পবিত্র হজ পালনের উদ্দেশে রোববার (৫ জুন) থেকে বিমানে যাত্রা শুরু করবেন হাজীরা। কিন্তু কবে হজ ফ্লাইট তা এখনও অজানা অধিকাংশ হজযাত্রীর। যাত্রীরা বলছেন, কবে, কোন সময় ফ্লাইট সেসবের কিছুই এখনও জানায়নি হজ কর্তৃপক্ষ। ফলে অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে হজ যাত্রীদের।

বরিশাল থেকে আসা হজযাত্রী শিক্ষক আনিসুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি ২০২০ সালে হজে যাওয়ার জন্য টাকা দিয়েছি। করোনার কারণে যেতে পারিনি। দুই বছর পর এবার যখন সরকার ১৫ মে থেকে ২২ মে পর্যন্ত সময়ে নতুন করে আরও ১ লাখ ২ হাজার করে টাকা জমা দিতে বলল, আমি টাকা জমা দেওয়ার জন্য ভাউচার আনতে গিয়ে দেখি অনলাইনে ভাউচার নেই। বরিশাল অফিস থেকে আমার ভাউচার হাওয়া হয়েছে। ওখান থেকে বলা হয়, আপনি ভাউচার নিয়ে গেছেন, অথচ আমি কিছুই জানি না।

এরপর বরিশাল থেকে ১৭ মে ঢাকা হাজি ক্যাম্পে আসি। পরিচালক স্যারের কাছে অভিযোগ করি। এরপর তিনি ব্যবস্থা নিয়েছেন। আমি ১৮ তারিখে ভাউচার পেয়েছি। এরপর টাকা জমা দিয়েছি। টাকা জমা দেওয়ার সময় হজ অফিসের কর্মকর্তাদের বলেছি, প্রথম দিকে আমাকে হজ ফ্লাইটে যেতে দেওয়ার জন্য। রোববার থেকে ফ্লাইট শুরু। কিন্তু এখনো আমার ফ্লাইটের তারিখ জানায়নি তারা।

আপনি কর্তৃপক্ষের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হজ পরিচালক স্যারের কাছে গিয়েছি, তিনি বলেছেন, মোবাইল ফোনে এসএমএস যাবে।

স্ত্রীকে নিয়ে হজে যাবেন অবসরপ্রাপ্ত এই শিক্ষক। তিনি বলেন, আমরা দুজনই হজের প্রশিক্ষণ শেষ করেছি সরকারিভাবে। যাতে কোনো সমস্যা না হয়। আর এখানে শুধু ভোগান্তি আর ভোগান্তি। কষ্টের শেষ নেই।

পাবনা থেকে আসা হজযাত্রী আশিক বিল্লাহ বলেন, দুই দিন হজ অফিসে দৌড়-ঝাপ করে হজের প্যাকেজ-২ এর টাকা জমা দিয়েছি। ঢাকায় এসে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছি। কিন্তু এখনও জানতে পারিনি ফ্লাইট কবে হবে। ফ্লাইটের তারিখ ও টিকিট কিছুই পাইনি। কবে যাব হজে তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় আছি।

তিনি বলেন, টাকা জমা দেওয়ার সময় দেখি আমার স্ত্রীর জায়গায় আরেক পুরুষের ছবি। এটি পরিবর্তন করার জন্য দুই দিন অপেক্ষা করতে হয়েছে। টাকা দিতে গিয়ে ব্যাংকেও সার্ভার নেই বলায় একদিন অপেক্ষা করতে হয়েছে। এত কষ্ট করে টাকা জমা দেওয়ার পরও ভিসা ও বিমানের টিকিট পাইনি।

একইভাবে কষ্টের কথা জানান ময়মনসিংহের হজযাত্রী নজরুল ইসলাম। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, বেসরকারিভাবে গেলে ঝামেলা বেশি, টাকাও বেশি লাগে। তাই সরকারিভাবে হজ পালনের জন্য আবেদন করেছি। দুই বছর আগে টাকা জমা দিয়েছি। এরপর আরও দুই দফা টাকা দিয়েছি। কিন্তু এখনও জানি না কবে হজে যাব, টিকিটও পাইনি। হজ কর্মকর্তারা বলছেন, ধৈর্য ধরুন, আপনাদের এসএমএসের মাধ্যমে সময় জানানো হবে।

এ বিষয়ে হজ পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মো. সাইফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভিসা জটিলতার কারণে সবাইকে এসএমএস দেওয়া হয়নি। যারা ভিসা পেয়েছেন তাদেরই কনফার্ম করা হয়েছে। আগামীকাল (রোববার) থেকে তারাই যাবেন।

তিনি বলেন, দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই, সবাই যেতে পারবেন। সৌদি দূতাবাসের সঙ্গে আমরা কথা বলছি। অন্তত দুই দিন আগে সবাইকে জানানো হবে।

এবার হাজীদের প্রথম ফ্লাইট যাবে রোববার (৫ জুন)। বাংলাদেশ থেকে হজে যাচ্ছেন মোট ৫৭ হাজার ৫৮৫ জন। এর মধ্যে সরকারিভাবে যাচ্ছেন ৪ হাজার ৫৬৪ জন। আর বাকিরা যাচ্ছেন বেসরকারিভাবে। মোট যাত্রীদের অর্ধেক হজযাত্রী আনা নেওয়া করবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। যাওয়া-আসা মিলিয়ে ৬৫টি করে মোট ১৩০টি ফ্লাইট পরিচালনা করবে তারা। বাকিরা বেসরকারি বিমানগুলোর মাধ্যমে আসা-যাওয়া করবেন।

এবার সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাওয়ার এক নম্বর প্যাকেজের মোট খরচ ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৩৪০ টাকা। আর প্যাকেজ-২-এর খরচ হবে ৫ লাখ ২১ হাজার ১৫০ টাকা। অন্যদিকে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যেতে সর্বনিম্ন খরচ ৫ লাখ ২২ হাজার ৭৪৪ টাকা।

যাদের বয়স ৬৫ বছরের নিচে শুধু তারাই এবার হজে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। তাদের অবশ্যই দুই ডোজ করোনার টিকা নেওয়া থাকতে হবে। তাছাড়া যাওয়ার সময় করোনার নেগেটিভ সনদ নিয়ে যেতে হবে, আর স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে কঠোরভাবে।

বৃহস্পতিবার বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সালেহ মোস্তফা কামাল বলেন, অন্য বছর হজযাত্রী পরিবহনে আমরা দুই থেকে আড়াই মাস পর্যন্ত সময় পেতাম। এবার এক মাসেরও কম সময় পেয়েছি। নির্ধারিত সময় তথা ৫ জুন থেকেই হজ ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। বিমান মোট ৭৫টি হজ ফ্লাইট পরিচালনা করবে এবং যাত্রীপ্রতি ভাড়া হবে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

এমআই/এসএসএইচ