এস জয়শঙ্কর /ফাইল ছবি

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর একদিনের সংক্ষিপ্ত সফরে আজ বৃহস্পতিবার ঢাকায় আসছেন। বৈশ্বিক রাজনৈতিক টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যে জয়শঙ্করের এ সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নয়া দিল্লিতে আমন্ত্রণ জানানোসহ দু’দেশের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। পাশাপাশি গুরুত্ব পাবে ভূ-রাজনৈতিক ইস্যু।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, নয়া দিল্লির সঙ্গে বসার কিংবা আলাপের সুযোগ পেলেই সব ধরনের বিষয় তুলে ধরে ঢাকা। এবারও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে পানি, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা ও ব্যবসা-বাণিজ্যে। তবে এবারের আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ব পাবে ইউক্রেনসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সাম্প্রতিক অবস্থান তথা ভূ-রাজনীতি।

মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বলছে, পানি ইস্যুতে তিস্তার বিষয়টি অতীতের মতো তোলা হবে। তবে আলোচনাধীন কুশিয়ারা নদীর পানি উত্তোলন বিষয়টিতে সুরহার জন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সইয়ের ব্যাপারে তাগাদা দেবে ঢাকা। তাছাড়া কুশিয়ারা নদীর পানি রহিমপুর খাল দিয়ে কৃষিকাজে ব্যবহারের জন্য ভারতের আপত্তির বিষয়টিতে নিষ্পত্তিতে জোর দেওয়া হবে। অন্যদিকে ছয়টি অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন ইস্যুতে আগ্রহ দেখাতে পারে নয়া দিল্লি।

জয়শঙ্করের সঙ্গে সফরে থাকছেন ভারতের নতুন পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কাত্রাও। দুপুরের পর ঢাকায় নেমে জয়শঙ্কর প্রথমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। সেখানে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পক্ষ থেকে নয়া দিল্লি সফরের জন্য আমন্ত্রণপত্র হস্তান্তরের কথা রয়েছে। পরে বিকেলে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও জয়শঙ্কর।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর নিয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) মাশফি বিনতে শামস ঢাকা পোস্টকে বলেন, জয়শঙ্করের আমন্ত্রণপত্র নিয়ে আসার বিষয়টা আমরা জানি না। আমাদের আমন্ত্রণপত্রের কথা বলা হয়নি। বলেছে প্রধানমন্ত্রীর সফরটা নিয়ে আলোচনা করবে। এর আগেতো ভারবালি দাওয়াত ছিল।

মোমেন-জয়শঙ্করের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে মাশফি বলেন, আমরা সব মিটিংয়ে সবগুলো বিষয় তুলে ধরি। এবারও তুলে ধরার চেষ্টা থাকবে। বিশেষ করে পানি, সীমান্ত ইস্যু, ব্যবসা-বাণিজ্য থাকবে। তাছাড়া নতুন নতুন অনেক বিষয় আলোচনায় আসতে পারে, যেখানে আমাদের একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ আছে। এখন যেহেতু সময়টা আনস্টেবল, সার্বিক বিশ্বের পরিস্থিতি ইউক্রেন ইস্যু; আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর অবস্থান নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

বুধবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর ২৮ থেকে ৩০ এপ্রিল বাংলাদেশ ও ভুটানে সরকারি সফর করবেন। জয়শঙ্করের এ সফরকে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপনসহ দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের সফর ও মতবিনিময়ের প্রেক্ষাপট থেকে বিবেচনা করা যায়।

এদিকে জয়শঙ্কর একটা সুখবর নিয়ে আসবেন বলে আগ্রহের সৃষ্টি করেছেন মোমেন। তবে কী খবর নিয়ে আসবেন জয়শঙ্কর সেটা স্পষ্ট করেননি তিনি। মঙ্গলবার ড. মোমেন সাংবাদিকদের জানান, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়তো একটা সুখবর নিয়ে আসবেন। তবে কী খবর নিয়ে আসবেন এখনো আমরা জানি না। ভারতের গণমাধ্যমের বরাতে আমরা জেনেছি, তিনি আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানাতে পারেন।

জয়শঙ্করের সফরে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে মোমেন জানান, সবকিছু নিয়ে আলোচনা হবে। এর মধ্যে তিস্তা নদীর পানি বণ্টনসহ অন্যান্য বিষয়, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, বাণিজ্য বিষয়ক বিভিন্ন অমীমাংসিত বিষয় রয়েছে। আমরা বাণিজ্য আরও বাড়াতে চাই। ইউক্রেন ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে বলেও ইঙ্গিত দেন ড. মোমেন।

তিন দেশের হাইওয়ে নিয়ে ঢাকা আলোচনা করতে চায় জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ভারত, মিয়ানমার, থাইল্যান্ডের মধ্যে সড়ক পথে কানেক্টিভিটি প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে। এ উদ্যোগে সংযুক্ত হতে চায় বাংলাদেশ। আমরা তাদের আবার অনুরোধ করব। ইতোমধ্যে ভারত এ বিষয়ে রাজি হয়েছে এবং থাইল্যান্ডের উপ-প্রধানমন্ত্রী আমাকে জানিয়েছেন তাদেরও কোনো আপত্তি নেই। এ বিষয়ে আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখব।

একই দিন জয়শঙ্করের সফরে আলোচনার বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন জানান, দু’দেশের মধ্যে ইস্যু সবসময় তো থাকেই। টাইম টু টাইম আমরা মিটিং করি আপডেট দেই, নেই। সামনে আমাদের বেশ কিছু হাই লেভেল মিটিং আছে। জেসিসি আছে, জেআরসি আছে। প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি যাওয়ার ব্যাপার আছে, সেটার তারিখ নিয়ে আলোচনা হতে পারে। অত বড় ফরমেটওয়াইজ না হলেও সব কিছুই আলোচনায় আসতে পারে।

চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে বঙ্গবন্ধুকন্যার নয়াদিল্লি সফর নিয়ে আলোচনা ছিল। কিন্তু শেষ অবদি তা হয়নি। আশা করা হচ্ছে, শেখ হাসিনা আগামী জুনে নয়াদিল্লি সফর করবেন।

গত বছর বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে মার্চে ঢাকা সফর করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। একই বছরের ডিসেম্বরে ঢাকায় আসেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর ২০১৯ সালে প্রথমবার ঢাকা সফর করেন জয়শঙ্কর। সবশেষ, গত বছরের মার্চে শেষ বারের মতো ঢাকা সফর করেছিলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এটি জয়শঙ্করের তৃতীয় ঢাকা সফর হতে যাচ্ছে।

এনআই/ওএফ