রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ ওয়াকিটকি সেট বিক্রয়কারী চক্রের প্রধানসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের এলিট ফোর্স র‌্যাব। এসময় বিপুল সংখ্যক অবৈধ ওয়াকিটকি সেট এবং যন্ত্রাংশ উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তাররা হলেন- অলেফিল ট্রেড করপোরেশন নামক প্রতিষ্ঠানের মালিক আব্দুল্লাহ আল সাব্বির (৩৩), তার সহযোগী মো. আল মামুন (২৭)।

রোববার (২২ মে) রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় র‌্যাব-৩ এর দল ও বিটিআরসি যৌথ অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করে।

সোমবার (২৩ মে) রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, র‌্যাব-৩ গোয়েন্দা সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেশের প্রচলিত আইন অমান্য করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বেশি মুনাফা লাভের আশায় অবৈধভাবে অপরাধীদের কাছে কালো রঙের ওয়াকিটকি সেট দীর্ঘদিন ধরে বিক্রি করে আসছে। কিন্তু বিটিআরসির নির্দেশনা অনুযায়ী সরকারি প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি কর্তৃক কালো রঙের ওয়াকিটকি সেট ব্যবহার করা দণ্ডনীয় অপরাধ।

এরই ধারাবাহিকতায় রোববার রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় যৌথ অভিযান পরিচালনা করে অলেফিল ট্রেড করপোরেশন নামক প্রতিষ্ঠানের মালিক আব্দুল্লাহ আল সাব্বির ও আল মামুনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

অভিযানে রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও গুলিস্তান স্টেডিয়াম মার্কেটে পরপর অভিযান পরিচালনা করে ওয়াকিটকি সেট ১৬৮টি, ওয়াকিটকি সেটের ব্যাটারি ৩৫টি, চার্জার ৩২টি, অ্যান্টেনা ৬৩টি, মাউথ স্পিকার ৬টি এবং ব্যাক ক্লিপ ৬টি উদ্ধার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, অলেফিল ট্রেড করপোরেশন নামক প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট এবং ফেসবুক পেজের মাধ্যমে তারা দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বেতার যন্ত্র ওয়াকিটকি সেট নিজেদের হেফাজতে রেখে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে আসছিল।

কিন্তু তাদের হেফাজত থেকে উদ্ধার করা এসব ওয়াকিটকি যন্ত্রাংশ ও ওয়াকিটকি সেট ব্যবহারের লাইসেন্স ও কারিগরি গ্রহণযোগ্যতা সংক্রান্ত সনদ বা কোনো ধরনের বৈধ কাগজপত্র প্রদর্শন করতে পারেনি।\

উদ্ধার করা এসব ওয়াকিটকি সেটের ফ্রিকোয়েন্সি ২৪৫-২৪৬ মেগাহার্জ। এসব ওয়াকিটকি ব্যবহার করে রিপিটার ছাড়া অর্ধ কিলোমিটার পর্যন্ত যোগাযোগ করা সম্ভব। এছাড়াও বহুতল ভবনের মধ্যে উপরতলা থেকে নিচতলায় যোগাযোগ করা সম্ভব। এসব ওয়াকিটকির দাম পাঁচ হাজার থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা পর্যন্ত। ব্যাটারির চার্জ ধারণের ক্ষমতা অনুযায়ী ওয়াকিটকির দামের তারতম্য হয়ে থাকে।

দেশের সাধারণ জনগণ ওয়াকিটকি বহনকারী একজন ব্যক্তিকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ওয়াকিটকি সেট ব্যবহার করে অপরাধীরা ভুয়া ডিবি, র‌্যাব সদস্য, ডিজিএফআই সদস্য, এনএসআই সদস্য এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে ডাকাতি, রোড ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়সহ মারাত্মক অপরাধ সংগঠিত করে আসছে। এতে একদিকে যেমন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে, অন্যদিকে প্রকৃত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর যখন সাদা পোশাকে দায়িত্বপালনের প্রয়োজন হয় তখন জনসাধারণ তাদেরকে ভুয়া আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ভেবে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়।

ওয়াকিটকির মাধ্যমে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করে অপরাধ সংগঠন করলে পরে অপরাধী শনাক্তকরণে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হবে। যা সার্বিক নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। গ্রেপ্তাররা কাদের কাছে ওয়াকিটকি সেট বিক্রি করছে সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্যও তারা দিতে পারেনি।

গ্রেপ্তার আব্দুল্লাহ আল সাব্বির অলেফিল ট্রেড কর্পোরেশন নামক প্রতিষ্ঠানের মালিক। তিনি দীর্ঘ ৫ বছর ধরে অবৈধভাবে ওয়াকিটকি সামগ্রী বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে আসছেন। গ্রেপ্তার আল মামুন দুই বছর ধরে তার সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন। এ পর্যন্ত তারা দুই শতাধিক ওয়াকিটকি বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে অবৈধভাবে বিক্রি করেছে। তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

জেইউ/জেডএস