আজ মা দিবস। ভেবেছিলাম বাচ্চার সঙ্গে বেশি সময় থাকব। ওকে সময় দেব। কিন্তু সে সুযোগ হয়ে ওঠেনি। সকাল থেকে অফিসে আছি। কখন বাসায় ফিরতে পারব জানি না।  

কথাগুলো বলছিলেন সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উম্মে হাবিবা ফারজানা। তার মতে, একজন নারী একইসঙ্গে স্ত্রী, মা এবং কর্মজীবী। মায়ের দায়িত্ব পালন এমনিতেই কঠিন কাজ। তার ওপর মা যদি হন কর্মজীবী, তাকে ঘরের পাশাপাশি সামলাতে হয় অতিরিক্ত দায়িত্ব।
 
উম্মে হাবিবা ফারজানা কাজ করছেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে। রোববার আন্তর্জাতিক মা দিবস। এ দিবসে তার কর্মময় জীবন, সংসার ও ব্যস্ততার খুঁটিনাটি বিষয়ে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ঢাকা পোস্টের নিজস্ব প্রতিবেদক আব্দুল্লাহ আল জোবায়ের।

ঢাকা পোস্ট: আপনার জন্ম কোথায়, কবে?
উম্মে হাবিবা ফারজানা: আমার জন্ম ১৯৯০ সালে বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার ইলুহার গ্রামে নানা বাড়িতে।

ঢাকা পোস্ট: ছোটবেলা থেকে কি হওয়ার স্বপ্ন ছিল?
উম্মে হাবিবা ফারজানা: ছোটবেলা থেকেই সবার কিছু না কিছু হওয়ার স্বপ্ন থাকে। আমারও ছিল। তবে নিখাঁদ গৃহিণী হব, এমন স্বপ্ন কখনও দেখতাম না। কিছু না কিছু করব এটাই ভাবতাম। মায়ের শাড়ি পরে সাজগোজ করে, বাবার চশমা পরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে মডেল ভাবতাম, আর ভাবতাম কোনো না কোনো পেশা আমার হবে, হোক সরকারি বা বেসরকারি।

ঢাকা পোস্ট: কোথায় পড়াশোনা করেছেন, এই পেশায় কীভাবে এলেন?
উম্মে হাবিবা ফারজানা: আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করেছি। অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়াশোনা অবস্থায় আমার বিয়ে হয়। জীবন যতটা সহজ ভাবতাম ততটা সহজ ছিল না। তবে পড়াশোনা চালিয়ে যাই। আমার স্বামী আমাকে সহযোগিতা করেছেন। মাস্টার্স পরীক্ষা চলার সময়ে আমি ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলাম। ক্যারিয়ার নিয়ে মনোযোগী হওয়ার সময়ে আমি সন্তান-সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম বেশি। বাচ্চার ৪ বছর বয়স যখন, নিজের জন্য কিছু করার কথা ভাবা শুরু করলাম। বন্ধুরা তখন চাকরি করছে বিভিন্ন পেশায়। আমি ৩৭তম বিসিএস এর ফরম পূরণ করে প্রিলিমিনারি, রিটেন, ভাইভা দেই এবং আল্লাহর অশেষ রহমতে প্রথমবারেই কৃতকার্য হই। এজন্য আমার পরিবারের সবার অবদান ও দোয়া অনেক বেশি।

ঢাকা পোস্ট: কাজের পাশাপাশি সন্তান ও সংসার কীভাবে সামলান?
উম্মে হাবিবা ফারজানা: কাজের পাশাপাশি সংসার দেখা, এটা আসলে মেয়েদেরকে করতেই হয়। মেয়েরা হচ্ছে সুপার উইমেন। বাবাদের যেমন কাজ থেকে ফিরে সংসার দেখাটা অপশনাল, কিন্তু মায়েদের এটা করতেই হয়। তাই মেয়েদের মানসিক সেটআপটা এমনই থাকে। তাই তারা সবকিছু সামলাতে পারে।

ঢাকা পোস্ট: সারাদিন কীভাবে কাটে?
উম্মে হাবিবা ফারজানা: সকালে ঘুম থেকে উঠে ঘরের কাজ গুছিয়ে নেই। এরপর বাচ্চাকে ঘুম থেকে তুলে স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরি করি। এরপর আমি অফিসে যাই। আমার বাসায় একটা মেয়ে আছে, সে আমার বাচ্চাকে স্কুলে নিয়ে যায়। সুযোগ পেলে দুপুরের খাবার বাচ্চার সঙ্গে খাই। কখনও আগে আসতে পারলে মেয়ের সঙ্গে ল্প করি। গল্পের মাধ্যমে ওকে শেখানোর চেষ্টা করি। তবে আমাদের প্রশাসন ও পুলিশ এই দুই ক্যাডারে রাতেও প্রোগ্রাম থাকে। যে কারণে খুব একটা সময় করতে পারি না। বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যায়।

ঢাকা পোস্ট: সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিনে কি করেন?
উম্মে হাবিবা ফারজানা: প্রশাসন ক্যাডার হওয়ার কারণে সময় পাওয়াটা খুব কঠিন। তাও ছুটির দিনগুলোতে বাচ্চাকে সময় দেই। গল্প করি, ড্রইং করি, বই পড়ি। সারাদিন ছুটি পেলে বাইরে ঘুরতে যাই, শপিং করি। এগুলো করেই সময় কাটে।

ঢাকা পোস্ট: কোনো কিছুতে পেশাগত জীবন বিঘ্নিত হয় কি না, পরিবারের অন্য সদস্যদের কেমন সহযোগিতা পান?
উম্মে হাবিবা ফারজানা: অনেক মেধাবী মেয়েকেই দেখেছি বিয়ের পরে স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ি কেউ বাধা না দিলেও কোনো এক বিশেষ কারণে সে আর পড়ালেখা বা ক্যারিয়ারের প্রতি আগ্রহ দেখায় না। আমি বলব মেয়েদের অবশ্যই আত্নবিশ্বাসী হওয়া উচিত। বিয়ে বা সন্তান হওয়াটা বাধা না। একটু মনযোগী হলেই, চেষ্টা করলেই সব সম্ভব। আমার এই যাত্রাপথে, আমার মা বাবা, আমার স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ি সবাই বিশেষভাবে সহযোগিতা করেছেন। তাই তাদের প্রতি আমি বিশেষ কৃতজ্ঞ।

ঢাকা পোস্ট: বিবাহিত পেশাজীবী নারী বা মায়েদের প্রতি আপনার কি বার্তা থাকবে?
উম্মে হাবিবা ফারজানা: আমরা মানুষ হিসেবে জন্মগ্রহণ করলেও আমাদের অনেক পরিচয় থাকে। আমরা কারো কন্যা, কারো স্ত্রী, কারো মা। অফিসে আমরা কারো বস, আবার কারো অধীনে কর্মরত। তো সবক্ষেত্রেই আমাদের প্রত্যেকটা পরিচয় সুচারুভাবে মেটাতে হবে। সবচেয়ে গর্বের পরিচয় আমি মনে করি, মা হিসেবে পরিচয়। এই মা পরিচয়টা নারীকে পূর্ণতা দেয়। যে সন্তানটাকে আমি পৃথিবীতে এনেছি, তাকে উপযোগী করে গড়ে দেওয়া আমারই দ্বায়িত্ব। সেটা কে কি করল, না করল কারো উপরে নির্ভরশীল মায়েরা হয় না। মায়েরা ঘরেও কাজ করে, বাইরেও কাজ করে। এভাবে করে নারীরা এগিয়ে যাবে।

ঢাকা পোস্ট: আপনাকে ধন্যবাদ।
উম্মে হাবিবা ফারজানা: ঢাকা পোস্টকেও ধন্যবাদ।

এএজে/জেডএস