সড়কে আচরণগত ৫ পরিবর্তনের ফলে দুর্ঘটনা হ্রাস সম্ভব বলে জানিয়েছে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন।

সোমবার (১৬ মে) দুপুরে রাজধানীর শ্যামলীতে অবস্থিত ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের কার্যালয়ে স্বাস্থ্য সেক্টরের সভাকক্ষে 'নিরাপদ সড়ক জোরদারকরণে গণমাধ্যমের ভূমিকা' শীর্ষক সভা থেকে সংস্থাটির পক্ষ থেকে এ কথা বলা হয়েছে।

সভার শুরুতে সংস্থাটির পক্ষ থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট অব রোড সেফটির ২০১৮ সালের একটি প্রতিবেদনের তথ্য উল্লেখ করে বলা হয়, প্রতিবছর বিশ্বে ১৩ লাখ ৫০ হাজার মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৫-২৯ বছর বয়সসীমার মানুষের মৃত্যর অন্যতম প্রধান কারণ সড়ক দুর্ঘটনা। আর এসব মৃত্যুর ৯০ শতাংশ নিম্ম ও মধ্যম আয়ের দেশে সংগঠিত হয়।

তবে সড়কে ৫টি মূল আচরণগত ঝুঁকির পরিবর্তন দুর্ঘটনা হ্রাসের সহায়ক হতে পারে বলে সংস্থাটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

সভার শুরুতে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের রোড সেফটি প্রকল্পের প্রকল্প সমন্বয়কারী শারমিন রহমান মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তার প্রবন্ধে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫টি রিস্ক ফ্যাক্টর তুলে ধরেন। যার মধ্যে অন্যতম গতি।

তিনি বলেন, দেখা যায় যতগুলো সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয় তার প্রায় সবগুলোর সঙ্গে অনিয়ন্ত্রিত/দ্রুতগতিতে মোটরযান চালানোর বিষয়টি সংম্পর্কিত। যদি গতি নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ করা যায় তাহলে সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস করা সম্ভব। তেমনিভাবে মদ্যপ অবস্থায় বা নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করে মোটরযান পরিচালনাও সরাসরি দুর্ঘটনার ঝুঁকির পাশাপাশি আঘাতের তীব্রতা এবং সেই দুর্ঘটনার ফলে মৃত্যুর সম্ভাবনাকে প্রভাবিত করে। গ্লোবাল রোড সেইফটি পার্টনারশিপের প্রতিবেদনের মতে যদি মদ্যপ অবস্থায় মোটরযান চালানো নিষেধ বিধানটি শতভাগ প্রয়োগ করা যায় তাহলে দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ২০ শতাংশ হ্রাস করা যাবে।

এ সময় তিনি মানসম্মত হেলমেট পরিধানের ওপর জোর দিয়ে বলেন, দুই এবং তিন চাকার মোটরযান ব্যবহারকারীদের জন্য মাথার আঘাত মৃত্যুর প্রধান কারণ। এখানেও যেমন গতির বিষয়টি রয়েছে পাশাপাশি হেলমেট পরিধানের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদিও হেলমেট পরিধান সরাসরি দুর্ঘটনার ঝুঁকির উৎস নয়, তবে দুর্ঘনায় আহত ও নিহতে হার হ্রাসে ভূমিকা পালন করে। সঠিক হেলমেট ব্যবহারে দুর্ঘটনায় মৃত্যু ঝুঁকি ৪০ শতাংশ হ্রাস করতে পারে এবং মাথার আঘাতের ঝুঁকি ৭০ শতাংশ হ্রাস করতে পারে।

অন্যদিকে সিটবেল্ট ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যের আলোকে তিনি বলেন, সিটবেল্ট পরা চালক ও সামনের আসনের যাত্রীর মধ্যে মৃত্যুর ঝুঁকি ৪৫-৫০ শতাংশ এবং পেছনের আসনের যাত্রীদের মধ্যে মৃত্যু এবং গুরুতর আঘাতের ঝুঁকি ২৫ শতাংশ হ্রাস করে।

দুর্ঘটনা থেকে শিশুদের রক্ষা করতে যানবাহনে নিরাপদ ও সুরক্ষিত আসনের প্রয়োজন রয়েছে জানিয়ে শারমিন রহমান বলেন, অভিভাবকদের একটি মানসিকতা রয়েছে যানবাহনে চড়ার সময় শিশুদের কোলে আগলে রাখার। কিন্তু দুর্ঘটনার সময় যখন সংঘর্ষ হয় তখন শিশুরা অনেক সময় কোল থেকে ছিটকে পড়ে গিয়ে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়। তাই শিশুদের জন্য যানবাহনে আলাদা সুরক্ষিত ও নিরাপদে আসনের প্রয়োজন রয়েছে। গ্লোবাল রোড সেফটি পার্টনারশিপের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, শিশুদের জন্য নিরাপদ বা সুরক্ষিত আসন সড়ক দুর্ঘটনায় শিশু যাত্রীদের বিশেষ করে বেশি ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ ও বড় শিশুদের ক্ষেত্রে ৫৪-৮০ শতাংশ মারাত্মক আঘাত পাওয়া এবং মৃত্যু হ্রাসে অত্যন্ত কার্যকর।

সভায় ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য সেক্টরের উপ-পরিচালক মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে প্রতি বছর দেশে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। এক্ষেত্রে জনসচেতনতা তৈরিসহ নীতি-নির্ধারণী পর্যয়ে গণমাধ্যমকে এগিয়ে আসাতে হবে।

সভায় ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের রোড সেফটি প্রকল্পের অ্যাডভোকেসি অফিসার (পলিসি) ডা. তাসনিম মেহবুবা বাঁধন ও অ্যাডভোকেসি অফিসার (কমিউনিকেশন) তরিকুল ইসলামসহ গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

এমএসি/জেডএস