দেশের সবচেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষ বাসবাস করে কুড়িগ্রাম জেলার চর রাজিবপুর উপজেলায়। এ উপজেলায় দারিদ্র্যের সংখ্যা ৭৯.৮ শতাংশ। আর বাংলাদেশে গড় দারিদ্র্য হার ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ।

রোববার (২২ মে) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের (বিআইসিসি) কার্নিভাল হলে ‘প্রভার্টি অ্যান্ড আন্ডারনিউট্রিশন ম্যাপস বেজড অন স্মল এরিয়া এস্টিমেশন টেকনিক’ শীর্ষক সেমিনারে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। বিবিএস ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি যৌথভাবে সেমিনারের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশের সবচেয়ে কম দরিদ্র মানুষের বসবাস ঢাকা বিভাগের গুলশান মেট্রোপলিটন এলাকায়, মাত্র ০.৪ শতাংশ। অন্যদিকে সবচেয়ে বেশি ৭৯.৮ শতাংশ দরিদ্র মানুষের বসবাস কুড়িগ্রামের চর রাজিবপুর উপজেলায়।
 
২০১৬ সালের তথ্য উপাত্ত ব্যবহার করে উপজেলা ও মেট্রোপলিটন এলাকার দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বের করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। স্থানীয় সরকার পরিচালনার জন্য সারাদেশকে ৫৭৭টি উপজেলায় (মেট্রোপলিটন থানাসহ) বিভক্ত করা হয়েছে। যাতে এসব ডাটা ব্যবহার করে দারিদ্র্য নিরসনে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া যায়। 

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বিভাগের মধ্যে উপজেলা পর্যায়ে দারিদ্র্য হার গ্রুপে অবস্থান করা উপজেলার সংখ্যায় বৈষম্য সবচেয়ে বেশি দেখা যায় চট্টগ্রাম বিভাগে। অতিনিম্ন দারিদ্র্য হার গ্রুপে বরিশাল ও ময়মনসিংহ বিভাগের কোনো উপজেলা নেই। রংপুর বিভাগে অতিনিম্ন দারিদ্র্য হার গ্রুপে অবস্থান করা উপজেলা শুধু একটি। অন্যদিকে সিলেট বিভাগে অতিউচ্চ দারিদ্র্য হার গ্রুপে অবস্থান করা উপজেলা মাত্র একটি। সবচেয়ে দারিদ্র্যপূর্ণ উপজেলা-মেট্রো থানা রয়েছে ঢাকা বিভাগে ৭৭টি। একইসঙ্গে এ বিভাগে ১২টি উপজেলা রয়েছে অতিউচ্চ দারিদ্র্য হারের আওতায়।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বরিশাল বিভাগে দারিদ্র্যের হার ২৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এই বিভাগের ভোলার দৌলতখান উপজেলায় দারিদ্র্য হার মাত্র ১২ দশমিক ২ শতাংশ। অন্যদিকে পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলায় দারিদ্র্য হার বেশি ৫২ দশমিক ৮ শতাংশ। চট্টগ্রাম বিভাগে গড় দারিদ্র্য হার ১৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এই বিভাগে সবচেয়ে কম দারিদ্র্য চট্টগ্রাম সদরে মাত্র ১ দশমিক ৫ শতাংশ, সবচেয়ে বেশি দারিদ্র্য বান্দরবানের থানচি উপজেলায় ৭৭ দশমিক ৮ শতাংশ। 

ঢাকা বিভাগের গড় দারিদ্র্য হার ১৬ শতাংশ, সবচেয়ে কম দারিদ্র্য গুলশানে মাত্র ০ দশমিক ৪ শতাংশ, মিঠামইন উপজেলায় বেশি ৬১ দশমিক ২ শতাংশ। খুলনা বিভাগে গড় দারিদ্র্য ২৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ, এই বিভাগের চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা দারিদ্র্য হার কম, ৭ দশমিক ৯ শতাংশ, বেশি মাগুরার মোহম্মদপুর উপজেলায় ৬২ দশমিক ৪ শতাংশ।

এছাড়া ময়মনসিংহের গড় দারিদ্র্য হার ৩২ দশমিক ৭৭ শতাংশ। ভালুকায় দারিদ্র্য কম ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ, এই বিভাগে বেশি দরিদ্র মানুষের বসবাস জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় ৬৩ দশমিক ২ শতাংশ। রাজশাহী বিভাগে গড় দারিদ্র্য হার ২৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ, এই বিভাগে কম দারিদ্র্য রাজশাহীর বোয়ালিয়া উপজেলায় মাত্র ৯ শতাংশ, বেশি নওগাঁর পোরশায় ৪৮ দশমিক ৭ শতাংশ। 

রংপুরে গড় দারিদ্র্য ৪৭ দশমিক ২৩ শতাংশ, বেশি দারিদ্র্যপ্রবণ এলাকা কুড়িগ্রামের চর রাজিবপুরে ৭৯ দশমিক ৮ শতাংশ, সবচেয়ে কম দারিদ্র্যপ্রবণ এলাকা অঞ্চগড়ের অটোয়ারী ৯ দশমিক ৩ শতাংশ।

সিলেটে গড় দারিদ্র্যের হার ১৬ দশমিক ২৩ শতাংশ, এই বিভাগে কম দারিদ্র্যপ্রবণ উপজেলা সিলেটের বিশ্বনাথ ১০ দশমিক ৪ শতাংশ, বেশি দারিদ্র্য সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলা ৬০ দশমিক ৯ শতাংশ। 

এসময় পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির কান্ট্রি ডিরেক্টর জেনি পিয়ার্সি উপস্থিত ছিলেন। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বিবিএস মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। বিবিএস-এর প্রভার্টি অ্যান্ড আন্ডার নিউট্রিশন ম্যাপিংসের ফোকাল পয়েন্ট মো. আলমগীর হোসেন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

এসআর/জেডএস