মিরপুরের বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানায় শিশুরা এখন আগের চেয়ে বেশিই আনন্দ উপভোগ করে। কেননা, ভেতরের শিশুপার্কটি চালু রয়েছে। চিড়িয়াখানার জীবন্ত প্রাণী দেখার পাশাপাশি শিশুরা এখানে দুটি রাইডে চড়তে পারে। তাছাড়া দোলনায় দোলাও যায়। এতে শিশুরা বেশ উচ্ছ্বসিত। 

২০১৯ সালে শাহবাগের জাতীয় শিশুপার্ক বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে রাজধানীর শিশুরা বিনোদন থেকে অনেকটাই বঞ্চিত। চিড়িয়াখানায় গত বছরের শেষে চালু হওয়া পার্কটি সেই বঞ্চনা থেকে শিশুদের কিছুটা হলেও মুক্তি দিয়েছে, পাশাপাশি অভিভাবকদেরও স্বস্তি দিয়েছে। 

গেল বুধবার (২৫ মে) জাতীয় চিড়িয়াখানার পার্কটি ঘুরে দেখা যায়, অনেক শিশুই এখানে এসেছে। মেরি গো রাউন্ড ও ট্রাভেল কার নামে দুটি রাইডে চড়ছে তারা। প্রতি রাইডের জন্য একেকজনকে ৪০ টাকার টিকিট কাটতে হয়। শিশুদের সঙ্গে আনন্দে মেতেছেন বড়রাও। তারাও শিশুদের রাইড উপভোগ করছেন।

উত্তরা থেকে মায়ের সঙ্গে চিড়িয়াখানার পার্কে ঘুরতে আসা শিশু আদ্রিকা আফরোজ বলে, অনেক ভালো লাগছে। আমি মায়ের সঙ্গে এখানে এসেছি। বানর দেখেছি, জিরাফ দেখেছি। ট্রাভেল কারে চড়েছি। আমি আবার আসব। 

বাড্ডা থেকে বাবা-মায়ের সঙ্গে ঘুরতে আসা শিশু সংকল্পও আদ্রিকার মতো খুশি। তারও অনেক ভালো লাগছে। ট্রাভেল কারে চড়েছে, দোলনায় দোল খেয়েছে বলে জানায় সে। সেও এখানে আবার আসতে চায়।   

মোহাম্মদপুর থেকে আসা অভিভাবক আনান বিন মোর্শেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, অনেকদিন পর বাচ্চাকে নিয়ে চিড়িয়াখানায় এসেছি। আগে জানতাম না, এখানে শিশুপার্ক আছে। ঘুরতে ঘুরতে দেখলাম শিশুপার্ক। সেখানে দেখি মেরি গো রাউন্ড ও ট্রাভেল কার আছে। শাহ্‌বাগের শিশুপার্ক বন্ধ হওয়ার পর ঢাকায় এসব চোখে পড়েনি। বাচ্চাকে এসব রাইডে চড়ালাম। ওর আনন্দ দেখে আমার বেশ ভালো লেগেছে।

আরেক অভিভাবক রাফিউন নাহার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঢাকায় এখন স্বল্প খরচে শিশুদের বিনোদনের জন্য তেমন কোনো জায়গা নেই। যেসব জায়গা আছে, সেখানে অনেক টাকা ব্যয় হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য স্বল্প, খরচের মধ্যে এমন কিছু চিড়িয়াখানায় এসে পাব, তা ভাবিনি। খুবই ভালো লেগেছে। কর্তৃপক্ষ এমন আরও ভালো উদ্যোগ শিশুদের জন্য নিতেই পারে।

শিশুপার্ক সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. মুজিবুর রাহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত বছরের শেষের দিকে শিশুপার্কটি চালু হয়। চালু হওয়ার পর থেকে অভিভাবকদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। আমি যখনই দেখতে যাই, গিয়ে দেখি মানুষজনের লাইন রয়েছে। লাইন থাকা মানে হলো, লোকজন এখানে আসে।

তিনি আরও বলেন, শিশুপার্কে আমরা দোলনার সংখ্যা বাড়াব। তবে সেগুলো শুধুমাত্র শিশুদের জন্যই থাকবে। এখনকার দোলনাগুলো বড়। ফলে বড়রাও সেই দোলনায় চড়ে। বড়রা চড়ার কারণে দোলনাগুলো অনেক সময় ছিঁড়ে যায়। যেহেতু এটা শিশুপার্ক, তাই এখানের সবকিছুই থাকবে শিশুদের উপযোগী।

চিড়িয়াখানাকে ঘিরে নেওয়া হচ্ছে এক মহাপরিকল্পনা, যা বাস্তবায়ন হলে চিড়িয়াখানা হবে আধুনিক এবং আরও সৌন্দর্যমণ্ডিত। এ মহাপরিকল্পনার তৈরির কাজ গত বছরের জুন মাসের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে মহামারি করোনার কারণে তা পিছিয়ে যায়। এখনো চলছে পরিকল্পনা তৈরির কাজ।  
 
এমএইচএন/আরএইচ