সহিংসতার ভয় মোকাবিলায় তরুণদের সাহস ও আত্মপ্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে আসার পাশাপাশি প্রয়োজন অবকাঠামোগত উন্নয়ন ভাবনা। বুধবার (২৫ মে) রাজধানীর শেরাটন হোটেলে ‘সহিংসতার ভয় আর নয়’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে আলোচকরা এ মত দিয়েছেন।

সংলাপের আয়োজন করে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ ও জাগো ফাউন্ডেশন। এতে আলোচকরা ‘সহিংসতার ভয়’ বিষয়ক জাতীয় পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করার পাশাপাশি তুলে ধরেন এ ভয় কীভাবে দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলে এবং কীভাবে সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এ ভয়কে জয় করা সম্ভব।

সংলাপে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মুহিবুজ্জামান বলেন, সরকার নারীদের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে এবং সব সরকারি ব্যবস্থায় নারীদের সম্পৃক্ত করছে। আমরা লিঙ্গ সংজ্ঞায়িত দায়িত্ব ভাগাভাগি পরিবর্তনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা তরুণদের এই প্রক্রিয়ায় যোগ দিতে উৎসাহিত করছি। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাসলিমা ইয়াসমিন বলেন, অবকাঠামোগত পরিবর্তন জরুরি, যেন ভয়ের ক্ষেত্রগুলোকে প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। পাশাপাশি জোর দিতে হবে সাপোর্ট সিস্টেম তৈরিতে। সেজন্য সম্মিলিত এবং সমন্বিত উপায়ে যুবদের সচেতনভাবে কাজ করতে হবে।

নারীপক্ষের সদস্য কামরুন নাহার বলেন, আমরা মুক্তি চাই, রক্ষা চাই না। নারী হওয়ার জন্য আমাদের সঙ্গে যা যা ঘটে, বা ঘটতে পারে— সবই সহিংসতা। কী কী ঘটে তা নিয়ে কথা বললেও কী ঘটতে পারে— সেই ভয় নিয়ে আমরা কথা বলি খুবই কম।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, তরুণরা যখনই কোনো সহিংসতার মুখোমুখি হন, তখনই তাদের এগিয়ে আসা উচিত এবং নিজেদের জন্য উঠে দাঁড়াতে হবে। তাদের সব বৈষম্য এবং সহিংসতাকে সব অবস্থাতেই চ্যালেঞ্জ করতে হবে।

প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ গার্লস রাইট পরিচালক কাশফিয়া ফিরোজ সংলাপ পরিচালনা করেন। তিনি বলেন, এসডিজি মাথায় রেখে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ আগামী ১০ বছরের কৌশলপত্র তৈরির সময় কিশোর-কিশোরী ও যুবদের সঙ্গে আলোচনা করে এবং তাদের মতামতের ভিত্তিতে আগামী ১০ বছরের জন্য সহিংসতার ভয় নিয়ে কাজ করার প্রত্যয় নির্ধারণ করা হয়। প্রায় ১২ হাজার অংশগ্রহণকারীর ওপর জরিপ পরিচালনার মাধ্যমে আমরা জানতে পারি, ৮১ দশমিক ৬ শতাংশ নারী গণপরিসরে বিভিন্ন রকম হয়রানির শিকার হয়। ৮৬ দশমিক ৮ শতাংশ নারী ও কিশোরী জানান তারা নিজ পরিবারেই বিভিন্ন ধরনের সহিংসতার শিকার হয়েছেন। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৭৪ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী তাদের শিক্ষক, সিনিয়র স্টুডেন্ট  দ্বারা বিভিন্ন বিরূপ ও অশালীন মন্তব্যের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেন।

অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বিরূপ মন্তব্যের শিকার হওয়ার কথা জানান অংশগ্রহণকারীদের ৫৭ শতাংশ, আর কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার কথা জানিয়েছেন অংশগ্রহণকারীদের ৫৬ শতাংশ। যা তাদের মনে দীর্ঘমেয়াদি ভয় সঞ্চার করে। জরিপ  থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে আমরা জানতে পারি, ভয়ের কারণে অনেক সময় বাবা-মায়েরা মেয়েদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, খেলাধুলা, পিকনিকে অংশগ্রহণ করতে দিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। সহিংসতা তো বটেই, সহিংসতার ভয় তরুণদের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ। ভয় দূর করা সম্ভব হলেই তরুণরা তাদের সম্ভাবনার পূর্ণ বিকাশ করতে পারবে।

আয়োজকরা জানান, জাতীয় সংলাপটি ছিল প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ ও জাগো ফাউন্ডেশনের প্রচারণার একটি অংশ, যা বাংলাদেশের চারটি বিভাগে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের সঙ্গে শুরু হয়েছিল, যেখানে যুবকদের ‘সহিংসতার ভয়’ সম্পর্কে সংবেদনশীল করা হয়েছিল এবং টেকসই বৃদ্ধির জন্য এই সমস্যাটি কীভাবে প্রশমিত করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছিল।

এএসএস/আরএইচ