অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্টে গত ১৩ মে ‘ঢাবির ফার্মেসি অনুষদের সাবেক দুই ডিনের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি ‘অসত্য ও ভিত্তিহীন’ উল্লেখ করে এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক আ ব ম ফারুক।

গতকাল বুধবার (১৮ মে) পাঠানো প্রতিবাদলিপিতে উল্লেখ করা হয়, ‘একটি বেনামি চিঠির সূত্র ধরে পরিবেশিত আপনাদের প্রতিবেদনে আমাকে জড়িয়ে যে অসত্য ও ভিত্তিহীন তথ্যগুলো প্রকাশিত হয়েছে সেগুলোর প্রতিটি সম্পর্কে সংক্ষিপ্তভাবে নিচে আমি ব্যাখ্যা প্রদান করছি-

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া দুই কর্মচারী আমার কোনো নিকটাত্মীয় নয়। তারা আমার স্ত্রীর ভাগ্নেও নয়। কারণ, আমার স্ত্রীর কোনো বোন নেই। আমি ডিন থাকার সময় চাকরিতে নিয়োগ পেলেও তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী গঠিত সিলেকশন বোর্ডে ইন্টারভিউ দিয়ে সর্বসম্মতভাবে ঐকমত্যের ভিত্তিতে উপস্থিত প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থী হিসেবে পরিগণিত হওয়ায় নিয়োগের সুপারিশ পেয়েছে এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নিয়োগ পেয়েছে। যথানিয়মে নিরপেক্ষ সিলেকশন বোর্ডের মাধ্যমেই তারা নিয়োগ পেয়েছে। তাই অভিযোগটি অসত্য।

আ ব ম ফারুক আরও উল্লেখ করেন, আমি ফার্মেসি অনুষদের ডিন থাকাকালে আমার বিরুদ্ধে ‘অর্থ আত্মসাৎ ও দুর্নীতি সংক্রান্ত বিভিন্ন অভিয়োগ ওঠে’ বলে আপনারা প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছেন। আমি আপনাদের কাছে তার বিবরণ দাবি করছি।

“ঢাকা মহানগরীতে আমার অনেক আত্মীয় রয়েছেন। তাদের অনেকে ভাড়া বাড়িতে থাকেন। আবার আমারসহ অনেকেরই বিলাসবহুল না হলেও উপযুক্ত নিজস্ব বাড়ি বা ফ্লাট রয়েছে। তবে কোনোটাই বেনামে নয়। আমার ও আমার আত্মীয়দের অনেকেরই গাড়ি আছে। কিন্তু সেগুলো কোনোটাই বিলাসবহুল নয়, বরং অধিকাংশই অনেক পুরনো।

আমার দুই মেয়ে বিদেশে লেখাপড়া করছে এটাও সত্য নয়। আমার বড় মেয়ে দেশে অনার্স সমাপ্ত করে বিদেশে এমএস সম্পূর্ণ করে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে আইটি ইঞ্জিনিয়ার স্বামীর সঙ্গে সংসার করছে। ভবিষ্যতে সে নিজের রোজগারে ও নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তি পেলে পিএইচডি করবে বলে প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমার ছোট মেয়ে দেশে মাস্টার ডিগ্রির থিসিস করছে। বিদেশের কোনো ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করার প্রস্তাব পেলে ভবিষ্যতে সেখানে যাওয়ার আশা রাখে। তাদের কারও লেখাপড়ার ব্যয়ভার আমাকে বহন করতে হবে না। অতএব বিদেশে তাদের লেখাপড়ার পেছনে বিপুল খরচ হচ্ছে এবং তা আমার আয়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, এ তথ্যটিও অসত্য।”

ক্ষমতার অপব্যবহার করে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার সুদীর্ঘ ৪৩ বছরের চাকরিকালে কোথাও থেকে ঘুষও নেইনি। এ অসত্য অভিযোগ প্রকাশের মাধ্যমে আপনারা আমার মানহানি করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাকে কখনও কখনও অন্যান্য বিশেষজ্ঞ শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম পরিদর্শনে পাঠাতেন। আমাদের টিমগুলোর দায়িত্ব ছিল সেখানে শিক্ষা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে চলছে কি না, সে বিষয়ে মতামত দেওয়া। আমাদের সেই টিমগুলো কোনো ত্রুটি পেলে তা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে করণীয় সুপারিশ করত। টিম সদস্যদের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে সুপারিশগুলো পাঠানো হতো বিধায় আমার একার পক্ষে কোনো অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার কোনো সুযোগ সেখানে ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও আমাদের টিমের লক্ষ্য ছিল অনেক টাকা খরচ করে যারা বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে পড়তে আসে তারা যেন সঠিক জ্ঞানটুকু লাভ করার সুযোগ পায়। এছাড়া কলেজগুলো যেন বেআইনিভাবে অতিরিক্ত ছাত্র ভর্তি করতে না পারে তা দেখাও আমাদের দায়িত্ব ছিল। কোথাও এসব কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন মানা হচ্ছে না দেখলে আমরা বিভিন্ন শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করতাম। উদাহরণস্বরূপ, একবার একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ বেআইনিভাবে ৫০ জন অতিরিক্ত ছাত্র ভর্তি করায় আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির সুপারিশ করাতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেই কলেজকে পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা করেছিল। আমাদের এসব কাজকে বিকৃত করে যদি অসত্য অভিযোগ কোনো গণমাধ্যম প্রচার করে তাহলে তা সত্যের অপলাপ এবং আমাদের জন্য অত্যন্ত অপমানজনক।’

“বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিলের ব্যাপারেও একই কথা প্রযোজ্য। যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ফার্মেসি বিভাগে সরকার অনুমোদিত সংখ্যার অতিরিক্ত ছাত্র ভর্তি করত, কিংবা যাদের শিক্ষক সংখ্যা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত কম, যাদের প্রয়োজনীয় সংখ্যক শ্রেণিকক্ষ ও ল্যাব ছিল না, ল্যাবে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ছিল না, যাদের পরীক্ষা পদ্ধতি স্বচ্ছ ছিল না, যাদের লাইব্রেরিতে পেশা সংশ্লিষ্ট বইয়ের সংখ্যা ছিল অপ্রতুল, যারা শিক্ষকদেরকে শিক্ষা ছুটি দিত না; এসব সমস্যা জর্জরিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সঠিক নিয়ম অনুসরণ করাতে আমরা উদ্বুদ্ধকরণ ও চাপ প্রয়োগ দুটোই করেছি। ফার্মেসি কাউন্সিলে এ দায়িত্ব পালনের সময়ও আমি একা ছিলাম না। সেখানেও একটা টিম ও কমিটি ছিল। আমরা যা কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি তা দেশের স্বার্থে এবং টিমওয়ার্কের মাধ্যমে ও পরবর্তীতে কমিটির সিদ্ধান্তে। সেখানে একা আমার পক্ষে দুর্নীতি করে কাউকে অন্যায় সুবিধা দেওয়ার বা নিয়ম না মানা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে হয়রানি করার কোনো প্রশ্নই আসে না।”

প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, ২০০৯ সালে প্যারাসিটামল সিরাপ খেয়ে শিশুমৃত্যুর দুঃখজনক ঘটনার পর বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি কর্তৃক আমাকে টিম লিডার করে একটি বিশেষজ্ঞ পরিদর্শন দল গঠন করা হয়। এর কাজ ছিল আমাদের ওষুধ কোম্পানিগুলোর ওষুধ উৎপাদনের সক্ষমতা যাচাই করা ও সুযোগ-সুবিধাগুলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্রাকটিস’ (জিএমপি) গাইডলাইনের অনুরূপ কি না, তা যাচাই করে রিপোর্ট দেওয়া। কারণ, জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে এবং দেশের জনস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য সেই গাইডলাইন সঠিকভাবে মেনে চলা আমাদের দেশের জন্য বাধ্যতামূলক। এ গাইডলাইন মেনে না চললে ওষুধ মানহীন হতে বাধ্য। আমাদের কাজ ছিল কারখানার সুবিধাবলী পরিদর্শন করে সংসদীয় কমিটির কাছে রিপোর্ট আকারে পেশ করা এবং কোনো কোম্পানির কোনো অসম্পূর্ণতা বা ত্রুটি পরিলক্ষিত হলে তা দূর করে কারখানাটি কীভাবে জিএমপি মানসম্পন্ন হতে পারে তার পরামর্শমূলক সুপারিশ দেওয়া। তবে যদি কোনো কোম্পানি ইচ্ছাকৃতভাবে নিম্নমানের ওষুধ তৈরি করে কিংবা নকল-ভেজাল ওষুধ উৎপাদনে নিয়োজিত থাকে তাহলে দেশের বৃহত্তর জনস্বার্থে মানুষের জীবন রক্ষার্থে তাদের উৎপাদনের লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ করাও আমাদের টিমের দায়িত্বের মধ্যে ছিল। অর্থাৎ আমাদের ক্ষমতা ছিল শুধু সুপারিশ করা। কোনো কারখানা বন্ধ করা বা উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়ার কোনো ক্ষমতা আমাদের ছিল না। সেই ক্ষমতা ছিল ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের।

“আমাদের দেশের জনস্বাস্থ্য রক্ষার স্বার্থে এ ব্যাপক পরিসরের দুরূহ কাজটি করার বিষয়ে আমরা সম্মত হই। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কাছ থেকে আমরা তখনকার বাংলাদেশে বিদ্যমান ওষুধ কোম্পানিগুলোর তালিকা সংগ্রহ করি। সেখানে ২৪৭টি অনুমোদিত অ্যালোপ্যাথিক কোম্পানির নাম-ঠিকানা ছিল। কিন্তু কাজ শুরুর পর কয়েক বছর ধরে সারা বাংলাদেশ চষে বেরিয়েও আমরা ১৯৩টির বেশি কোম্পানির অস্তিত্ব খুঁজে পাইনি। অর্থাৎ তারা ছিল কাগজেপত্রে, বাস্তবে নয়। সম্ভবত তাদের একমাত্র কাজ ছিল ভুয়া নাম-ঠিকানা ও কাগজপত্র দেখিয়ে সরকারের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে বিদেশ থেকে কাঁচামাল আমদানি করে কালোবাজারে বিক্রি করে দেওয়া। তাদের কোনো কারখানা ছিল না বলে পরিদর্শন করা সম্ভব ছিল না। তাই তাদের নাম আমরা আমাদের রিপোর্ট থেকে বাদ দেই। স্বতঃসিদ্ধভাবে তারা সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপে বাতিল হয়ে যায়। ওই ৫৪টি ওষুধ কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল হওয়ার পেছনে আপনাদের বর্ণনা অনুযায়ী আমাদের কোনো ‘নেগেটিভ রিপোর্ট দেওয়ার হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে কোটি কোটি টাকার অনৈতিক সুবিধা ও ঘুষ’ নেওয়ার মানসিকতা ছিল না। এ অভিযোগ ডাহা অসত্য ও অত্যন্ত অপমানজনক।

এছাড়াও আমরা কিছু কোম্পানির কারখানা আকস্মিক পরিদর্শনের সময় নকল-ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ উৎপাদনকালে তাদেরকে হাতেনাতে ধরেছি এবং র‌্যাব-পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট তাদের কারও কারও নামে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দিয়েছে ও গ্রেফতার করেছে। র‌্যাব ও মোবাইল কোর্ট কোনো কোনো কোম্পানির জব্দ করা পাহাড়প্রমাণ নকল-ভেজাল-নিম্নমানের ওষুধ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। সেই দৃশ্য বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশনের সংবাদে দেশবাসী তখন প্রত্যক্ষ করেছে। আমরা সারা দেশে এরকম ২০টি কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল করার সুপারিশ করেছিলাম। এটি করে আমরা কোনো অন্যায় করিনি বলে আমি এখনও দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। আমরা দেশের মানুষের জনস্বাস্থ্য রক্ষায় সামান্য কিছু কাজ করতে পেরেছি বলে মহান আল্লাহকে কৃতজ্ঞতা জানাই। নকল-ভেজাল-নিম্নমানের ওষুধ প্রস্তুতকারকরা আমাদের নামে যতই ‘নেগেটিভ রিপোর্ট’, ‘হুমকি’, ‘ভয়ভীতি’, ‘অনৈতিক সুবিধা’ ও ‘ঘুষ’ ইত্যাদি অপবাদ দেওয়ার চেষ্টা করুক না কেন আমরা তাতে ভীত নই। কারণ এগুলো একান্তই অসত্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

কোটি কোটি টাকার অনৈতিক সুবিধা আমরা কখনও নেইনি বরং এ ধরনের প্রস্তাব উল্টোভাবেই এসেছিল। নিম্নমানের ওষুধ উৎপাদনে নিয়োজিত কোনো কোনো কোম্পানি ফ্লাট, গাড়ি ইত্যাদি ‘উপহার’ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। যেহেতু তখন আমার বাসায় বা অফিসে কোনো ওষুধ কোম্পানির মালিক পক্ষের কারও আসা কড়াকড়িভাবে নিষেধ ছিল তাই এসব প্রস্তাব আসত অন্যের মারফতে। কিন্তু সেগুলো  গ্রহণ না করার মতো যথেষ্ট মনোবল আমাদের ছিল। যদি কখনও এসব প্রস্তাবের সঙ্গে জড়িত কোম্পানিগুলোর নাম বলা অনিবার্য হয় তখন সেগুলোর আদ্যোপান্ত প্রকাশ করতে আমি সম্মত আছি।  

পরিদর্শনকালে কোনো কোম্পানির ওপর আমার বা আমাদের কোনো ব্যক্তিগত জিঘাংসা ছিল না। তাই জিঘাংসা চরিতার্থ করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। পরিদর্শনের পর যেসব কোম্পানির জিএমপি সুবিধা অপ্রতুল এবং বারবার সময় দেওয়ার পরও যারা তাদের সুবিধাবলী উন্নত করেনি, শুধু তাদের বেলায় সুবিধাবলী উন্নত না করা পর্যন্ত রোগীর জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হবে এমন কিছু মানহীন প্রডাক্টের উৎপাদন সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার জন্য সংসদীয় কমিটির কাছে সুপারিশ করা হয়েছিল। সেটি করা হয়েছিল জনস্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত না করার স্বার্থেই। যেমন- উচ্চপ্রযুক্তির এন্টিবায়োটিক ও ক্যানসারের ওষুধ তৈরি করে এমন একটি বড় কোম্পানি অত্যন্ত ঘন বসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকায় তার কারখানা, তাদের কোনো এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) বা বর্জ্য পরিশোধন ব্যবস্থাও ছিল না। ফলে তারা আশেপাশের বাসিন্দাদের ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি তৈরি করছিল। তারা জিএমপি অনুসরণ করত না এবং তাদের কারখানার অভ্যন্তরীণ পরিবেশ ছিল অত্যন্ত নোংরা। এর ফলে তাদের উৎপাদিত এন্টিবায়োটিক ও ক্যান্সারের ওষুধ মানহীন হতে বাধ্য, এমনকি তারা কারখানার অভ্যন্তরের কর্মীদেরও ক্রমাগত স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি তৈরি করছিল। আমরা তাদের উৎপাদন ব্যবস্থার সংস্কার করে কেবল তারপরেই উন্নত এন্টিবায়োটিক ও ক্যান্সারের মতো অত্যন্ত জটিল ওষুধগুলোর পুনরায় উৎপাদনে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছি এবং সে অনুযায়ী সুপারিশ করেছি।

এছাড়া বেশ কয়েকটি কোম্পানি পেনিসিলিন এবং ননপেনিসিলিন গ্রুপের বিভিন্ন এন্টিবায়োটিক একসঙ্গে তৈরি করছিল, যা রোগীর জন্য বিপজ্জনক। কয়েকটি কোম্পানি এন্টিবায়োটিকসহ বিভিন্ন ওষুধ উৎপাদন করে মাননিয়ন্ত্রণ ছাড়াই তা বাজারজাত করছিল। অন্য একটি কোম্পানি গরুর ওষুধ ও মানুষের ওষুধ একসঙ্গে একই মেশিনে একই পদ্ধতিতে তৈরি করছিল। এটাও নিয়মবিরুদ্ধ। কয়েকটি কোম্পানি ওষুধ উৎপাদন নিয়মিতভাবে করলেও কোথা থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করছে তার কোনো কাগজ দেখাতে পারেনি। ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকার আরেকটি কোম্পানি দিনে উৎপাদন না করে শুধু রাতের বেলায় কারখানা চালাত। এলাকাবাসীর প্রতিবাদেও তারা কোনো কর্ণপাত করত না। তাদেরও কাঁচামালের উৎস সন্দেহমুক্ত ছিল না। এরা সবাই জিএমপি গাইডলাইনবিরোধী কাজে লিপ্ত ছিল।

এসব কোম্পানি কীভাবে ওষুধ উৎপাদনের অনুমোদন পেয়েছিল তা আমাদের জানা নেই। তাদের সবার ব্যাপারেই সঠিক উৎপাদন সুবিধা তৈরি না হওয়া পর্যন্ত ওষুধ উৎপাদন বন্ধ রাখতে সুপারিশ করা হয়েছিল। কাউকেই ছাড় দেওয়া হয়নি। অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কোম্পানিকেও না। জনস্বাস্থ্যের ব্যাপারে আমরা কোথাও কোনো আপস করিনি। ওষুধ খেয়ে মানুষ ভালো হওয়ার পরিবর্তে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এটা কোনোভাবেই আমরা মেনে নেইনি। আমরা আমাদের সুপারিশ পাঠিয়েছি মাত্র। এখানে ঘুষ গ্রহণের কোনো ব্যাপার ছিল না। অথচ এসব কোম্পানির অনেকেই সেই সময় থেকে আমাদের সম্পর্কে গোপনে কুৎসা ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে, কিন্তু কখনওই সামনে আসেনি। তারা নানাভাবে আমাদের সমাজে হেয় করার জন্য মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে, কিন্তু তারা নাম-ঠিকানা প্রকাশ করছে না। বেনামে তারা নাকি দুদকে অভিযোগ করেছে এবং সেটা হুবহু কোনো কোনো পত্রিকা প্রকাশ করছে। আমি অভিযোগকারীদেরকে প্রকাশ্যে পরিচয় দিয়ে কোনো সত্য অভিযোগ থাকলে তা জানানোর জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।

সংসদীয় স্থায়ী কমিটি কর্তৃক গঠিত বিশেষজ্ঞ টিমের রিপোর্ট আমরা শুধু স্থায়ী কমিটির কাছে জমা দিয়েছি, জনসমক্ষে প্রকাশ করিনি। কিন্তু এখন প্রয়োজনবোধে এসব কোম্পানির নাম ও তাদের প্রত্যেকের সম্পর্কে আমাদের সুপারিশ কী ছিল তার পূর্ণবৃত্তান্ত প্রকাশ করতে আমি সম্মত আছি। এসব অসত্য অভিযোগ কোনো রকম যাচাই না করে আমাদের সম্পূর্ণ অজ্ঞাতে হুবহু প্রকাশ করে আপনারাও অত্যন্ত গর্হিত কাজ করেছেন।”

প্রতিবাদলিপিতে অধ্যাপক আ ব ম ফারুক আরও উল্লেখ করেন, প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে যে আমার নামে নাকি এসব অভিযোগে শাহবাগ ও রমনা থানায় জিডি করা আছে। অথচ এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। কবে জিডি করা হয়েছে, কী অভিযোগে করা হয়েছে ইত্যাদি কিছুই আমি জানি না। জিডির বাদী বা থানা কর্তৃপক্ষ কেউই আমাকে কখনও এ বিষয়ে কিছু জানায়নি। এ ব্যাপারে অবশ্যই খোঁজ নেও য়া হবে।

ফোনে না পাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অভিযোগটি গ্রহণযোগ্য নয়। কোনো ফোনকল এলে আমি তা রিসিভ করার চেষ্টা সবসময়ই করি। তবে কখনও ক্লাশে বা কোনো মিটিংয়ে থাকলে কিংবা গভীর রাতে ফোন করলে আমি ফোন ধরতে পারি না। সেক্ষেত্রে কললিস্ট দেখে আমি কলব্যাক করি। জরুরি কল হলে অনেকে মেসেজ দিয়ে ফোন ধরতে অনুরোধ করেন। কিন্তু আমি আপনাদের পত্রিকার কারও কাছ থেকে কোনো ফোনকল বা রিকোয়েস্ট মেসেজ পাইনি। বরং প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর থেকে আমি কয়েকদিন ধরে প্রতিবেদকের ফোন নম্বরটি পাওয়ার জন্য চেষ্টা করেছি। কিন্তু সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকের ফোন নম্বর এবং ইমেইল অ্যাড্রেস দেওয়া হয়নি। অবশেষে সম্পাদক মহোদয়ের কাছ থেকে ইমেইল অ্যাড্রেস নিয়ে তারপর প্রতিবাদপত্রটি পাঠাচ্ছি।’

প্রতিবেদনে আমার সম্পর্কে অনেকগুলো অসত্য, মনগড়া ও বানোয়াট অভিযোগ প্রকাশ করা হয়েছে। প্রকাশের আগে আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগও দেওয়া হয়নি। ফলে বিনা দোষে আমার পরিবার, বন্ধুমহল, শুভানুধ্যায়ী ও দেশবাসীর কাছে আমি অত্যন্ত হেয় হয়েছি। আমার এতকালের অর্জিত সম্মান ও ভাবমূর্তি বিনষ্ট হয়েছে। আমি মারাত্মকভাবে অপমানিত হয়েছি এবং মানসিক শান্তি বিনষ্ট হয়ে আমি অত্যন্ত কষ্ট পাচ্ছি। এসব কারণে আমি অত্যন্ত সংক্ষুব্ধ। তাই অনুগ্রহ করে যে গুরুত্ব দিয়ে আপনারা একটি বেনামি চিঠি হুবহু ছেপেছেন, আমার প্রতিবাদলিপিটিও সমান গুরুত্বসহকারে যাতে আমার বক্তব্য অস্পষ্ট বা বিকৃত না হয় তার জন্য কোনো কাঁটছাট না করে, হুবহু আপনার পত্রিকায় প্রকাশ করার জন্য সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি— উল্লেখ করা হয় প্রতিবাদলিপিতে।

এমএআর/