এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক এমডি ও পলাতক আসামি প্রশান্ত কুমার হালদারের (পি কে হালদার) অন্যতম সহযোগী রতন কুমার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

রতন কুমার বিশ্বাস আনান কেমিক্যাল লিমিটেডের পরিচালক ও আরবি এন্টারপ্রাইজের মালিক। মামলায় তার বিরুদ্ধে প্রায় ৬ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৭ মে) দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে ঢাকা-১ এ সংস্থাটির উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। দুদকের জনসংযোগ দপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, রতন কুমার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে অসৎ উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হওয়ার পরেও সম্পদ বিবরণী দুদকে জমা না দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল তার বিরুদ্ধে সম্পদ বিবরণী নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি সম্পদের হিসাব দাখিল করেননি। তবে দুদকের অনুসন্ধানে তার বিরুদ্ধে ৫ কোটি ৮২ লাখ  ৪৭ হাজার ২৬৪ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের প্রমাণ মিলেছে। নির্দিষ্ট সম্পদ বিবরণী ফরম দাখিল না করা ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদক আইন ২০০৪ এর ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারায় অভিযোগটি আনা হয়েছে।

আলোচিত পি কে হালদার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে এই মামলা নিয়ে মোট ৩৯টি মামলা দায়ের করেছে দুদক।

তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরুর চার মাস পর প্রথম মামলা করে দুদক। ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেন সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. সালাউদ্দিন। পরে দুদকের আরেক উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানের নেতৃত্বে একটি টিম আর্থিক কেলেঙ্কারির বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে। ওই টিম বিগত দুই বছরে মোট ৩৭টি মামলা করে।

এছাড়া অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলার চার্জশিট ২০২১ সালের নভেম্বরে দাখিল করা হয়। যেখানে ৪২৬ কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে প্রায় ৬ হাজার ৮০ কোটি টাকা লেনদেনের অভিযোগে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক এমডি পি কে হালদারসহ মোট ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় দুদক।

মামলার তদন্তে এখন পর্যন্ত ১২ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে উজ্জ্বল কুমার নন্দী, পি কে হালদারের সহযোগী শংখ বেপারী, রাশেদুল হক, অবান্তিকা বড়াল ও নাহিদা রুনাইসহ ১০ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়া এক হাজার কোটি টাকা সমমূল্যের সম্পদ অবরুদ্ধ ও জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে আদালতের মাধ্যমে ৬৪ জনের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। একই ইস্যুতে ৩৩ ব্যক্তির সম্পদ বিবরণীর নোটিশ জারি করা হয়েছে।

শনিবার (১৪ মে) ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার অশোক নগরের একটি বাড়ি থেকে পি কে হালদার ও তার পাঁচ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাকে আদালতে হাজির করলে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিচারক। দুদক পিকে হালদারকে ফেরাতে ভারতের ইন্টারপোল ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে।

হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারকারী পি কে হালদার নাম পাল্টে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বসবাস করতেন। রাজ্যের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার অশোক নগরের একটি বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন তিনি। প্রশান্ত কুমার হালদার নিজেকে শিবশঙ্কর হালদার নামে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে পরিচয় দিতেন।

বাংলাদেশি এই অর্থপাচারকারী পশ্চিমবঙ্গ থেকে ভারতীয় রেশন কার্ড, ভারতীয় ভোটার আইডি কার্ড, প্যান এবং আধার কার্ডও সংগ্রহ করেছিলেন। প্রশান্ত কুমার হালদারের অন্য সহযোগীরাও ভারতীয় এসব কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে সংগ্রহ করেন।

আরএম/জেডএস