ইট-পাথরের আর কংক্রিটের এ শহরে বুক ভরে শ্বাস নেওয়ার জায়গা অনেক কম। এ ব্যস্ত নাগরিক জীবনে কিছুটা স্বস্তি পেতে সবসময় উপলক্ষ খুঁজে বেড়ায় নগরবাসী। তেমনি একই উপলক্ষ ঈদুল ফিতর। প্রত্যেক বছরের মতো ব্যতিক্রম হয়নি এবারও। ঈদের দ্বিতীয় দিন হাতিরঝিলসহ রাজধানীর বিভিন্ন বিনোদন স্পটে ভিড় করেছেন নগরবাসী। 

চারপাশে গাছপালা, বসার সুব্যবস্থা, আলোকসজ্জা, পানির নৃত্যসহ নিরিবিলি বসে একটু সময় কাটানোর জন্য রাজধানীবাসীর কাছে হাতিরঝিল বেশ জনপ্রিয়। তাই ঈদের পর দিন বিনোদনপ্রেমীদের পদচারণায় মুখরিত এ বিনোদন কেন্দ্রটি।

এখানে কেউ এসেছেন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে, কেউবা আপনজন, বন্ধুদের নিয়ে। গত দুই বছর করোনার বিধিনিষেধের কারণে অনেকটাই সাদামাটা ঈদ কাটিয়েছে রাজধানীবাসী। কিন্তু এবার আর সেই পরিস্থিতি নেই, ফলে ঈদের দ্বিতীয় দিন সন্ধ্যায় মানুষের ঢল নেমেছে হাতিরঝিলে।

রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে পরিবার নিয়ে হাতিরঝিল ঘুরতে এসেছেন ফরহাদ হোসেন নামে একজন। তিনি বলেন, এবার বিশেষ কাজের জন্য ঈদে বাড়িতে যেতে পারিনি। গতকাল ঈদের দিন বাসায় আত্মীয়, বন্ধু-বান্ধব এসেছিল, তাই বের হতে পারিনি। আজ ফ্রি হয়ে সন্ধ্যায় ছেলে-মেয়ে, স্ত্রীসহ হাতিরঝিল ঘুরতে এসেছি। ঘুরতে এসে দেখছি হাতিরঝিলে প্রচণ্ড ভিড়, যেহেতু রাজধানীতে বিনোদন স্পটের সংখ্যা অনেক কম তাই নির্দিষ্ট জায়গাগুলোতে ভিড় হবে এটাই স্বাভাবিক।

রেবেকা সুলতানা তার দুই মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন হাতিরঝিল লেক পাড়ে। সেখানে মেয়েদের বেলুন কিনে দিতে দিতে বলেন, ঈদের সময় বাচ্চাদের নিয়ে ঘুরতেই এসেছি। তারা দৌড়াচ্ছে খেলছে, হাসছে এটাই আনন্দ। সব সময় শহর জীবনে চার দেয়ালের মধ্যে তাদের সময় কাটে। ঈদের সময় বায়না ধরেছে ঘুরতে যাবে, গতকাল যেহেতু ঈদের ব্যস্ততা ছিল তাই বের হইনি। হাতিরঝিলে মানুষের প্রচণ্ড ভিড়।

এদিকে দর্শনার্থীদের ব্যাপক উপস্থিতিতে হাতিরঝিলজুড়ে হকার, অস্থায়ী দোকান, ফেরিওয়ালার সংখ্যা বেড়েছে। তারা বেলুন, বাঁশি, বাচ্চাদের খেলনাসহ, নানা পদের খাবার বিক্রি করছে। বেলুন বিক্রেতা রমজান আলী বলেন, আমি অন্যান্য দিনও হাতিরঝিলে বেলুন বিক্রি করি। তবে আজ বিক্রি বেড়েছে অনেক। বলতে গেলে সবাই আজ কিনছে। সেই সুযোগে আজ প্রচুর পরিমাণে হকার, ফেরিওয়ালাদেরও আগমন ঘটেছে হাতিরঝিলে।

অন্যদিকে হাতিরঝিলের দর্শনার্থীদের পাশাপাশি ঝিলের ওয়াটার ট্যাক্সিগুলোতে বিনোদনপ্রেমীদের উপস্থিতি বেড়েছে। কারণ পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে হাতিরঝিলের ওয়াটার ট্যাক্সিতে যাত্রী পারাপার তিন দিনের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। গতকাল থেকে আগামীকাল পর্যন্ত এ তিন ওয়াটার-ট্যাক্সিতে শুধু মাত্র আনন্দ ভ্রমণ প্যাকেজে চালু রাখা হয়েছে। এখানে প্রতি ঘণ্টার জন্য আনন্দ ভ্রমণ প্যাকেজের টিকিট মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৮০ টাকা।

হাতিরঝিলে ওয়াটার ট্যাক্সিতে ঘুরা শেষে ঘাটে নেমেছেন আনোয়ার হোসেনের দুই ছেলে, ভাগ্নি আর স্ত্রী। এসময় কথা হয় আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, সচরাচর ওয়াটার ট্যাক্সিতে যাত্রী পারাপার করা হয়। কিন্তু আজ ঈদ আনন্দ ভ্রমণের প্যাকেজ তারা চালু করে করেছে। বাচ্চার ওয়াটার ট্যাক্সিতে চড়ে খুব মজা পেয়েছে, সঙ্গে আমরাও ঘুরলাম। তবে ভাড়াটা জন প্রতি ৮০ টাকা এটা একটু বেশি হয়ে গেছে।

এএসএস/এসকেডি