দেশের আর্থিক খাতের অন্যতম বড় কেলেঙ্কারির হোতা ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া পি কে হালদারকে বাংলাদেশে ফেরত আনার ক্ষেত্রে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে ভারত। তবে ঠিক কবে নাগাদ তাকে দেশে ফেরানো যাবে সে বিষয়ে এখনও কোনো বার্তা দেয়নি দেশটি।

মঙ্গলবার (১৭ মে) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনারের সঙ্গে বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ওনার (ভারতীয় হাইকমিশনার) সঙ্গে পি কে হালদারের বিষয়টা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। দুদকের সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই তারা তাকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদেরও একটা আইনি প্রক্রিয়া আছে। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রসেসটা হবে। তারা বলেছে তাকে ফেরানোর বিষয়ে আমাদের সম্পূর্ণ সহযোগিতা করবে। তাদের (ভারত) আইনি প্রক্রিয়া শেষ করতে পারলে আমাদের যে অনুরোধ আছে সেগুলো বিবেচনায় নেবে। 

ভারতীয় হাইকমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে আনুষ্ঠানিকভাবে পি কে হালদারকে ফেরত চাওয়া হয়েছে কি না, জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বাংলাদেশে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ রয়েছে, সেগুলোর জন্য তাকে বাংলাদেশে আনা প্রয়োজন, এ জন্য হাইকমিশনারকে সহযোগিতা করতে বলেছি। আনুষ্ঠানিক বলতে গেলে চিঠি দিয়ে চাওয়া বা মন্ত্রী পর্যায়ে চাওয়ার বিষয় হয়নি। ওনারা আমাদের সব ধরনের সহযোগিতা করবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন। 

পি কে হালদারের বিরুদ্ধে ভারতে যে মামলা হয়েছে সেটার বিচারকার্য শেষে তাকে ফেরত দেওয়া হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, এ রকম কোনো শর্ত দেওয়া হয়নি। তাদের আইনি প্রক্রিয়া যেটা আছে সেটা আরেকটু এগিয়ে গেলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে।  

বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদের মতো পি কে হালদারকে দেশে ফেরানোর বিষয়টি ঝুলে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ভারতে কোনো ক্রাইম হয়েছে কি না, সেটা বের করার দায়িত্ব  তাদের। এখন হয়ত অনুসন্ধান পর্যায়ে আছে। এ অনুসন্ধানগুলো শেষ হলে কোন লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় তাকে দেশে আনা যাবে সেটা নিয়ে আলোচনা হবে। তবে দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকলে সব সময় যে লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক দরকার হয় তাও না।

তিনি বলেন, তার আগেও আমরা দেখেছি, এ ধরনের ব্যাপারে আমরা তাদের সহযোগিতা করেছি, তারাও আমাদের সহযোগিতা করেছে। এখানে আইনি বাধা বা আইনি প্রক্রিয়া আছে কিনা সেটা দেখতে হবে। এগুলো উত্তর দেওয়ার অধিকার আমার নেই। এ ব্যাপারে যোগাযোগ হচ্ছে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায়। আশা করছি, দ্রুতই আমরা ব্যাপারটা ক্লিয়ার হয়ে যাব।

যারা দেশ থেকে অর্থ পাচার করে বিদেশে নিয়ে যান তাদের প্রশ্রয় দেওয়া হবে না উল্লেখ করে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, আমরা সরকার থেকে যে বার্তা দিতে চাই, কোনো ধরনের অপরাধীকে আমরা প্রশ্রয় দেব না। সেটা ফিন্যানশিয়ালি ক্রাইম হোক বা অন্য কিছু। অপরাধী যতই শক্তিশালী হোক না কেন কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। যাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং মামলা রয়েছে তাদের বিভিন্ন দেশ থেকে আনার ক্ষেত্রে সহযোগিতা চাই। এ বিষয়ে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমাদের যে মিউচুয়াল লিগ্যাল এগ্রিমেন্ট রয়েছে, সেগুলো নিয়ে কাজ করছি। যাতে আমরা ভবিষ্যতে সব ধরনের সহযোগিতা পাই।  

উল্লেখ্য, গত শনিবার (১৪ মে) ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার অশোকনগরের একটি বাড়ি থেকে পি কে হালদার ও তার পাঁচ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে।

মঙ্গলবার পি কে হালদারকে কলকাতার নগর দায়রা আদালতে আবার হাজির করে ১৪ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে ইডি। আদালতের বিচারকরা তার ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এনআই/এসকেডি