প্রতি বর্ষাতেই পরের বর্ষায় জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তির স্বপ্ন দেখানো হলেও চট্টগ্রামবাসীর মুক্তি আর মেলে না।

• ভারী বৃষ্টি ও জোয়ার একসঙ্গে হলে এবারও ডুববে চট্টগ্রাম 
• ইতোমধ্যে দুই দফা মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে প্রকল্পের 
• প্রকল্প পরিচালকের আশ্বাস জলাবদ্ধতা কমবে 
• টাইডাল রেগুলেটরের গেট আসছে নেদারল্যান্ডস থেকে 
• খাল পরিষ্কার রাখতে তাগাদা

বর্ষা জলযট চট্টগ্রাম- এ তিনের মেলবন্ধনে বছরের পর বছর দুর্ভোগে নাকাল হচ্ছেন চট্টগ্রাম নগরীর বাসিন্দারা। প্রতি বর্ষাতেই পরের বর্ষায় জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তির স্বপ্ন দেখানো হয় তাদের। কিন্তু সেই মুক্তি আর মেলে না।  

এবারও বর্ষা যখন পৌঁছে গেছে দ্বারে, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের রাজধানীখ্যাত এ শহরের মানুষের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়া শুরু হয়েছে। চেনা সেই ভোগান্তি এখনো আছে শঙ্কা হয়েই।       

জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও সিটি করপোরেশন যে কাজ করেনি তা নয়। কাজ হয়েছে, তবে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি হয়নি। জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ যে মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে তার ৬৭ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। অর্থাৎ বাকি আছে এখনো অনেক কাজ। আর তাই জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে চট্টগ্রামবাসীর মুক্তি মিলবে কি না— তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।  

নগর-পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, এ বছরও ভারী বৃষ্টি ও জোয়ার একসঙ্গে হলে ডুববে চট্টগ্রাম নগরী। তবে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বলছে, অন্যান্য বছরের তুলনায় কম হবে এবারের জলাবদ্ধতা। 

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বাস্তবায়নাধীন মেগা প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার ৬১৬ কোটি ৪৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা। ২০১৭ সালের জুলাইয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ইতোমধ্যে দুই দফায় মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। 

এ মেগা প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে- কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে সংযুক্ত ১৬টি খাল এবং এসব খালে সংযুক্ত আরও ২০টি খালসহ মোট ৩৬টি খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন। ১৭৬ কিলোমিটার আরসিসি রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ, ৪৮টি পিসি গার্ডার ব্রিজ প্রতিস্থাপন, ছয়টি আরসিসি কালভার্ট প্রতিস্থাপন, পাঁচটি টাইডাল রেগুলেটর বা স্লুইস গেট, ১২টি পাম্প হাউজ স্থাপন, ৪২টি সিল্টট্রেপ স্থাপন এবং ২০০টি ক্রস ড্রেন কালভার্ট নির্মাণ। 

এরমধ্যে ১৮টি খালের কাজ শেষ পর্যায়ে। প্রকল্পের আওতায় ৫৪টি ব্রিজ-কালভার্টের মধ্যে সবগুলোর কাজ শেষ হয়েছে। ৫টি খালে টাইডাল রেগুলেটরের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের দিকে। ৪২টি সিল্ট ট্র্যাপের মধ্যে ১৫টির কাজ চলমান। পানি সরবরাহ বাধামুক্ত করার জন্য ১০ কিলোমিটার নতুন ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। সাড়ে ১৫ কিলোমিটার রোড সাইড ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। টাইডাল রেগুলেটরের নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। জুনের মাঝামাঝি ৫টি টাইডাল রেগুলেটর নির্মাণ কাজ শেষ হতে পারে। 
 
এছাড়া কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত শহর রক্ষা বাঁধ কাম রাস্তা নির্মাণ করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। এই প্রকল্পের অধীনে জোয়ারের পানি শহরে প্রবেশ ঠেকাতে বিভিন্ন খালের মুখে ১২টি স্লুইস গেট নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে এখনো একটিরও কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। 

 জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ যে মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে তার ৬৭ শতাংশের কাজ শেষ হয়েছে।

ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক সভাপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, জনগণের প্রত্যাশা নিয়ে চট্টগ্রামে উপহাস হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামবাসীর সমস্যার কথা চিন্তা করে প্রকল্পের অনুমোদন দিলেন। প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছাকে এখানে অসম্মান করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত প্রতিবছরই বলা হয়,আগামী বছর সমস্যা থাকবে না। জলাবদ্ধতা নিরসনে নেওয়া মেগা প্রকল্লপটি এখনও শেষ হয়নি। সিডিএ থেকে মেগাপ্রকল্পের ৬৭ শতাংশ কাজ শেষ হচ্ছে বলা হলেও আসলে তা হয়েছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। কারণ ৩৬টি খালের মধ্যে অর্ধেকের কম খালের কাজ শেষ হয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, মেগা প্রকল্পের যেখানে যেখানে কাজ চলছে, সেখানে খালের মধ্যে প্রতিবন্ধকতা আছে। টাইডাল রেগুলেটরগুলো এখন পর্যন্ত সম্পূর্ণ হয়নি। এই অবস্থাতে আমি মনে করি, এ বছরও একসঙ্গে জোয়ার ও ভারী বর্ষণ হলে চট্টগ্রাম নগরীকে ডুবে যাওয়া থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে না। এ বছরও নগরবাসীকে দুর্ভোগ পোহাতে হবে। এ বছরও জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনো পথ নেই। 

তার পরামর্শ, মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ হলে রুটিন করে কিছু রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চালিয়ে যেতে হবে। তা না হলে প্রকল্প কার্যকরী থাকবে না। 

যেহেতু এ ধরনের কোনো প্রস্তুতি তিনি দেখছেন না তাই প্রকল্পের কাজ যেদিন শেষ হবে, সেইদিনই আবার প্রকল্প ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কা রয়ে গেছে বলে মনে করছেন তিনি।  

এই নগর পরিকল্পনাবিদ বলেন, জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে হলে খালগুলো দ্রুত পরিষ্কার করে দিতে হবে। এক সপ্তাহের মধ্যে টাইডাল রেগুলেটরগুলোকে ফাংশনিংয়ে নিয়ে আসতে হবে। এখনই দ্রুততার সঙ্গে টাইডাল রেগুলেটরের জন্য অপারেটর ও হাইলি পাম্প মেশিনের জন্য অপারেটর তৈরি করতে হবে। এছাড়া এসব মেইনটেনেন্স করার জন্য ম্যানুয়াল তৈরি করতে হবে, প্রশিক্ষিত জনবল তৈরি করতে হবে। কারা এসব রক্ষণাবেক্ষণ করবে তা দ্রুততার সঙ্গে ঠিক করতে হবে। যাতে প্রকল্পটি মুখ থুবড়ে না পড়ে। 

প্রকল্প পূর্ণাঙ্গ নয়
প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে যে মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, তা পূর্ণাঙ্গ প্রকল্প নয়। জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য আরও অনেক কাজ বাকি আছে। সেই কাজগুলো সংযুক্ত করলে এটাকে পূর্ণাঙ্গ প্রকল্প বলা যাবে। এই যে খণ্ডিত প্রকল্প, তারও সুফল পেতে হলে দ্রুততার সঙ্গে খালের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে। টাইডাল রেগুলেটরগুলো ফাংশনিং করতে হবে। আর যে কাজ বাকি আছে তা বর্ষার পরে করতে হবে। 

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের এ প্রকল্পটির কাজ চলছে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে। প্রকল্পের পরিচালক ও সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. শাহ আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসনে যে প্রকল্পের কাজ চলছে তার প্রায় ৬৭ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আমরা আশা করছি অন্যান্য বছরের তুলনায় জলাবদ্ধতা কম হবে। কারণ আমরা যে পরিমাণ কাজ করেছি, তাতে জলাবদ্ধতা অবশ্যই কমবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম নগরীতে ড্রেনের পরিমাণ হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার। এরমধ্যে মেগা প্রকল্পের আওতায় আছে ৩০০ কিলোমিটার। আমরা ৩০০ কিলোমিটারের কাজ করে পরিষ্কার রাখলেও বাকি ১৩০০ কিলোমিটার পরিষ্কার রাখতে হবে সিটি করপোরেশনকে। তারা যদি তাদের অধীনে থাকা ড্রেনগুলো পরিষ্কার রাখে তাহলে সফলতা আসবে।  

মো. শাহ আলী আরও বলেন, চট্টগ্রামে ৫৭টি খাল আছে। তার মধ্যে ৩৬টি খাল প্রকল্পের অধীনে। বাকি ২১টি খাল সিটি করপোরেশনের অধীনে। জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা পেতে হলে সেই খালগুলো পরিষ্কার রাখতে হবে। 

তিনি বলেন, প্রকল্পের অধীনে আমরা মূল খালগুলোতে কাজ করছি। জুনের মধ্যে ১৮টি খালের কাজ শেষ করতে পারবে বলে আশা করছি। কিছু খালের রিটার্নিং ওয়াল ও খনন কাজ শেষ হয়ে যাচ্ছে। অবশিষ্ট খালগুলোর কাজেরও অনেকটা অগ্রগতি আছে। খালগুলো ও নালাগুলো পরিষ্কার করে দিচ্ছি। এসব কাজ করার কারণে আমরা আমাদের দিক দিয়ে আত্মবিশ্বাসী। আগে যেখানে দীর্ঘ সময় ধরে পানি জমে থাকত, এখন সেখানে এক থেকে দেড় ঘণ্টা পানি জমে থাকবে। বৃষ্টি হওয়ার পর পানি নেমে যাওয়ার জন্য ন্যূনতম সময় দিতে হবে। প্রকল্পের অধীনে যে খাল ও নালা করা হয়েছে সেগুলো পরিষ্কার আছে। পাশাপাশি সিটি করপোরেশনের যে ড্রেন ও খাল আছে সেগুলো পরিষ্কার থাকলে পানি দ্রুত নেমে যাবে। এক ঘণ্টারও কম সময়ে নেমে যাবে।

খালের বাঁধের বিষয়ে তিনি বলেন, খালে বাঁধ দিয়ে আমরা কাজ করেছি। এখন অধিকাংশ খালের বাঁধ খুলে দিয়েছি। এখন সাত-আটটি খালে বাঁধ আছে। এগুলোও খোলার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। চলতি মাসের মধ্যেই খালের সব বাঁধ ও খালের মাটি উত্তোলনের কাজ শেষ হয়ে যাবে। দুই-একটা খালে কাজ চলমান থাকবে। তার জন্য জলাবদ্ধতা হবে না। 

মেগাপ্রকল্পের অধীনে ৫টি টাইডাল রেগুলেটরের কাজ চলছে জানিয়ে প্রকল্প পরিচালক বলেন, পাঁচটির কাজই এ বছর শেষ হবে। গেট লাগানো ও সামনে ব্লক লাগানোর কাজ চলছে। রেগুলেটরের কাজ জুলাইয়ের মাঝামাঝি শেষ হবে বলে আশা করি। কিছু গেট নেদারল্যান্ডস থেকে চট্টগ্রামে আসছে। এখনো এসে পৌঁছায়নি। মে মাসের শেষে গেটগুলো আসবে। দুটি টাইডাল রেগুলেটরের গেট লাগানো হয়েছে। মহেষখালের রেগুলেটরে চারটি গেট লাগানো হয়েছে। বাকিগুলো নেদারল্যান্ডস থেকে আসলে লাগানো হবে।  

নগর-পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, এ বছরও ভারী বৃষ্টি ও জোয়ার একসঙ্গে হলে ডুববে চট্টগ্রাম নগরী।

মা ও শিশু হাসপাতালে পানি উঠবে না
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ বছর জলাবদ্ধতার ভোগান্তি কিছুটা কমবে বলে আশা করছি। এ বছর মা ও শিশু হাসপাতাল এলাকায় জলাবদ্ধতা অন্য বছরের তুলনায় কিছুটা কম হবে আর স্লুইস গেটের কাজ শেষ হলে মা ও শিশু হাসপাতালে পানি উঠবে না। জলাবদ্ধতা নিরসনের সঙ্গে অনেকগুলো বিষয় জড়িত। সেই বিষয়গুলোর সমাধান করতে হবে। এরমধ্যে চট্টগ্রাম নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা জড়িত। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না হলে জলাবদ্ধতা প্রকল্পের পুরোপুরি সফলতা পাওয়া যাবে না। খালে মানুষজন ময়লা আর্বজনা ফেলে।  ফলে খাল-নালা খালি থাকে না। তাই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা জরুরি। এছাড়া পাহাড় কাটার ফলে মাটি এসে খাল ভরাট হয়ে যায়। এসবের সমাধান করতে হবে। মেগা প্রকল্প ছাড়াও আরেকটি প্রকল্পের অধীনে ১২টি খালের মুখে স্লুইস গেট নির্মাণের কাজ চলছে। 

তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ হলে সিটি করপোরেশনেকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। এজন্য সিটি করপোরেশনের প্রশিক্ষিত জনবলের প্রয়োজন হবে। তাদের বলেছি, লোকবল দিলে প্রয়োজনে আমরা প্রকল্পের অধীনে তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করব।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকেও বলা হচ্ছে এ বছর চট্টগ্রামবাসী জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে কিছু দিন আগেও আমরা বৈঠক করেছি। এ বছর গতবছরের তুলনায় জলাবদ্ধতা কম হবে বলে আশা করছি। সিডিএ’র মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ হলে আগামী বর্ষায় হয়তো জলাবদ্ধতা থাকবে না। এ বছর জলাবদ্ধতা সহনীয় পর্যায়ে থাকবে।

সিটি করপোরেশনের অধীনের খাল-নালা নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় দাবি করে তিনি বলেন, আমাদের খাল-নালা পরিষ্কার আছে। আমাদের অধীনে ছোট খাল- নালা। তাই সিডিএর প্রকল্পের অধীনে থাকা বড় খাল-নালা পরিষ্কার থাকলে পানি দ্রুত নামবে। কোনো জলাবদ্ধতা হবে না। ছোট খাল-নালার পানি বড় খাল ও নালায় পড়বে। তাই সেগুলো পরিষ্কার রাখা জরুরি। ছোট নালায় জলাবদ্ধতা হয় না। তারপরও আমরা কাজ করেছি। আমরা সমন্বয় করে কাজ করার চেষ্টা করছি। সমন্বিতভাবে কাজ করলে নগরবাসীর সুবিধা হবে। জলাবদ্ধতা এ বছর একবারে যাবে না। তবে কিভাবে সহনীয় রাখা যায় সে ব্যাপারে কাজ করে যাচ্ছি।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্ণফুলী নদীর তীর কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত দুই হাজার ৩১০ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক নির্মাণ করছে। এই প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম নগরীর ১২টি খালের মুখে টাইডাল রেগুলেটর স্থাপন করা হচ্ছে। 

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রকল্প পরিচালক রাজীব দাশ ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই প্রকল্পের ৫৫ শতাংশ কাজ শেষ করা হয়েছে। এই প্রকল্পের অধীনে ১২টি খালে টাইডাল রেগুলেটর বসানো হবে। এর মধ্যে ১০টির কাজ করছি। এগুলো এখনও পুরোপুরি শেষ হয়নি। পাঁচটি রেগুলেটরে এই মাসের মধ্যে গেট বসবে। এগুলো ছোট ছোট। চাক্তাই, রাজাখালী, বলির হাটসহ পাঁচটি খালের মুখের টাইডাল রেগুলেটরে গেট বসানো হবে। ২০২৩ সালের নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যেই কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি।

এগুলো বসানো হলে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে তা কেমন ভূমিকা রাখবে- এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা আসলে অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে। রেগুলেটরগুলো স্থাপন শেষ হলে জোয়ারের পানি সংশ্লিষ্ট এলাকায় প্রবেশে বাধা দেবে। 

বৃষ্টির সঙ্গে জোয়ার হলে অনেক নিচু এলাকা তলিয়ে যায়। বিভিন্ন বাসাবাড়ি ও দোকানপাটে পানি ওঠে। ঈদের তৃতীয় দিনে হালকা বৃষ্টিতেই চট্টগ্রাম নগরীর অনেক এলাকায় হাঁটু পর্যন্ত পানি জমে যায়। তলিয়ে যায় রাস্তা-ঘাট। এছাড়া এখনও কয়েকটি খালে বাঁধ থাকায় বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার আতঙ্কে থাকে নগরবাসী। 

মির্জাখালের পাশের বাসিন্দা আবুল কালাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বৃষ্টি হলেই হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি জমে যায়। মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এখনও খালে বাঁধ রয়েছে। এগুলো দ্রুত সরানো দরকার। 

চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতাল এলাকার বাসিন্দা আরিফুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, বর্ষা এলেই আমাদের কষ্ট বেড়ে যায়। সিডিএ’র মেগা প্রকল্পের কাজ শুরুর পর আশা করেছিলাম জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাব। কিন্তু কাজ শেষ না হওয়ায় এ বছরও বর্ষায় আমাদের কষ্ট করতে হবে বলে মনে হচ্ছে। 

চান্দগাঁওয়ের বাসিন্দা এমরাউল কায়েস ঢাকা পোস্টকে বলেন, একটু বৃষ্টি হলেই পাঠানিয়া গোদা থেকে খাজারোড পর্যন্ত আশপাশের পুরো এলাকায় পানি জমে যায়। এমনকি বাসা-বাড়িতেও হাঁটুপানি জমে যায়। যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। বর্ষায় বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা আতঙ্কে থাকি। 

ফিরিঙ্গি বাজার এলাকার বাসিন্দা নাহিদ ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন,  ফিরিঙ্গি বাজার এলাকায় আগে জলাবদ্ধতা হতো না। কিন্তু এ বছরের দুইদিনে বৃষ্টিতে বাসা-বাড়িতে পানি উঠছে। ফিরিঙ্গিবাজার খালে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ শুরুর পর এখানে পানি জমে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। এই বর্ষায় যাতে জলাবদ্ধতা না হয় সেই ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা ব্যবস্থা নেবেন বলে আশা করছি।

চট্টগ্রামের চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, সামনে বর্ষা মৌসুম আসছে। ভারী বৃষ্টির সঙ্গে জোয়ার হলে খাতুনগঞ্জে পানি ওঠার আশঙ্কা করছি। আমরা সবসময় আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাই। খাতুনগঞ্জ সংশ্লিষ্ট যে স্লুইস গেটের কাজ চলছ, তার কাজ শেষ হয়নি। এগুলোর কাজের গতি কম। অনেক খাল পরিষ্কার না। খালে বাঁধ দেওয়া আছে। বাঁধ পরিষ্কার না করলে পানি যেতে পারবে না। 

৩৬টি খালের মধ্যে অর্ধেকের কম খালের কাজ শেষ হয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, আমরা আতঙ্কে আছি। জলাবদ্ধতায় কোটি কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতিতে পড়েন ব্যবসায়ীরা। অনেক ব্যবসায়ী ঋণগ্রস্ত হয়ে গেছেন। বৃষ্টি এলে ব্যবসায়ীদের ঘুম নষ্ট হয়ে যায়।

কেএম/এনএফ