সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীদের জন্য দুটি প্যাকেজ চূড়ান্ত করা হলেও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় একটি প্যাকেজের প্রস্তাব করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১২ মে) এ প্যাকেজ চূড়ান্ত করবে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)। এ বছর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় যে ৫৩ হাজার যাত্রী হজে যাবেন, পূর্ণাঙ্গ খরচ জানার জন্য তাদের আগামীকাল সকাল ১১টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। 

বুধবার (১১ মে) সচিবালয়ে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে হজ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নির্বাহী কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে সরকারি ব্যবস্থাপনায় দুটি হজ প্যাকেজ ঘোষণা করেন ধর্ম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক। 

প্রতিমন্ত্রী জানান, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীদের জন্য ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৫৩০ টাকার হজ প্যাকেজের প্রস্তাব করা হয়েছে।

পরে হাবের সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন সাংবাদিকদের বলেন, আজ সরকারি ব্যবস্থাপনার দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনার প্যাকেজ হাব নির্দিষ্ট করে। এ প্যাকেজটি আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) ঘোষণা হবে। 

তিনি বলেন, এ প্যাকেজের জন্য আজ শুধুমাত্র একটি বেসিক ব্যবস্থাপনা হয়েছে। আজ নির্বাহী কমিটিতে এটি অনুমোদিত হয়েছে যে, বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজ প্যাকেজ হাব ঘোষণা করবে এবং সেটা আমরা আগামীকাল শিডিউল করেছি, হাবের কার্যালয়ে সকাল ১১টায়। 

দুই বছর পর বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রী যাবেন জানিয়ে হাব সভাপতি বলেন, এ কারণে আমরাও খুবই আনন্দিত। অন্যান্য স্বাভাবিক সময়ে যে হজ হয়, সে হজে যেভাবে সময় নিয়ে হজযাত্রীদের পাঠানো যায়, কাজ করা যায়, এ বছর সেটা করা যাচ্ছে না। এজন্য কেউ দায়ী নয়। করোনার কারণে সৌদি সরকার দেরিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই আমাদেরও দেরিতে সেটি প্রকাশ করতে হয়েছে। 

তিনি বলেন, আজ যে প্যাকেজ হয়েছে, সে প্যাকেজ কিন্তু সৌদি অংশের পূর্ণাঙ্গ খরচের হিসাব প্রাপ্ত হয়ে ঘোষণা করা হয়নি। পূর্ণাঙ্গ খরচের জন্য আমরা অপেক্ষা করছি। আমরা অপেক্ষা করব কাল সকাল ৯টা পর্যন্ত। যদি আমরা সৌদি অংশের পূর্ণাঙ্গ খরচ পাই তাহলে কাল আমরা পূর্ণাঙ্গভাবে প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারব। নাহলে যে প্যাকেজ প্রস্তাব করা হয়েছে, সেখানে যদি ব্যয় বৃদ্ধি পায় তাহলে হজযাত্রীরা সে ব্যয়ের টাকা বহন করবেন।

হাব সভাপতি বলেন, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের অধিকাংশ হজযাত্রী হজে যান। এ বছর যাবেন ৫৩ হাজার ৫৮৫ জন। তারা কোন প্যাকেজে যাবেন, তাদের কী সেবা করা হবে এবং দাম কেমন হবে, তা আগামীকাল জানাব। তার আগে আমরা সৌদি অংশের খরচের হিসাবটি জানার চেষ্টা করব। 

প্রস্তাবিত প্যাকেজে খরচ বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে এম শাহাদাত হোসাইন বলেন, সৌদি অংশে কিছু খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। যেমন মোয়াল্লেম (যিনি হজের সময় প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন) সার্ভিসের খরচ দ্বিগুণ হয়েছে। তাছাড়াও সেখানে বাড়িভাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে। বাড়িভাড়া এখন সৌদি সরকার কাছাকাছি দূরত্বে যে বাড়িগুলো আছে, শুধু সেগুলোই অনুমোদন দিচ্ছে। হজযাত্রীর সংখ্যা কম থাকায় সেটার প্রভাবও খরচের ওপর পড়েছে। 

আবার দুই দেশের মুদ্রা মানের পার্থক্যের কারণেও প্যাকেজের দাম বেড়েছে বলে জানান হাব সভাপতি। তিনি বলেন, আগে ছিল ২২ টাকা ৩০ পয়সা (বাংলাদেশি টাকায় সৌদি আরবের রিয়াল) এখন এটা ২৪ টাকা ৩০ পয়সা হয়েছে। সবমিলিয়ে খরচ বেড়েছে। 

প্যাকেজের বিষয়ে কোনো আপত্তি জানিয়েছিলেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেহেতু সরকারি ব্যবস্থাপনার প্যাকেজ, সেহেতু সেখানে আমরা আমাদের কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছিলাম। এগুলো সংযুক্ত করা হয়েছে। আমরা গতকাল ধর্ম মন্ত্রণালয় এবং হাব মিলে কিছু কাজ করেছি। সেটারই প্রতিফলন হয়েছে আজ। 

আজ আমাদের প্রধান একটি দাবি ছিল, সেটা আপনাদের জানিয়ে রাখি; আপনারাও এ বিষয়ে প্রশ্ন করেছেন। সেটা ছিল ডেডিকেটেড ফ্লাইটে হজযাত্রী পাঠানোর বিষয়ে। আমরা বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য বলেছি। কারণ বাংলাদেশের হজযাত্রীদের সৌদি অংশের ইমিগ্রেশন বাংলাদেশে করতে হলে সৌদি সরকারের প্রথম শর্ত হলো ডেডিকেটেড ফ্লাইটে হজযাত্রী যেতে হবে। কোনো শিডিউল ফ্লাইটে হজযাত্রী পাঠালে তার ইমিগ্রেশন সৌদি সরকার এখানে করবে না।  

এম শাহাদাত হোসাইন বলেন, আমরা বলেছি বাংলাদেশে ইমিগ্রেশন করার বিষয়টি এয়ারলাইন্সগুলোকে নিশ্চিত করতে। কারণ প্রতি বছরই তাদের বলা হয়, ডেডিকেটেড ফ্লাইটের দাম দেওয়া হয় কিন্তু ডেডিকেটেড ফ্লাইট পরিচালনা করে না। তারা শিডিউল ফ্লাইটে অন্য যাত্রীদের সঙ্গে হজ যাত্রীদের নিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করে। আজ আমাদের প্রধান দাবি ছিল, যাতে বাংলাদেশে ইমিগ্রেশন করা যায় এবং ডেডিকেটেড ফ্লাইটে হজযাত্রী পরিবহন করা হয়। 

এ বিষয়ে আজ সিদ্ধান্ত হয়েছে, এয়ারলাইন্সগুলোকে অবশ্যই ডেডিকেটেড ফ্লাইটে হজযাত্রী পরিবহন করতে হবে। থ্রি ডিজিটের শিডিউল ফ্লাইটে কোনো হজযাত্রী তারা পরিবহন করা যাবে না। এটা সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে, বলেন  হাব সভাপতি। 

হজ যাত্রী পরিবহনে চলতি বছর এয়ারলাইন্স বাড়ানোর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি মনে করি শুধু একটা এয়ারলাইন্স নয়, আরও এয়ারলাইন্স এখানে সংযুক্ত হওয়া প্রয়োজন। তাহলে যাত্রীদের সেবা নিশ্চিত হবে। 

এসএইচআর/এসকেডি