রাজধানীর বাস, লঞ্চ টার্মিনাল ও রেলওয়ে স্টেশনে চলছে শেষ সময়ের ঈদযাত্রা। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিটযুদ্ধে যারা বিজয়ী হয়েছেন, তারাই সড়ক, নদী ও রেলপথে বাড়ি যাচ্ছেন। অনেকে ঝুঁকি নিয়ে ট্রেন কিংবা বাসের ছাদে করেও ফিরছেন বাড়ি। 

তবে এর বাইরেও অনেকে আবার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঈদযাত্রায় রওনা হয়েছেন মোটরসাইকেলে করে। নাড়ির টানে তারা দীর্ঘ ৩০০-৩৫০ কিলোমিটারের ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা পাড়ি দিচ্ছেন। এদের অনেকে একাই যাচ্ছেন। আবার অনেকে সঙ্গী হিসেবে বন্ধু কিংবা পরিজন নিয়ে যাচ্ছেন। 

ঝুঁকিপূর্ণ এ ঈদযাত্রায় যারা শামিল হচ্ছেন, তাদের প্রায় সবাই তরুণ। বাস ও ট্রেনে টিকিট না পেয়ে শেষ মুহূর্তের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারা মোটরসাইকেলে করে বাড়ি যাচ্ছেন। রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের তরুণদের পাশাপাশি দক্ষিণাঞ্চলের অনেকেই যাচ্ছেন মোটরসাইকেলে। ওই অঞ্চল থেকে আসছেনও মোটরসাইকেলে করে।  

তবে উত্তরের দুই বিভাগের যাত্রীদের সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়তে হয়েছে ট্রেন ও বাসের টিকিটের জন্য। এ ছাড়া গণপরিবহনে এই দুই বিভাগের যাত্রীদেরই বেশি ভোগান্তি পোহাতে হয়। অনেকে আবার টিকিটের বাড়তি দামের কারণে কিনতে পারেননি। তাই শেষমেষ বাধ্য হয়ে মোটরসাইকেল নিয়েই গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।

শনিবার (৩০ এপ্রিল) ও রোববার ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী সড়কে মোটরসাইলযাত্রীদের আধিক্য দেখা গেছে। বাংলা‌দেশ সেতু কর্তৃপক্ষের বঙ্গবন্ধু সেতু সাইট অফি‌সের এক তথ্য অনুযায়ী, শনিবার এ সেতু‌ দিয়ে স‌র্বোচ্চ প‌রিমা‌ণ মোটরসাইকেল পারাপারের রেকর্ড সৃ‌ষ্টি হয়ে‌ছে। সেতুর পূর্ব ও প‌শ্চিমপাড়া টোলপ্লাজা দি‌য়ে প্রায় আট হাজার মোটরসাইকেল পারাপার হ‌য়ে‌ছে। এদের অধিকাংশই বাস ও ট্রেনের টিকিট না পাওয়া যাত্রী।

রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন কুড়িগ্রামের বাসিন্দা তামজিদ হাসান তুরাগ। ১২ ঘণ্টায় ৩৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ পথ মোটরসাইকেল চালিয়ে নিজ জেলায় পৌঁছান তিনি। শত চেষ্টা করেও বাস ও ট্রেনের টিকিট না পেয়ে ঝুঁকি নিয়ে তিনি মোটরসাইকেলে করে নিজ বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন বলে জানান তামজিদ।

কুড়িগ্রাম থেকে মোবাইল ফোনে তামজিদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঈদের সময় টিকিটের সংকট ও  বেশি দামের কারণে আমার মতো অনেকেই টিকিট কিনতে পারেনি। এছাড়া ঈদযাত্রায় উত্তরবঙ্গের সড়কে ভয়াবহ যানজট থাকে। ২৫-৩০ ঘণ্টাতেও বাড়ি পৌঁছানো যায় না। এজন্যই মোটরসাইকেলে ঈদযাত্রা। মোটরসাইকেলে রওনা হলে যানজটে রাস্তায় বসে থাকতে হয় না। অলিগলি দিয়ে বের হওয়া যায়।

মোটরসাইকেলে ঝুঁকির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ঝুঁকি নিয়ে এসেছি সেটা জানি। যদি টিকিট পাওয়া যেতো, রাস্তাঘাট যদি ভালো থাকত এবং যানজট না থাকত, তাহলে তো মোটরসাইকেলে করে আসতে হতো না। ঈদে তো বাড়িতে আসতেই হয়।

রাজধানীর পরীবাগ থেকে মো. সুমন ও মো. শাওন নামে দুই বন্ধু রোববার সকালে নওগাঁর উদ্দেশে রওনা হন মোটরসাইকেল করে। তারা জানান, ১০ দিন আগেই স্ত্রী ও সন্তানদের গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। তাদের অফিস ছুটি আজ থেকে। টিকিটের জন্য অনেক চেষ্টা করেও পাননি। যদিও সুমন একটি বাসের টিকিট পেয়েছিলেন যা স্বাভাবিক দামের থেকে কয়েকগুণ বেশি। তাই তিনি আর কেনেননি।

তারা আরও জানান, ঝুঁকিপূর্ণ জেনেই তারা মোটরসাইকেলে করে রওনা হয়েছেন। এছাড়া তাদের কাছে আর কোনো উপায় নেই। বাড়িতে অবশ্য জানাননি মোটরসাইকেল করে যাচ্ছেন, তাহলে পরিবারের লোকজন টেনশন করবেন।

শাওন বলেন, হাজার চেষ্টা করছি টিকিটের জন্য, কিন্তু কোনো লাভ নেই। আর পরিবার রেখে ঢাকায় তো ঈদ করা যাবে না। নিজ বাড়ি ছাড়া ঈদের আনন্দ মাটি। তাই দুই বন্ধু মিলে সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়ে মোটরসাইকেল করে রওনা হলাম।

এদিকে, শনিবার ভোর থেকে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে মোটরসাইকেলের দীর্ঘ সারি দেখা যায়। ঘাট থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে একের পর এক ফেরি ছেড়ে যায়। তবুও যেন কমে না সারির দৈর্ঘ্য। ঘাটে কথা হয় যশোরগামী যাত্রী মো. মামুনের সঙ্গে। তিনি জানান, কয়েক ঘণ্টা ধরে তিনি মোটরসাইকেল নিয়ে সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে ছিলেন ফেরিতে ওঠার জন্য। 

এমএসি/আরএইচ