ্দ পাওয়া দোকান দুটি তিনি দুই ভাইকে ভাড়ায় দিয়েছিলেন। 

তদন্ত সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল একটি সূত্র ঢাকা পোস্টকে জানায়, মকবুল নিজে দোকান পরিচালনা করতেন না। নিউ মার্কেটে সংঘর্ষ চলাকালে তার সিডিআরে (কল ডিটেইল রেকর্ড) বেশ কয়েকটি সন্দেহজনক ফোনকলের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এসব কলে তিনি কী কথা বলছিলেন তা জানার চেষ্টা চলছে রিমান্ডে।

পুলিশকে মকবুল বলেন, ‘দোকান দুটির একটি আমার নিজের ভাই ও আরেকটি আমার চাচাতো ভাইয়ের কাছে ভাড়া দেওয়া। সংঘর্ষ শুরুর পর আমি দোকানের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে জানতে আমার ভাইদের ফোন দিই। দোকান মালিক সমিতির নেতা, ব্যবসায়ী সমিতি ও আশপাশের দোকান মালিকদের ফোন দিই। কল রেকর্ড যাচাই-বাছাই করলেই সব জানা যাবে।’

মকবুল পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে তার বিরুদ্ধে থাকা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। গোপন বৈঠকের কথাও অস্বীকার করেছেন। একই রকম বক্তব্য দিয়েছেন রিমান্ডের দুদিন। রোববার দুপুর পর্যন্ত পুলিশ মকবুলের ফোনকলের রেকর্ড (ভয়েস) সংগ্রহ করতে পারেনি।

জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিউ মার্কেট থানার ইন্সপেক্টর (অপারেশন্স) হালদার অর্পিত ঠাকুর ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। পাশাপাশি তদন্ত কার্যক্রমও চলছে। তদন্ত শেষ হলে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে।’

ডিএমপির দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, রিমান্ডে মকবুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন রমনা বিভাগের নিউ মার্কেট জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) শাহেন শাহ মাহমুদ, রমনা বিভাগের নিউ মার্কেট জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) শরীফ মুহাম্মদ তারিকুজ্জামান ও নিউ মার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) স ম কাইয়ুম।

জানতে চাইলে রমনা বিভাগের নিউ মার্কেট জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ শাহেন শাহ মাহমুদ বলেন, ‘মকবুলকে জিজ্ঞাসাবাদে আমরা গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্যই পেয়েছি। এসব তথ্য মামলার তদন্ত এগিয়ে নেওয়ার জন্য আমাদের সাহায্য করবে।’

তিনি বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে মকবুলের উদ্দেশ্য সম্পর্কে এখনো ক্লিয়ার হতে পারিনি। তবে তার কার্যক্রমে ইটেনশন কী ছিল, বুঝার চেষ্টা করছি। ঘটনার শুরু থেকে তিনি অনেকের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি গোপন বৈঠকেও বসেন বলে তথ্য পেয়েছি। কী উদ্দেশ্যে তিনি গোপন বৈঠকগুলো করেন, তা জানার চেষ্টা করছি।’

মকবুল ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষকে রাজনৈতিক রূপ দিয়েছিলেন কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ বিষয় সম্পর্কে এখনই আমরা কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছি না। তবে এ ঘটনায় তার উদ্দেশ্য কী ছিল, তিনি রাজনৈতিক রূপ দিতে চেয়েছিলেন কি না – তা জানার চেষ্টা করছি। এ ধরনের ঘটনায় অনেকেই সুযোগ নিতে চান এবং সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে চান। তিনিও সেটি করেছেন, তবে তার উদ্দেশ্য কী ছিল তা জানার চেষ্টা করছি।’

জিজ্ঞাসাবাদ করা আরেক কর্মকর্তা পুলিশের রমনা বিভাগের নিউমার্কেট জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) শরীফ মুহাম্মদ তারিকুজ্জামান বলেন, ‘তার উদ্দেশ্য পরিষ্কার হওয়ার জন্য আমরা জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে যাচ্ছি। তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্ত চলমান থাকাকালে এ বিষয়ে কিছু বলা যাবে না।’

নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) স ম কাইয়ুম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে অনেক তথ্য আমরা পেয়েছি। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করছি। তদন্তের স্বার্থে এসব তথ্য আমরা এখন বলতে পারছি না।’

গত সোমবার রাত ও মঙ্গলবার নিউমার্কেটের দোকানমালিক ও কর্মচারীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সংঘর্ষ হয়। এতে দুজনের প্রাণহানি এবং অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হন। এ ঘটনায় অন্তত তিনটি মামলা দায়ের হয়েছে। যার মধ্যে একটির এক নম্বর আসামি মকবুল। 

এমএসি/এআর/আরএইচ