ঈদে তাদের দায়িত্ব বেশি আনন্দ কম
ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। ঈদ মানে পরিবার আর প্রিয়জনদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়া। খুশির এ ঈদ উদযাপন করতে অনেকে গেছেন গ্রামে-গঞ্জে। পরিবার, আত্মীয় স্বজন আর বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে তারা মেতেছেন ঈদ আনন্দে। তবে অনেকে সেই আনন্দে যোগ দিতে পারেননি। দায়িত্বের খাতিরে তারা রয়ে গেছেন রাজধানীতে। পাহারা দিচ্ছেন অন্যের ব্যক্তিগত ও সরকারি সম্পত্তি।
ঈদের দিন মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব ছেড়ে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়েই ঈদ উদযাপন করছেন প্রহরীরা। ঈদের দিনটি তাদের জন্য অন্য দিনগুলোর মতোই কর্মমুখর। পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব সবাই যখন ঈদের খুশি ভাগাভাগিতে ব্যস্ত, পেশাগত কারণে তারা দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন বিরতিহীনভাবে।
বিজ্ঞাপন
রাজধানীর মতিঝিল দিলকুশায় বাংলাদেশ কমার্শিয়াল ব্যাংকের সামনে নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন একদিল ভূঁইয়া। অন্য দিনগুলোর মতো সকাল ৬টায় কাজে যোগ দিয়েছেন তিনি। দায়িত্ব পালন করবেন টানা ১৬ ঘণ্টা। একদিল ভূঁইয়া বলেন, ব্যাংকের নিরাপত্তার জন্য আমাদের বাধ্যতামূলক দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। ঈদের সময় ব্যাংক বন্ধ। রাস্তাঘাট ফাঁকা, টাকা পয়সার বিষয়, যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে; এজন্য ডিউটিতে আছি। সকাল ৬টায় এসেছি, রাত ১০টা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করতে হবে।
পরিবার-পরিজন ছেড়ে ঈদের দিনটি কেমন যাচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু করার নেই, চাকরি যেহেতু করি ডিউটি করতেই হবে। সকালে ফোনে ছেলে মেয়েদের সঙ্গে কথা বলেছি। সবাই ভালোই আছে। ঈদের আগে সবার জন্য জামা কাপড় ও কেনাকাটার জন্য টাকা পাঠিয়েছি। তারা ভালো আছে। আমিও ভালো আছি, আলহামদুলিল্লাহ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান ফটকে দায়িত্ব পালন করছেন নিরাপত্তাকর্মী শহিদুল। ঈদের দিনে ডিউটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যেহেতু চাকরি তাই দায়িত্ব পালন করতেই হবে। এই চাকরির টাকা দিয়েই আমার ফ্যামিলি চালাই। তাই আগে চাকরি ঠিক রাখতে হবে। ঈদের দিন পরিবার রেখে এসে ডিউটি করা একটু তো খারাপ লাগেই। কিন্তু তারপরও কিছু করার নেই। সবাই তো আর ছুটিতে গেলে হবে না। আমি না থাকি, কাউকে তো থাকতে হবে। এটা ভেবে নিয়েই ডিউটি করছি।
মতিঝিল পূবালী ব্যাংকের বুথের সামনে দায়িত্ব পালন করছিলেন হানিফ ও নাছির নামে দুই নিরাপত্তাকর্মী। বুথের সামনে গিয়ে দেখা যায় নাছির মোবাইল ফোনে কথা বলছেন। ফোনের এ প্রান্ত থেকে তিনি বলছেন, ‘সেমাই খাইছো? আমি সেমাই খাইছি, ঢাকায় বৃষ্টি হচ্ছে; ভালো আছি, এই তো বইসা আছি। শনিবার বাড়ি আসব ইনশাআল্লাহ চিন্তা কইরো না। ভালোই আছি, রাখি, ভালো থাইকো।’
পরে জানা গেলো, নাছির কথা বলছিলেন গ্রামে থাকা তার মা, ছোট ছেলে আর স্ত্রীর সঙ্গে।
নাছির বলেন, গ্রামে থাকা পরিবারের সঙ্গে ফোনে খোঁজ-খবর নিচ্ছি। তারা সবাই ভালোই আছে। ব্যাংক ও বুথের নিরাপত্তার জন্য ঈদের আগের দিন থেকে টানা ছয় দিন দায়িত্ব পালন করব। এখন আমরা দুইজন ডিউটিতে আছি। ১২ ঘণ্টা করে দুই শিফটে চার জন ডিউটি করি। দুজন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত, বাকি দুই জন রাতে।
বেসরকারি সিকিউরিটি প্রতিষ্ঠান আইএসএসএলের পরিদর্শনের দায়িত্বে থাকা ফারুকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, যেহেতু আমাদের কর্মীদের কাজ প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা দেওয়া। ২৪ ঘণ্টাই আমাদের সেবা দিতে হয়। ঈদ, উৎসব কিংবা দুর্যোগ যাই হোক না কেন, সেবা বন্ধ করা যাবে না। তাই ইচ্ছা করলেও সবার এক সঙ্গে ছুটি দেওয়া যায় না। আমরা রোস্টারিং করে ঈদের ছুটি দিই। এ ঈদে যাদের ছুটি দিয়েছি আগামী ঈদে তারা ডিউটি পালন করবেন।
তিনি বলেন, ঈদের ডিউটি যারা পালন করেন কোম্পানির পক্ষ থেকে তাদের কিছু বাড়তি সুবিধা দেওয়া হয়। তাদের সবার জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঈদের ডিউটি হিসেবে বাড়তি টাকাও পাবেন। বড় কর্মকর্তারা তাদের সেলামিও দিচ্ছেন। তাই পরিবার পরিজনদের ছেড়ে ঈদ করতে কষ্ট হলেও এসব বাড়তি সুবিধা পেয়ে অনেকে খুশিও হন। এছাড়া এখন ইন্টারনেটের যুগ। অনেকে ভিডিও কলে গ্রামে থাকা ছেলে মেয়েদের সঙ্গে কথা বলছেন। তারপরও পরিবার রেখে ঈদ করাটা কষ্টের। কিন্তু কিছুই করার নেই। তাদের ক্ষেত্রে ঈদে দায়িত্বটাই বেশি, আনন্দটা একটু কম।
ব্যাংক বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মতো রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বাসা-বাড়ির নিরাপত্তার দায়িত্বও পালন করছেন অনেক কর্মী। তাদের আমরা ‘দারোয়ান’ নামে চিনি।
রাজধানীর পূর্ব বাসাবোর ‘মা ভিলা’য় দায়িত্ব পালন করছেন কবির খান। ঈদ কেমন কাটছে জানতে চাইলে একটু হেসে তিনি বলেন, ভালোই কাটছে। সকালে সেমাই খেলাম। একজন খিচুরি গোস্ত দিয়ে গেছেন। দুই স্যার ঈদের বকশিশ দিছেন।
পরিবার কোথায়- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওরা গ্রামে। ওখানেই ঈদ করছে। আমি যেতে পারিনি। কারণ আমরা এখানে দুইজন কাজ করি। দুইজন তো এক সঙ্গে যাওয়া যাবে না। এবার আমার সহকর্মী রজন গ্রামে গেছে ঈদ করতে। আমি কোরবানিতে গ্রামে ঈদ করব। এখানে চার বছর চাকরি করছি। এভাবেই আমাদের ঈদ করতে হয়।
ঈদের দিন সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) দায়িত্ব পালন করছিলেন আব্দুল শুকুর।
তিনি জানান তার মেয়ে ও মেয়ের জামাই বিদেশে থাকেন। ফোনে তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। ঈদের দিন দায়িত্ব পালনে তার কোনো সমস্যা নেই।
তিনি বলেন, ঈদে সবাই ছুটিতে গেলে এ জায়গার নিরাপত্তায় থাকবে কে? এখানে যারা কাজ করে তাদের মধ্যে তিনজন ছাড়া বাকিরা ছুটিতে বাড়ি গেছেন। আমি সকাল থেকে আছি। ৮ ঘণ্টা করে আমরা তিনজন ডিউটি করছি।
এসআই/এসকেডি/জেএস