আগামী ২৫ জুন বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু জমকালো আয়োজনে উদ্বোধন করা হবে। এটি নস্যাৎ করতে একটি মহল আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। এর স‌ঙ্গে রাজ‌নৈ‌তিকভা‌বে বিএনপি-জামায়াত জড়িত রয়েছে বলে দাবি করেছেন গার্মেন্টস শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান। 

রোববার (৫ জুন) রাজধানীর শ্রম ভবনে মিরপুরে গার্মেন্টসে শ্রম অসন্তোষ নিরসনের লক্ষ্যে ত্রিপক্ষীয় সভায় জরু‌রি সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন।

এর আগে দুপুর দেড়টার দিকে রাজধানীর মিরপুরে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। আন্দোলনরত শ্রমিকরা ইট-পাটকেল ছুড়ে গাড়ি ভাঙচুর করেন। পরে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

আন্দোলন প্রসঙ্গে শাজাহান খান বলেন, আপনারা জানেন আগামী ২৫ জুন বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু জমকালো আয়োজনে উদ্বোধন করা হবে। এ সেতুর কারণে দেশের জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন বা গ্রোস ডমেস্টিক প্রডাক্ট) প্রায় দুই শতাংশ বেড়ে যাবে। সেই অনুষ্ঠান যাতে জমকালোভাবে উদ্বোধন না করতে পারি, এমন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাইছে তারা। আমরা শুনেছি কিছু কিছু কারখানায় গিয়ে লোকজন গিয়ে শ্রমিকদের বের করার চেষ্টা করেছে। আবার অনেক লোকজন জিন্স পরা লাঠি হাতে নিয়ে তারা রাস্তায় মিছিল করছে। এরা কারা? এরা কিন্তু শ্রমিক নয়। শ্রমিক হলে হাতে লাঠি থাকত না। একইসঙ্গে কয়েকটি স্থানে এ আন্দোলন ছড়িয়ে দিয়ে লোভনীয় অফারের কথা বলা হচ্ছে যে, তাদের বেতন ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা বাড়ানো হবে। আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও বলা হচ্ছে আপনারা রাস্তায় নেমে আসুন, বেতন বাড়ানো হবে, এমন উস্কানি দেওয়া হচ্ছে। আমি মনে করি এর পেছনে বিএনপি-জামায়াত স্বাধীনতাবিরোধীরা জড়িত। তাদেরকে মদদ দিচ্ছে পথহারা কিছু রাজনীতিক। এরা হচ্ছে মাহমুদুর রহমান মান্নার মত লোকজনরা।  

শ্র‌মিকরা‌ কো‌নো নাশকতামূলক কাজ করে না, এক‌টি পক্ষ আ‌ন্দোল‌নের না‌মে নাশকতা কর‌ছে দাবি করে শাজাহান খান বলেন,  আ‌ন্দোলন‌ চলাকা‌লে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দা‌বি ক‌রে স্লোগান দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী কি গা‌র্মে‌ন্টের মা‌লিক? তাহ‌লে তা‌কে কেন পদত্যাগ কর‌তে বলা হ‌বে। এ‌তেই বোঝা যাচ্ছে এই আ‌ন্দোল‌নের উ‌দ্দেশ্য ভিন্ন। বলা হয় ৭৫-এর হা‌তিয়ার গ‌র্জে উ‌ঠো আ‌রেকবার। তার মানে তারা প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা করতে চায়।

তিনি বলেন, আমরা বেতন ভাতা বাড়া‌তে দা‌বি নি‌য়ে আ‌ন্দোলন কর‌বে। কিন্তু সেটা হ‌বে নিয়মতা‌ন্ত্রিক।‌ অর্থাৎ একটা বিধান অনুযায়ী। ৫ বছর পরপর একটা মজুরি বোর্ড গঠন হবে। সেই মজুরি বোর্ড শ্রমিক-মালিক ও সরকার পক্ষের সঙ্গে বসে আলাপ আলোচনা করে মজুরি নির্ধারণ করবে। আগামী ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে এ মজুরি কাঠামো গঠন হবে। এর আগে আগামী বছরের শুরুতে অর্থাৎ মে-জুনের আগেই মজুরি বোর্ড ঘোষণা করা হবে।

তিনি জানান, এই মুহূর্তে মজুরি বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। এখন যদি গার্মেন্টে মজুরি বাড়ানো হয় তাহলে সব খাতে মজুরি বাড়াতে হবে। তাই এখন মজুরি বাড়ানো যাবে না। শ্রমিকদের মজুরি সংক্রান্ত বিষয়টি পূর্ব নির্ধারিত সময়মতো সরকার ও মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। শ্রমিকদেরকে কাজে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান শাহজাহান খান।

সভায় জানানো হয়, আন্দোলনরত শ্রমিকরা কোন সেক্টর বা প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক; কোন শ্রমিক সংগঠনের ইন্ধনে আন্দোলন করছে, এ
বিষয়ে উপস্থিত শ্রমিক নেতারা অবগত নন। তবে উপস্থিত শ্রমিক নেতারা শ্রম আইনের বিধিবিধান অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট পন্থা অবলম্বন করে মজুরি বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়ার পক্ষে মতামত দেন।

মালিকপক্ষের প্রতিনিধিরা জানান, চলমান আন্দোলনকে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডসহ পোশাক শিল্পের অগ্রগতিকে ব্যাহত করার লক্ষ্যে একটি বৃহৎ ষড়যন্ত্রের অংশ। তবে শ্রমিকদের ন্যায়সঙ্গত দাবি দাওয়া শ্রম আইন ও বিধি অনুযায়ী প্রতিপালনে মালিকপক্ষ সর্বদাই সচেষ্ট মর্মে মত প্রকাশ করেন।

আগামী ৬ জুন সোমবার থেকে কারখানা যথারীতি খোলা থাকবে বলে শ্রমিক ও মালিকপক্ষের প্রতিনিধিরা সভায় জানান।

সভায় সভাপতিত্ব করেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (যুগ্মসচিব) মিনা মাসুদ উজ্জামান। এছাড়া শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, শ্রমিক সংগঠনের নেতারাসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের স্টেকহোল্ডাররা উপস্থিত ছিলেন।

এসআই/জেডএস