ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) উদ্যোগে বগুড়া ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রদর্শিত হচ্ছে জনসচেতনতামূলক নাটক মুখোশ।

মঙ্গলবার (১০ মে) বিকেলে বগুড়ার সাত মাথায় মুজিব মঞ্চে নাটকটি মঞ্চস্থ হবে।

সিটিটিসি সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ পুলিশের সন্ত্রাস দমন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ প্রতিরোধ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের অর্থায়নে নাটকটিতে উগ্রবাদ, সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। নাটকটিতে দেখানো হয়েছে, কীভাবে, কোন পরিস্থিতিতে ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা গ্রহণ করে মানুষ উগ্রবাদের দিকে ধাবিত হয়।

উগ্রবাদের উস্কানিদাতা বা জঙ্গি রিক্রুটাররা বিভিন্ন সংগঠনের নাম ধারণ করে কীভাবে সমাজের মানুষদের আকৃষ্ট করে ভুল পথে নিয়ে বিপথগামী করে তোলে। এছাড়া একজন উগ্রবাদে বিশ্বাসী ব্যক্তির আচরণের মধ্যে কী কী পরিবর্তন ঘটে এবং উগ্রবাদে জড়িত হওয়ার ক্ষেত্রে কারা ঝুঁকিতে রয়েছে তা নাটকটিতে ফুটে উঠেছে। ধর্মের আংশিক ব্যাখ্যা বা ভুল ব্যাখ্যার বিপরীতে ধর্মের সঠিক ব্যাখ্যা, আচরণ এবং সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে করণীয় সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়েছে এতে।

এছাড়া পারস্পরিক যোগাযোগ ধারণার প্রয়োগ ঘটানো হয়েছে নাটকটিতে। এখানে উপস্থিত দর্শক নাটকের ঘটনার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হতে পারছেন, প্রদর্শনকালে গুরুত্বপূর্ণ মতামত দিয়ে নাটকের গতি বা গল্পের মোড় ঘুরিয়ে দিচ্ছেন। কখনো কখনো দর্শক মঞ্চে উঠে অভিনেতায় পরিণত হচ্ছেন। অভিনেতা ও দর্শকদের মধ্যে যৌথ মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে নাটকটির ঘটনা এগিয়ে যাচ্ছে। যার ফলে দর্শক নিজেকে নাটকের ঘটনার অংশ মনে করছেন। নাটকের মাধ্যমে দর্শক সরাসরি ঘটনায় যুক্ত হতে পারছেন বলে উপস্থিত দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের গবেষক ও সাবেক শিক্ষার্থীরা নাটকটির পরিবেশনায় যুক্ত আছেন। জায়েদ জুলহাসের রচনায় নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক ড. আহমেদুল কবির। প্রদর্শনী বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় যুক্ত আছেন আহসান খান। ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্র্যান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার খন্দকার আরাফাত লেনিন নাটকটির প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্র্যান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান, পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান, বিপিএম (বার) পুরো প্রক্রিয়ার সার্বিক নির্দেশক ও তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে আছেন।

নাটকটির প্রদর্শন সম্পর্কে সিটিটিসি প্রধান বলেন, শান্তি, সম্প্রীতি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশকে উগ্রবাদী কার্যক্রম করে অশান্ত করার কোনো সুযোগ নেই। কেউ যাতে উগ্রবাদী আচরণ ও কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে না পড়ে এবং দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার বিঘ্ন ঘটাতে না পারে সেই বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে এ নাটক প্রদর্শিত হচ্ছে।

তত্ত্বাবধায়ক সহযোগিতায় আছেন ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. মাহফুজুল ইসলাম এবং রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিটিটিসি) বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. হাবীবুর নবী আনিসুর রশিদ।

নাটকটিতে অভিনয় করেছেন— আবে হায়াত সৈকত, অপূর্ব গোমস্তা, রফিকুল ইসলাম সবুজ তালুকদার, মনিরুজ্জামান রিপন, রাগীব নাঈীম, দিগার কৌশিক, কামরুন্নাহার মুন্নি, দেবাশীষ কুমার, শুভ্র সরকার ও ইভানা মেঘলা।

বগুড়া জেলা পুলিশের সার্বিক সহযোগিতায় গত ৬ থেকে ১০ মে পর্যন্ত নাটকটি বগুড়ার বিভিন্ন স্থানে প্রদর্শিত হচ্ছে। এরপর ১১ থেকে ১৫ মে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে প্রদর্শিত হবে।

এ ব্যাপারে বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, উগ্রবাদ প্রতিরোধে সচেতনতা তৈরিতে মাঠ পর্যায়ে এ নাটকের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সারা দেশে ব্যাপক ভিত্তিতে এরকম প্রদর্শনী আয়োজনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

১১-১৫ মে চাঁপাইনবাবগঞ্জে নাটক প্রদর্শনীর স্থান ও সময়

১১ মে - ভোলাগঞ্জ, বিকেল ৪টা; ১২ মে - নাচোল, বিকেল ৪টা; ১৩ মে - গোমস্তাপুর, বিকেল ৪টা; ১৪ মে- শিবগঞ্জ, বিকেল ৪টা; ১৫ মে - চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর।

জেইউ/এসএসএইচ