মহান মে দিবস আজ, শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার দিন। কিন্তু এ দিনেও দায়িত্বে অটল থাকতে হয় কারো কারো। যার মধ্যে রয়েছে নিরাপত্তা প্রহরীর দায়িত্ব। আর সরকারি এ ছুটির দিনে প্রহরীর দায়িত্ব পালনের জন্য নির্বাচন কমিশন (ইসি) বাড়তি কোনো পারিশ্রমিকও দেয় না বলে অভিযোগ নিরাপত্তারক্ষীদের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির নিরাপত্তা প্রহরীরা আক্ষেপ করে বলেন, আমাদের চাকরি সরকারি হলেও সরকারি কোনো ধরনের ছুটি পাই না। প্রায় ২৪ ঘণ্টাই আমাদের দায়িত্ব পালন করতে হয়। শুক্র বা শনিবার সরকারি ছুটি হলেও আমরা কখনও কোনো ছুটি পাই না। সরকারি ছুটির দিন ডিউটি করার জন্য আমাদের কোনো বাড়তি পারিশ্রমিকও দেওয়া হয় না। দেশে ১০টি আঞ্চলিক ও ৬৪টি জেলাতে নির্বাচন কমিশনের অফিস থাকলেও সবগুলোতে নিরাপত্তা প্রহরী নেই।

নাম প্রকাশ না শর্তে জেলা নির্বাচন অফিসের একজন প্রহরী বলেন, ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করতে হয়। বাসা থেকে মাঝে মাঝে খাবার দিয়ে যাই। আবার আমি নিজেই কিছু সময়ের জন্য বাসায় গিয়ে গোসল করে খেয়ে আসি। মাঝে মাঝে ছুটি চাইলে স্যাররা বলে  নিরাপত্তা প্রহরীর আবার কিসের ছুটি। তুমি ছুটিতে গেলে অফিস পাহারা দেবে কে? এজন্য চাইলেও আমরা ছুটি পাই না। একজনের জায়গায় প্রতিটি জেলায় যদি কয়েকজন করে নিরাপত্তা প্রহরী থাকত তাহলে আমাদের উপর এতো জুলুম হতো না।
  
শরীয়ত নামের (ছদ্মনাম) একজন নিরাপত্তা প্রহরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের স্যাররা সরকারি সব ছুটি কাটায়। ঈদে বাড়িতে যায়। কিন্তু আমাদের কখনও কোনো ছুটি হয় না। স্যাররা একটু মানবিক হলেই আমাদের জীবনযাপন স্বাভাবিক হয়ে যায়। কিন্তু আমাদের অমানবিক জীবনযাপনের কথা স্যাররা শোনে না।  

ইসির নিরাপত্তা প্রহরীদের দাবি, প্রতিটি জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে অন্তত দুজন করে নিরাপত্তাপ্রহরী রাখা হোক। স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব না হলে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। সেই সঙ্গে সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটিগুলোও দিতে হবে। কর্মঘণ্টার বাইরে দায়িত্ব পালন করানো হলে সেজন্য আলাদা ভাতা দিতে হবে।

সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশনে এই পদে জনবল সংকটের ফলে কোনো নিরাপত্তা প্রহরীই ছুটি পান না। তাদের সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করতে হয়। দেশের ৬৪টি জেলায় একজন করে নিরাপত্তা প্রহরী পদ রয়েছে। যার ফলে প্রয়োজন হলেও নির্বাচন কমিশন একজনের বেশি নিরাপত্তা প্রহরী জেলাতে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

এ প্রসঙ্গে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমাদের হেড অফিসে ডিউটির শিফটিং করা আছে। তবে জেলা অফিসগুলোতে ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করতে হয়, বিষয়টা এরকম না। জেলা অফিসে শুধু রাতে অর্থাৎ ১২ ঘণ্টা ডিউটি করতে হয়। ২৪ ঘণ্টা ডিউটি করার অভিযোগ আমাদের কাছে কেউ করেনি। তবে বলে রাখা ভালো, অনেকে আছে, রাতে ডিউটি করে দিনেও অফিসে আসে। সেটা ডিউটি হিসেবে ধরলে তো হবে না।’

১২ ঘণ্টা ডিউটি করলেও দেশের বিদ্যমান শ্রম আইন লঙ্ঘন হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা ঠিক। শ্রম আইন অনুযায়ী আমাদের প্রহরীদের বেশি উিউটি করতে হয়। কিন্তু বেশি ডিউটি করার জন্য আমরা তাদের ভাতা দেই। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের যারাই অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন তারা ভাতা পান।’ আবার জেলা অফিসের যারা অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন তারাও পান বলে দাবি করেন তিনি।

অতিরিক্ত সচিব আরও বলেন, নির্বাচন কমিশনের বিদ্যমান জনবল কাঠামো অনুযায়ী অনেক পদ শূন্য রয়েছে। এজন্য জনবল কাঠামো আমরা সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছি। ইতোমধ্যেই জনবল কাঠামো সংশোধন করার লক্ষ্যে আমরা কয়েকটি মিটিং করেছি। কাঠামো  সংশোধন হয়ে গেলে আমাদের আর জনবল সংকট থাকবে না।

বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬-এর ১০০ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো প্রাপ্তবয়স্ক শ্রমিক কোনো প্রতিষ্ঠানে সাধারণত দৈনিক আট ঘণ্টার বেশি সময় কাজ করবেন না বা তাকে দিয়ে কাজ করানো যাবে না। এই আইনের ১০৮ নম্বর ধারার ১ উপধারায় বলা আছে, যে ক্ষেত্রে কোনো শ্রমিক কোনো প্রতিষ্ঠানে কোনো দিন বা সপ্তাহে এই আইনের অধীন নির্দিষ্ট সময়ের অতিরিক্ত কাজ করেন, সেক্ষেত্রে তিনি কাজের জন্য মূল মজুরি ও মহার্ঘ্য ভাতা এবং এডহক বা অন্তরবর্তী মজুরির, যদি থাকে, সাধারণ হারের দ্বিগুণ হারে ভাতা পাবেন।’

এসআর/জেডএস