২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করতে চায় সরকার। এ লক্ষ্য অর্জনে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন বলে মনে করছে তামাকবিরোধী সংগঠনগুলো। এ লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি প্রস্তাবও দিয়েছে তারা। সেগুলো আমলে নিয়ে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সংশোধিত আইনের বাস্তবায়নের ফলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

তামাকের ধোঁয়ায় ৭ হাজারের বেশি ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এর গবেষণা অনুযায়ী, তামাকের ধোঁয়ার মধ্যে সাত হাজারের বেশি ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে। এর মধ্যে ৭০টি মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য দায়ী। তামাকের মধ্যে নিকোটিন নামে একটি মারাত্মক নেশা সৃষ্টিকারী রাসায়নিক রয়েছে। নিকোটিনের প্রভাবে একজন ধূমপায়ী বা তামাকসেবনকারী ক্রমশ নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েন।

ইউএস সার্জন জেনারেল প্রতিবেদনসহ একাধিক গবেষণায় বলা হয়েছে, ‘আসক্তি সৃষ্টির দিক থেকে তামাকের নিকোটিন হিরোইন, কোকেইন ও এলকোহলের মতোই শক্তিশালী।’

প্রতি বছর ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষের মৃত্যু 

আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটি ও ভাইটাল স্ট্রাটেজিস এর বৈশ্বিক গবেষণা প্রতিবেদন টোব্যাকো এটলাস ২০১৮ অনুযায়ী, তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রতি বছর এক লাখ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়। ধূমপানের কারণে বাংলাদেশে ১২ লাখের বেশি মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হন। এর মধ্যে ৩ লাখ ৮২ হাজার মানুষ অকাল পঙ্গুত্বের শিকার হন। তামাকজনিত রোগব্যাধি ও অকাল মৃত্যুর কারণে বাংলাদেশে প্রতি বছর ৩০ হাজার ৫৭০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়।

পরোক্ষ ধূমপানের শিকার শিশুরা 

তামাক ব্যবহারের কারণে ২০১৮ সালে বাংলাদেশে প্রায় ১ লাখ ২৬ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটেছে, যা ওই বছরের মোট মৃত্যুর ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ। একই বছরে প্রায় ১৫ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহারজনিত রোগে ভুগেছে এবং প্রায় ৬২ হাজার শিশু পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়ে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছে

বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির এক গবেষণার তথ্যানুযায়ী, তামাক ব্যবহারের কারণে ২০১৮ সালে বাংলাদেশে প্রায় ১ লাখ ২৬ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটেছে, যা ওই বছরের মোট মৃত্যুর ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ। একই বছরে প্রায় ১৫ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহারজনিত রোগে ভুগেছে এবং প্রায় ৬২ হাজার শিশু পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়ে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। 

গবেষণার তথ্যমতে, তামাক ব্যবহারের কারণে আক্রান্ত রোগীদের পেছনে স্বাস্থ্যখাতে মোট ব্যয়ের পরিমাণ ছিল প্রায় ৮ হাজার ৪শ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৭৬ শতাংশ খরচ বহন করেছে ব্যবহারকারীর পরিবার, আর ২৪ শতাংশ মেটানো হয়েছে জনস্বাস্থ্যের বাজেট থেকে। তামাক ব্যবহারজনিত অসুস্থতা ও এর কারণে অকালমৃত্যুর ফলে বার্ষিক উৎপাদনশীলতা হ্রাস পায় প্রায় ২২ হাজার ২শ কোটি টাকা। ফলে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতি ছিল ৩০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা।

তামাক নিয়ন্ত্রণে আইন 

ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের জন্য ২০০৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোবাকো কন্ট্রোলে স্বাক্ষর করে এবং পরের বছর (২০০৪ সাল) তা অনুসমর্থন করে বাংলাদেশ। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৫ সালে ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫’ করা হয়। পরে ২০১৩ সালে আইনটি সংশোধন করা হয়। 

এ আইনের উল্লেখযোগ্য দিকগুলো হলো— পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপান নিষিদ্ধ করা, তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা নিষিদ্ধ করা, তামাক কোম্পানির পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ন্ত্রণ, অপ্রাপ্তবয়স্কদের মাধ্যমে এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের কাছে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা এবং তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা মুদ্রণ নিশ্চিত করা। 

গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে ২০০৯ ও ২০১৭ —এর তথ্যানুযায়ী, ২০০৯ সালের চেয়ে ২০১৭ সালে বাংলাদেশে তামাক ব্যবহার তুলনামূলকভাবে ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে। ধূমপান ব্যবহার তুলনামূলক কমেছে ২২ শতাংশ এবং ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার তুলনামূলক কমেছে ২৪ শতাংশ। 

গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে ২০০৯ ও ২০১৭ —এর তথ্যানুযায়ী, ২০০৯ সালের চেয়ে ২০১৭ সালে বাংলাদেশে তামাক ব্যবহার তুলনামূলকভাবে ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে। ধূমপান ব্যবহার তুলনামূলক কমেছে ২২ শতাংশ এবং ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার তুলনামূলক কমেছে ২৪ শতাংশ। 

এ সময়ে তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৩৫ লাখ কমেছে। এ সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন পাবলিক প্লেসে পরোক্ষ ধূমপানও কমেছে। রেস্তোরাঁয় ৩০, কর্মক্ষেত্রে ১৯, হাসপাতালে ১১ এবং গণপরিবহনে প্রায় ১৯ শতাংশ কমেছে। 

আইনে দুর্বলতা ও ঘাটতি

তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার কমার প্রবণতায় স্বস্তির সুযোগ নেই বলে মনে করছেন তামাক বিরোধী সংগঠকসহ সংশ্লিষ্টরা। কারণ হিসেবে তারা বলছেন,  দেশে এখনো বিশাল একটি শ্রেণির মানুষ তামাক ব্যবহার করছে। তাদের তামাক ব্যবহার থেকে ফিরিয়ে আনতে আরও শক্তিশালী আইনের প্রয়োজন। সময়ের ব্যবধানে নতুন অনেক বিষয় উঠে আসে। যা পুরোনো আইন দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। বর্তমান আইনে অনেক দুর্বলতা ও ঘাটতি রয়ে গেছে। 

>>সম্পূর্ণরূপে ধূমপানমুক্ত ইস্যুতে বাধা নির্দিষ্ট স্থান
ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনে পাবলিক প্লেস (উম্মুক্ত স্থান) ও গণপরিবহনে শর্তাধীনে ধূমপানের নির্দিষ্ট স্থান রাখার সুযোগ রাখা হয়েছে। এ আইনের ৭ ধারায় বলা হয়, কোনো পাবলিক প্লেস বা পাবলিক পরিবহনের মালিক, তত্ত্বাবধায়ক বা নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তি বা ব্যবস্থাপক সেখানে ধূমপানের জন্য স্থান চিহ্নিত বা নির্দিষ্ট করে দিতে পারবেন। 

তবে ধূমপানের স্থানের সীমানা, বর্ণনা, সরঞ্জাম এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিধি দ্বারা নির্ধারিত হবে বলেও আইনে বলা আছে। 

এ প্রসঙ্গে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালায় বলা হয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গ্রন্থাগার, হাসপাতাল, ক্লিনিক ভবন, প্রেক্ষাগৃহ, প্রদর্শনী কেন্দ্র, থিয়েটার হল, চতুর্দিকে দেয়াল দিয়ে আবদ্ধ থাকা এক কক্ষবিশিষ্ট রেস্টুরেন্ট,  শিশুপার্ক, খেলাধুলা ও অনুশীলনের জন্য নির্ধারিত আচ্ছাদিত স্থান এবং এক কামরাবিশিষ্ট পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য কোন স্থান চিহ্নিত বা নির্দিষ্ট করা যাবে না। 

তবে পাবলিক প্লেস কোন ভবন হলে ভবনের যথাসম্ভব কোন উম্মুক্ত স্থানকে ধূমপানের জন্য চিহ্নিত বা নির্দিষ্ট করা যেতে পারে বলেও বিধিমালায় বলা হয়। এতে আরও বলা হয়, একাধিক কামরাবিশিষ্ট পাবলিক পরিবহন যেমন রেলগাড়ি, স্টিমার, লঞ্চ, ফেরি ইত্যাদি হলে ধূমপানের জন্য আলাদা একটি স্থান নির্দিষ্ট করা যাবে।

এর ফলে উম্মুক্ত স্থানে সম্পূর্ণরূপে ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। এজন্য আইন সংশোধন করে পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে সম্পূর্ণরূপে ধূমপান নিষিদ্ধের দাবি উঠেছে। 

>>বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্যের অঘোষিত বিজ্ঞাপন
আইনের ৫ ধারা অনুযায়ী, তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রচার নিষিদ্ধ। তবে বিক্রয়কেন্দ্রে প্রদর্শনী নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে আইনে স্পষ্ট করে কিছু বলা নেই। আইনের এ দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শনের মাধ্যমে চলে অঘোষিত বিজ্ঞাপন।

এক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোকে দায়ী করে আসছে তামাক বিরোধী সংগঠনগুলো। তাদের মতে, বাংলাদেশে বর্তমান মোট জনগোষ্ঠীর ৪৯ শতাংশই তরুণ। কোম্পানিগুলোর মূল টার্গেট কীভাবে এই বিশাল তরুণসমাজকে তামাকে আসক্ত করে ব্যবসা বাড়ানো যায়। 

বেসরকারি উন্নয়ন গবেষণা সংগঠন ভয়েসেস ফর ইন্টারেক্টিভ চয়েস অ্যান্ড এমপাওয়ারমেন্ট (ভয়েস) এর দুটি গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, তামাকপণ্যের বিজ্ঞাপন ও প্রচারের জন্য কোম্পানিগুলো বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে। বিক্রেতাদের আকর্ষণীয় উপহার সামগ্রী এবং দামি গিফট ভাউচার দিয়ে থাকে তারা। এছাড়াও বিক্রেতাদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য উদযাপনমূলক ডিনার এবং দেশে-বিদেশে বিনামূল্যে ভ্রমণের ব্যবস্থাও করা হয়।

টোব্যাকো অ্যাটলাস অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সীদের মধ্যে তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যা এক লাখ ৭২ হাজারের বেশি। অন্যদিকে, ইউএস সার্জন জেনারেলের প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, প্রায় ৯০ শতাংশ ধূমপায়ী ১৮ বছর বয়সের মধ্যে প্রথমবার ধূমপান করে। অল্প বয়সে তামাকপণ্যে আসক্ত হয়ে পড়লে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে এবং বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ফুসফুসের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়। 

পৃথিবীর ৫০টি দেশ ইতোমধ্যে বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ করেছে। এরমধ্যে নেপাল, পাকিস্তান, থাইল্যান্ডসহ বাংলাদেশের আশেপাশের অনেক দেশ রয়েছে।

>>তামাক নিয়ন্ত্রণে বাধা সিএসআর কার্যক্রম
তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা নিষিদ্ধ করা হলেও তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি বা সিএসআর কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়নি। এরফলে তামাক কোম্পানিগুলো সিএসআর কার্যক্রমের অজুহাতে নীতিপ্রণেতাদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগের মাধ্যমে সার্বিক তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করছে।

গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এ বিষয়ে একটি গবেষণা চালিয়েছে। ‘তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ সূচক, বাংলাদেশ ২০২১’ শীর্ষক এ গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, তামাক কোম্পানির অব্যাহত হস্তক্ষেপে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। সূচকে বাংলাদেশের প্রাপ্ত স্কোর ৭২। অথচ যা ২০২০ সালে ছিল ৬৮ স্কোর।  

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ বেড়েছে এবং আর্টিকেল ৫.৩ এর নির্দেশনাবলি বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতি হয়নি। কূটনৈতিক মাধ্যম ব্যবহার করে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ এবং প্রভাব বিস্তারের চেষ্টার বিষয়টি উঠে এসেছে। 

গবেষণার সুপারিশে তামাক কোম্পানির সিএসআর কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধসহ তামাকনিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে এফসিটিসির সঙ্গে আরও সামঞ্জস্যপূর্ণ করার তাগিদ দেওয়া হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) এর ১৩ ধারা অনুযায়ী, তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচিসহ তামাকের সব ধরনের বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা এবং পৃষ্ঠপোষকতা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

এখন পর্যন্ত ৬২ দেশ তামাক কোম্পানির সিএসআর কার্যক্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে।

>>খুচরা ও প্যাকেটবিহীন বিক্রিতে তরুণদের কাছে সহজলভ্য তামাক
বিশ্বের ১১৮টি দেশ সিগারেটের খুচরা শলাকা বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে। তবে বাংলাদেশে খুচরা শলাকা বিক্রিতে আইনগত বাধা নেই। আইনের এ দুর্বলতার কারণে শিশু-কিশোর ও তরুণরা কম দামে সহজে খুচরা শলাকা কিনতে পারছে। 

এছাড়া প্যাকেটবিহীন বিক্রি করার কারণে প্যাকেটের গায়ে যে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী থাকে, সেটাও দেখা যায় না। এজন্য বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা এবং প্যাকেটবিহীন জর্দা-গুল বিক্রয় নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে আসছে সংগঠনগুলো।

>>সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার মুদ্রণ যথেষ্ট নয়
দেশে সব তামাকজাত পণ্যের মোড়কে ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা মুদ্রণ বাধ্যতামূলক। আইনের ১০ ধারায় বলা হয়, তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট, মোড়ক, কার্টন বা কৌটার দুই পাশের শতকরা পঞ্চাশ ভাগ পরিমাণ স্থান জুড়ে তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহারের কারণে সৃষ্ট ক্ষতি সম্পর্কে রঙ্গিন ছবি ও লেখা সম্বলিত স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সতর্কবাণী বাংলায় মুদ্রণ করতে হবে। 

তবে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার এ আকারের দিক দিয়ে পাশবর্তী নেপাল, ভারত, থাইল্যান্ড এবং শ্রীলঙ্কার চেয়েও বাংলাদেশের অবস্থান পেছনে।

কানাডিয়ান ক্যান্সার সোসাইটির একটি প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, পৃথিবীর ১৫২টি দেশে তামাকপণ্যের মোড়কে স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা মুদ্রণ হচ্ছে। এরমধ্যে বাংলাদেশসহ ১০৫টি দেশ তামাকপণ্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণ বাধ্যতামূলক করেছে। নেপাল তামাকপণ্যের মোড়কের উভয় পাশের ৯০ শতাংশ জায়গাজুড়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী চালু করেছে। ভারত ও থাইল্যান্ড ৮৫ এবং শ্রীলঙ্কা ৮০ শতাংশ জায়গাজুড়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণ বাধ্যতামূলক করেছে।

>>সিগারেটের বিকল্প ই-সিগারেটও ক্ষতিকর
আইনে নিষিদ্ধ না হওয়ায় বাংলাদেশে ই-সিগারেট আমদানি ও বিপণন নিষিদ্ধ নয়। এ সুযোগে দেশের তরুণসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ সিগারেটের বিকল্প হিসেবে দিন দিন ই-সিগারেটে ঝুঁকছেন। 

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, মানুষের মস্তিষ্কের উন্নয়ন ২৫ বছর বয়স পর্যন্ত চলমান থাকে। ই-সিগারেট ব্যবহারের কারণে শিশু-কিশোরদের এটি ব্যাহত হয়। ই-সিগারেট একটি নেশা তৈরি করে। আর নেশাগ্রস্ত হলে একটি মানুষ অসামাজিক হয়ে যায়। যখন সে ই-সিগারেট না পায়, তখন সে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে, ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। তার আচার-ব্যবহারে পরিবর্তন আসে।

তিনি আরও বলেন, তামাকের মাধ্যমে যে ক্ষতিগুলো হয় তার প্রত্যেকটি ই-সিগারেটের মাধ্যমে হয়। এটি মানুষের জন্য যে ক্ষতিকর, সেটি চিহ্নিত করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আন্দোলন হচ্ছে। মেডিসিন ও মানসিক চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত সোসাইটিগুলো ই-সিগারেটের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।

প্রখ্যাত চিকিৎসক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ডা. প্রাণ গোপাল দত্তের মতে, ২০টি সিগারেটের সমান ক্ষতি করে একটি ই-সিগারেট। ই-সিগারেট ব্যবহারে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ও ফুসফুসের ক্ষতি হতে পারে। ই-সিগারেটে যে উপাদানগুলো পাওয়া যায়, সেগুলো শরীরের বিভিন্ন সেল বিকল করাসহ ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য দায়ী। 

জানা গেছে, ইতোমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা ভেবে এটি নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। ভারতেও ই-সিগারেট উৎপাদন, আমদানি ও বিক্রি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। কানাডাসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশেও ই-সিগারেট নিষিদ্ধ।

তামাকবিরোধী সংগঠকসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে ব্যাপক হারে ছড়ানোর আগে এখনই সরকারের উচিত ই-সিগারেট আমদানি, বাজারজাত ও বিপণন নিষিদ্ধ করা।

আইন শক্তিশালী করার তাগিদ

জনস্বাস্থ্যের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাউথ এশিয়ান স্পিকার্স সামিটের সমাপনী অধিবেশনে ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন। এ সময়ের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করতে হলে আইনে থাকা দুর্বলতা দূর করে যুগোপযোগী করতে হবে। এরপর তা বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মনে করছে তামাকবিরোধী সংগঠনগুলো। 

গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞার (প্রগতির জন্য জ্ঞান) নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২০০৫ সালে এ আইন করার পর ২০১৩ সালে সংশোধন করা হয়। তারপরও আইনে কিছু দুর্বলতা ও ঘাটতি রয়ে গেছে। সেই ঘাটতিগুলো যদি পূরণ না করা হয়, তাহলে আমরা যে ফল চাই, তা পাওয়া আসলেই কঠিন হয়ে পড়বে। 

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমরা তামাকবিরোধী সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রতি আইন সংশোধনের বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে তারা একটি খসড়া তৈরি করেছে। 

এবিএম জুবায়ের বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা বিক্রি নিষিদ্ধ। কিন্তু আমাদের দেশে এটি নিষিদ্ধ নয়। আমরা চাই খুচরা শলাকা বিক্রি বন্ধ হোক।

উদাহরণ  টেনে তিনি বলেন, একজন ছাত্রের হয়তো পকেট খরচ দিয়ে এক প্যাকেট সিগারেট কিনে ধূমপান করা সম্ভব না। সেজন্য ওই ছাত্র খুচরা শলাকা কিনে ধূমপান করছে। অথচ যদি খুচরা শলাকা বিক্রি নিষিদ্ধ থাকে, সেক্ষেত্রে তাকে ধূমপান থেকে বিরত রাখা যাবে। রাস্তাঘাটে যারা সিগারেট বিক্রি করে, তারা সিগারেটের বিভিন্ন প্যাকেট সুন্দরভাবে সাজিয়ে রাখে। ওটাকে বিজ্ঞাপনের মতো দেখা যায়। পথচারীদের চোখ সেখানে আটকে যায়। এজন্য আমরা এটিও বন্ধ চাই। 

প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক বলেন, সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে অসুস্থতার যে ছবি আছে, সেটির আয়তন পুরো প্যাকেটের ৫০ শতাংশ। পৃথিবীতে যেসব দেশ তামাক নিয়ন্ত্রণে ভালো করেছে, তারা ৯০ শতাংশ পর্যন্ত আয়তন রেখেছে। আমরাও চাই ৯০ শতাংশ যেন করা হয়, যাতে এটি অনেক ভালোভাবে দেখা যায় এবং মানুষ বুঝতে পারে। এরকম আমরা মোট ৬টি পয়েন্টের কথা বলেছি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তাদের খসড়ায় সেগুলো অন্তর্ভুক্ত করেছে। 

টোব্যাকো কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ সেলের সদস্য সচিব এবং ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক মো. বজলুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, একটা আইন করার পর অনেকগুলো বিষয় নতুন আসে। আগের আইনের মাধ্যমে হয়তো সবসময় সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। এজন্য আইনের সংশোধন দরকার হয়।

তিনি বলেন, তামাকমুক্ত দেশ গড়ার জন্য একটি রোডম্যাপ দরকার। এ রোডম্যাপের জন্য একটি বাস্তবায়ন পদ্ধতি দরকার। আইনে কিছু কিছু সাংঘর্ষিক বিষয় থাকাতে শতভাগ বাস্তবায়ন হচ্ছে না। সেই জায়গাগুলোই সংশোধন করতে হবে।  

মো. বজলুর রহমান বলেন, ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫’—যখন করা হয়েছিল তখন দেশে ই-সিগারেট আসেনি। এমনকি বিশ্বের কোথাও ই-সিগারেট ছিল না। যখন দেশের বাজারে ই-সিগারেট এল, তখন কিন্তু আইন এটিকে নিষিদ্ধ বলছে না। তার মানে আইনে পরিবর্তন আনতে হবে। এরকম অনেকগুলো বিষয় নিয়ে আমরা সংশোধনের দাবি তুলেছি। কোন-কোন বিষয়ে সংশোধনী দরকার, আমরা সে বিষয়ে প্রস্তাবনা দিয়েছি। ইতোমধ্যে খসড়া তৈরি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর রোডম্যাপ বাস্তবায়নের জন্য এ আইন সংশোধন দরকার। আমরা আশা করছি, ২০৪০ সালের মধ্যে দেশ তামাকমুক্ত হবে।

সংসদ সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হকের মতে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুনত্বের উদ্ভব হয়। নতুন নতুন চাহিদা ও সমস্যার বিষয়ও সামনে আসে। আগে তামাক কোম্পানিগুলো যেভাবে তাদের প্রচার-প্রচারণা চালাত, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারাও প্ল্যান-প্রোগ্রাম পরিবর্তন করছে। ফলে ২০০৫ সালের পর থেকে আইনের মাধ্যমে যেভাবে তামাকের ব্যবহার ধীরে ধীরে কমে আসতে শুরু করেছে, সেটির ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য এবং আগামী দিনগুলোতে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়নের জন্য তামাকের ব্যবহার কমিয়ে আনতে আইনের সংশোধন প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।

আইন বাস্তবায়নে জোর 

শুধু সংশোধন নয়, আইন বাস্তবায়নের প্রতিও জোর দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও জাতীয় তামাকবিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আইন একটি, কাজ অনেকগুলো। কারণ আইন সংশোধন করলেই যে বাস্তবায়ন হবে, তার নিশ্চয়তা নেই। তবে বাস্তবায়নটা খুবই জরুরি। 

তিনি বলেন, তামাকের দাম যতটা বাড়ানো হচ্ছে, তা যথেষ্ট নয়। কারণ সেবনকারীদের ওপর এর তেমন একটা প্রভাব পড়ে না। বাড়তি দামের জন্য তাদের পকেটে টান পড়ে না। এজন্য তামাকের দাম আরও অনেক বাড়াতে হবে। এছাড়া অনেকগুলো সুপারিশ আমাদের আছে। 

তিনি আরও বলেন, তামাক খাতে সরকার ২০-২২ হাজার কোটি টাকা ট্যাক্স পায়। কিন্তু হিসাব করে দেখা গেছে, ৩০-৩২ হাজার কোটি টাকা খরচ হয় স্বাস্থ্যসেবায়। অর্থাৎ একদিকে এলেও অন্যদিকে অনেক বেরিয়ে যাচ্ছে, এটা বিবেচনায় নেওয়া হয় না। 

জাতীয় তামাকবিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক বলেন, তামাক রপ্তানির ক্ষেত্রে যে ২৫ শতাংশ শুল্ক ছিল, এটা উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর মানে তামাক উৎপাদনে উৎসাহিত করা হচ্ছে। আমরা চাচ্ছি, তা আবার পুনরায় স্থাপন করতে, যাতে দেশে উৎপাদনে উৎসাহিত না হয়। নারীরা যেসব তামাক গ্রহণ করেন, সেগুলোরও দাম বাড়াতে হবে। পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মের মধ্যেও সচেতনতা বাড়াতে হবে। 

প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের বলেন, সংশোধনের পর আইনটি বাস্তবায়ন করা হলে ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জন করা সম্ভব।

এদিকে, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় অবিলম্বে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের দাবি জানিয়েছে অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স (আত্মা)। গত ১৬ মার্চ অনুষ্ঠিত এক সভা থেকে এ দাবি আসে।

সভায় আত্মার পক্ষ থেকে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনীতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য যেসব প্রস্তাব তুলে ধরা হয় সেগুলো হলো— ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করাসহ সব পাবলিক প্লেস, কর্মক্ষেত্র ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপান নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে শতভাগ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা; বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা; তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি বা সিএসআর কার্যক্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা; বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা এবং প্যাকেটবিহীন জর্দা-গুল বিক্রয় নিষিদ্ধ করা; ই-সিগারেট ও হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্টসহ (এইচটিপি) সব ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টস আমদানি ও বিক্রয় নিষিদ্ধ করা এবং সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার বৃদ্ধিসহ তামাকপণ্য মোড়কজাতকরণে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা।

গত ২০ মার্চ সন্ধ্যায় ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত ‘জনস্বাস্থ্য রক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণ : তরুণ চিকিৎসকদের প্রত্যাশা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায়ও আইন সংশোধনের দাবি ওঠে।

সভায় প্ল্যাটফর্ম অব মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল সোসাইটির সভাপতি ডা. নাজমুল আবেদীন নাসিব বলেন, বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে কিছু দুর্বলতা রয়েছে, যার ফলে আইনটি তামাকের ব্যবহার কমাতে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারছে না। বিশেষ করে পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহনকে শতভাগ তামাকমুক্ত করা অত্যন্ত জরুরি। এজন্য তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের ৭ ধারায় ‘ধূমপান এলাকা’ রাখার বিধান বাতিল করতে হবে। 

এছাড়া বিভিন্ন সময় প্রজ্ঞাসহ তামাকবিরোধী সংগঠনগুলো আইন সংশোধন করে দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে আসছে। 

যা বলছে কর্তৃপক্ষ

জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়ক ও স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব হোসেন আলী খন্দকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা তামাক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কাজ করছি। জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের পক্ষ থেকে আইন সংশোধনের কাজ শেষের দিকে। আমরা এটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পেশ করেছি। এখন তা মন্ত্রণালয়ে আছে।

তিনি আরও বলেন, আইনের বিভিন্ন দুর্বলতা সংশোধন হলে জনগণ উপকৃত হবে। সেজন্য কয়েকটি জায়গায় পরিবর্তন আনার চেষ্টা চলছে। এ বিষয়ে অনেকে পরামর্শ দিয়েছেন। জনগণ যাতে ধূমপানের ফলে অকালে মারা না যায়, আমরা সে চেষ্টায় আছি।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ঢাকা পোস্টকে বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে খসড়াও তৈরি করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন সংগঠনের প্রস্তাবনাকে আমলে নেওয়া হয়েছে। তামাকমুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে।

এসএইচআর/জেডএস/আরএইচ