‘স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে চিপার মধ্যে পড়ে গেছি’—বলে মন্তব্য করেছেন পটুয়াখালী ৩ আসনের সংসদ সদস্য এসএম শাহাজাদা। রোববার একাদশ জাতীয় সংসদের অষ্টাদশ অধিবেশনের প্রশ্নোত্তর পর্বে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার এ সংসদ সদস্য সম্পূরক প্রশ্নে এমন মন্তব্য করেন।

এস এম শাহজাদা বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকার দুটি উপজেলা। একটির নাম গলাচিপা। নামের সঙ্গে এ উপজেলার স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কিছুটা চিপার মধ্যেই পড়ে গেছি। এ উপজেলার একটি অংশ, যা এখন রাঙ্গাবালী নামের উপজেলা। সেটি এখন পটুয়াখালী-৪ আসনের ভেতরে। ওখানে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নেই। আবার আমার গলাচিপাতে যে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি আছে, সেটা বেশ আগের। এটা জীর্ণ-শীর্ণ অবস্থায় আছে। এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেতরে একাধিক ভবন রয়েছে, যেগুলো জীর্ণশীর্ণ হওয়ায় পরিত্যক্ত ঘোষণা হয়েছে। এ উপজেলায় পাঁচ লাখ জনসংখ্যা। পার্শ্ববর্তী উপজেলায় (রাঙ্গাবালী) আরও প্রায় আড়াই লাখ লোক রয়েছে। দুই উপজেলার স্বাস্থ্যসেবা পরিচালনা হয় এ স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে।

তিনি বলেন, আমি আড়াই বছর আগে মন্ত্রীকে পত্র দিয়েছিলাম স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য। আমি এখনো স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি পাইনি।  সাত লাখ লোক স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে চিপার ভেতরে আছে। জানতে চাই এখানে নতুন স্বাস্থ্য কেন্দ্র নির্মাণ হবে কি না, হলে সেটা কবে?

পরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী তার জবাবে বলেন, সরকার জীর্ণশীর্ণ সব স্বাস্থ্যকেন্দ্র নতুন করে নির্মাণ করে দিচ্ছে। এ উপজেলার স্বাস্থ্য কেন্দ্র সে ধরনের হলে সরকার তা পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নেবে।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও কিশোরগঞ্জের সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু তার প্রশ্নে করোনা টিকা কতজনকে দেওয়া হয়েছে, কতগুলো টিকা কেনা হয়েছে এবং উপহার পাওয়া গেছে এবং প্রতিটি টিকা কেনার পেছনে সরকারের ব্যয় কত হয়েছে— তা জানতে চান।  জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী চুন্নুর কাছে লিখিত প্রশ্ন চেয়ে বলেন, এ পর্যন্ত সাড়ে ৩০ কোটি করোনা টিকা সরকার সংগ্রহ করেছে। এর মধ্যে ২৬ কোটি টিকা দেওয়া হয়েছে। এক ডোজ করে টিকা দেওয়া হয়েছে ১৩ কোটি মানুষকে, দুই ডোজ করে দেওয়া হয়েছে পৌনে ১২ কোটি এবং দেড় কোটি মানুষকে বুস্টার ডোজ দেওয়া হয়েছে। সেটা এখন চলছে।

সরকার প্রায় ১৮ কোটি ডোজ কিনেছে এবং বাকিটা কোভেক্স থেকে পেয়েছে বলে জানান তিনি। দামের বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দাম এখন মনে নেই। আপনি যদি নোটিশ দেন, তাহলে সবগুলোর দাম এবং কোথা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে বলতে পারব।

২০২১-২২ অর্থবছরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের ৪১ শতাংশ হয়েছে। কী কারণে বরাদ্দ করা অর্থ ব্যয় করা যায়নি— স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে জানতে চান বিএনপির সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা। জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনার কারণে কিছু কাজ ব্যাহত হয়েছে। এ খাতে শ্রমের মূল্য প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। উন্নয়ন বাজেটের ৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের মধ্যে ৪০ শতাংশ ব্যয় হয়েছে। জুন মাস শেষের আগে ৯০ শতাংশের বেশি খরচ হয়ে যাবে এবং লক্ষ্য অর্জন হয়ে যাবে। কারণ এখনো অনেকগুলো বিলের অর্থ পরিশোধ হয়নি। অনেকগুলো মাল এখনো পৌঁছায়নি, যেসবের বিল দেওয়া হয়নি। জুনের আগে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

অবৈধ হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোয় সরকারকে ধন্যবাদ জানান বিএনপির দলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ। তবে, এখনো জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের অনেক আওয়ামী লীগ নেতা পরিচালিত হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে দাবি করেন তিনি। চিকিৎসা সেবায় কত জনবল খালি রয়েছে, সেটা কবে নাগাদ পূরণে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, জানতে চান তিনি।

সরকার সবসময় দেশের মানুষকে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে দাবি করে মন্ত্রী বলেন, যারা ভালো সেবা দেবে না, তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব। আমরা দলীয় বিচারে ব্যবস্থা নিই না। আপনারা (বিএনপি) নেন, কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে মানুষকে সেবা বঞ্চিত করেছেন। কিন্তু আমরা দলীয় বিচারে কোন হাসপাতাল-ক্লিনিক বন্ধ করিনি। যাদের লাইসেন্স নবায়ন নেই, ডাক্তার ও নার্স নেই, তাদের হাসপাতাল-ক্লিনিক বন্ধ করা হয়েছে। এগুলো ঠিক করলে আবারও চালু করে  দেব।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের কতজন মানুষ বাইরে চিকিৎসা নেন? করোনার লকডাউনের সময় দেশেই ১৭ কোটি মানুষকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। কিছু কিছু বিশেষায়িত হাসপাতাল ছিল না। কিন্তু এখন বিভাগীয় পর্যায় পর্যন্ত ক্যান্সার, চিকিৎসা, কিডনি ডায়ালাইসিস ও হার্টের জন্য হাসপাতাল নির্মাণ হচ্ছে। এগুলো হয়ে গেলে দেখা যাবে সবাই চিকিৎসা দেশে নিচ্ছেন। এসব চিকিৎসা নেওয়ার জন্যই কিছু লোক বিদেশে যান। কিছু লোক বাইরে সবসময়ই যাবে। তবে, সাধারণ জনগণকে দেশেই চিকিৎসা দিচ্ছি।

এইউএ/আরএইচ