সড়কপথে ঘণ্টা পর ঘণ্টা যানজটে বসে থাকার ঝক্কি-ঝামেলা এড়াতে ট্রেনেই ভরসা নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা অধিকাংশ মানুষজনের। কিন্তু ট্রেনের টিকিট নামক ‘সোনার হরিণ’ পেতে ভোগান্তির যেন শেষ নেই। লাইনে ঘণ্টা পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে সংগ্রহ করতে হচ্ছে সেই কাঙ্ক্ষিত টিকিট। অন্যদিকে অনলাইনেও সেই একই ভোগান্তি। বারবার চেষ্টা করেও ঢোকা যায় না ওয়েব সাইটে। যখন প্রবেশ করা যায় তখন আর টিকিট থাকে না। এমনটাই অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

শনিবার (২৩ এপ্রিল) সকাল ৮টা থেকে অনলাইনে টিকিট কেনার চেষ্টা করছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থী আফসানা জেরিন। কিন্তু কোনোভাবেই তিনি টিকিট ক্রয়ের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে পারছিলেন না। এমন করে দেড় ঘণ্টা চেষ্টার পর তিনি যখন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে পারলেন, তখন দেখলেন আর একটি টিকিটও অবশিষ্ট নেই। তাহলে ঈদ যাত্রার টিকিট সংগ্রহ করবেন কী করে, সে নিয়ে পড়লেন দুশ্চিন্তায়। অনলাইনের ঝামেলায় মাঝ থেকে একটা দিন নষ্ট। পরে বাধ্য হয়ে তিনি ২৪ এপ্রিল ভোরে কমলাপুর রেল স্টেশনে আসেন, সেখানে লাইনে ৫ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে অপেক্ষার পর নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনের সৈয়দপুর স্টেশন পর্যন্ত ২টি টিকিট পান।

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রাজধানী থেকে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা মানুষজনের যাতায়াতকে স্বস্তিদায়ক করতে গত ২৩ এপ্রিল থেকে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। টিকিটের ৫০ শতাংশ অনলাইনে বিক্রি করে রেলওয়েকে সহায়তা করছে ‘সহজ ডটকম’। সহজ ডটকমের এই দায়িত্ব আজ সন্ধ্যা ৬টায় একমাস গড়াবে। কিন্তু, শুরু থেকেই অনলাইনে টিকিটপ্রত্যশীদের নানা অভিযোগে জর্জরিত ‘সহজ’। তবে প্রতিষ্ঠানটি বলছে, এক মাসে সার্ভার ধসে পড়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি, যা তাদের সফলতা।

শুধু আফসানা জেরিনের ঘটনা নয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ঘেটেও দেখা গেছে অনলাইনে টিকিট ক্রয়ের ক্ষেত্রে সহজের বিরুদ্ধে টিকিটপ্রত্যশীদের নানা অভিযোগ। তাদের মধ্যে মারুফ হাসান সোহাগ লিখেছেন, ‘২৩ তারিখ ভোর ৪.৫৪ মিনিটে অনলাইনে টিকিট দেখাচ্ছে মাত্র ১টি। যেখানে সকাল ৮টা থেকে বুকিং শুরু হওয়ার কথা। তাহলে বাকি টিকিটগুলো গেল কই?’

 ‘সেই দিন কবে আসবে যে দিন ট্রেনের টিকিট, ঈদে বাড়ি যাবার পথে বাধা হবে না।’

মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান লিখেছেন, ‘এবার সহজ সাইটে এক্সেসের জন্য Throttling in a queue-based distribution system ব্যবহার করেছে। এতে ব্যাচ আকারে কিছু ইউজারকে লগইন করানো হবে। লগইন করতে পারলে তার জন্য টিকিট অলমোস্ট বরাদ্দ, অনেকেই পেয়েছে। তাই, যে লগইন করতে পারবে না তার আসলে কিছুই করার নাই। গতকাল একজন কেটেছে খুব সহজেই। আজকে আমি ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটেও লগইন করতে পারিনি।’

বাংলাদেশ রেলওয়ে ফ্যান গ্রুপে রেজাউল হক আক্ষেপ করে লিখেছেন, ‘সেই দিন কবে আসবে যে দিন ট্রেনের টিকিট, ঈদে বাড়ি যাবার পথে বাধা হবে না।’ তাসলিমুল হক নামে একজন রেলের টিকিট বিক্রির দায়িত্ব সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন।

এদিকে সহজ ডটকমকে সাধুবাদ জানিয়ে মামুনুর রশিদ লিখেছেন, ‘কোনো রকম ঝামেলা ছাড়াই ২ মিনিটে সহজ থেকে প্রথম টিকিট পেলাম। আমি মনে করি, তাদের সার্ভার একটু শক্তিশালী করতে পারলে তারা আরও ভালো সার্ভিস দিতে পারবে।’

ঈদের ট্রেনের অগ্রিম টিকিট অনলাইনে কাটতে মানুষকে ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়েছে বলে স্বীকার করে নিয়েছেন কমলাপুর রেলস্টেশনের ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারোয়ার। রোববার তিনি বলেছেন, ‘সবাই একসঙ্গে ওয়েবসাইটে ক্লিক করলে সমস্যা হবেই। গতকালও বলেছি। সবাই প্রত্যাশা করে সকালে আমার টিকিটটা হয়ে যাক। ধরেন, সিস্টেমে রাখা আছে একটা টিকিটের বিপরীতে ১০০ জন হিট করতে পারবে। কিন্তু দেখা গেল সেখানে ১ হাজার মানুষ হিট করেছে। তাহলে তো সমস্যা হবেই।’

অভিযোগগুলোর বিষয়ে জানতে চাইলে সহজ ডট কমের জনসংযোগ কর্মকর্তা ফারহাত আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই মুহূর্তে আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ নেই। সব অভিযোগ রেলওয়ে এবং সহজ ডটকম মিলে সর্টআউট করে সমাধান করেছে এবং করছে।

অনলাইন টিকিটের জন্য ওয়েবসাইটে গত ২ দিন কেমন হিট পড়েছে? এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত ২৩ এপ্রিল প্রতি মিনিটে ৫ লাখ এবং ২৪ এপ্রিল প্রতি মিনিটে ১০ লাখ হিট পড়েছে। তারপরও আমাদের সার্ভার স্ট্যাবল আছে, এটিই আমাদের এচিভমেন্ট।

গত এক মাসে সহজ ডটকম টিকিট বিক্রিতে নিজেদের কতটুকু উন্নতি করতে পেরেছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে ফারহাত বলেন, পরশুদিন থেকে ঈদের আগাম টিকিট দেওয়া শুরু হয়েছে। ঈদের আগাম টিকিট বিক্রিতে আমরা শতভাগ সফল হয়েছি। অনলাইনে আমাদের সার্ভার ক্রাশ করেনি এবং কাউন্টারে যে সফটওয়্যারগুলো চলছে সে সফটওয়্যারগুলো ক্রাশ করেনি। ২১ দিনের মধ্যে আমরা শক্তিশালী সফটওয়্যার তৈরি করতে পেরেছি, এটিই আমাদের এচিভমেন্ট।

এমএইচএন/এসএম