আসন্ন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে অংশ নেওয়া সক প্রার্থীর ব্যয়ের হিসাব রিটার্নিং অফিসারের কাছে দিতে হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচন শেষে ফলাফলের গেজেট প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে এই হিসাব জমা দিতে হবে। কুসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তাকে ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপ-সচিব মো. আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বিষয়টি জানানো হয়। 

ইসির চিঠিতে জানানো হয়, নির্বাচনের সব প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের ব্যয়ের হিসাব ভোটের ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দিতে হবে। যার কপি নির্বাচন কমিশনেও (ইসি) পাঠাতে হবে।

আগামী ১৫ জুন কুসিক নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করা হবে। নির্বাচনে মেয়র পদে ছয়জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। তারা হলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত আরফানুল হক রিফাত, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. রাশেদুল ইসলাম, স্বতন্ত্র হিসেবে কামরুল আহসান বাবুল, মো. মনিরুল হক সাক্কু (বিএনপি নেতা ও দুইবারের মেয়র), মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন ও মাসুদ পারভেজ খান। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মাসুদ পারভেজ খান মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। অর্থাৎ মেয়র পদে ভোটের লড়াইয়ে থাকছেন পাঁচ প্রার্থী।

এছাড়া সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর মিলে ১৪০ জনের মতো প্রার্থী থাকছেন ভোটের মাঠে। সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদের ক্ষেত্রে ৫ নম্বর ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডে দুজন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এক্ষেত্রে নির্বাচনে অংশ নেওয়া সকল প্রার্থীকেই ব্যয়ের হিসাব দিতে হবে।

মেয়র প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয়ের সীমা 

নির্বাচন বিধিমালায় বলা হয়েছে, মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ব্যক্তিগত খরচ বাবদ, অনধিক পাঁচ লাখ ভোটার সম্বলিত সিটি কর্পোরেশনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার টাকা, ৫ লাখ ১ থেকে ১০ লাখ ভোটার সম্বলিত সিটি কর্পোরেশনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা, ১০ লাখ ১ থেকে ২০ লাখ ভোটার সম্বলিত সিটি কর্পোরেশনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ২০ লাখ ১ থেকে তদূর্ধ্ব ভোটার সম্বলিত সিটি কর্পোরেশনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবেন।

এছাড়া নির্বাচনী ব্যয় বাবদ অনধিক পাঁচ লাখ ভোটার সম্বলিত সিটি কর্পোরেশনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা, পাঁচ লাখ ১ থেকে ১০ লাখ ভোটার সম্বলিত সিটি কর্পোরেশনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা, ১০ লাখ ১ থেকে ২০ লাখ ভোটার সম্বলিত সিটি কর্পোরেশনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টাকা এবং ২০ লাখ ১ ও তদূর্ধ্ব ভোটার সম্বলিত সিটি কর্পোরেশনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবেন।

কুসিকের ২৭টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার রয়েছে ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০জন। অর্থাৎ মেয়র পদের প্রার্থীরা ব্যক্তিগত খাতে ৭৫ হাজার টাকা এবং নির্বাচন খাতে ১৫ লাখ টাকাসহ মোট ১৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ব্যয় করতে পারবেন।

বিধিমালায় কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর ব্যয়

কাউন্সিলর প্রার্থী ব্যক্তিগত খরচ বাবদ, অনধিক ১৫ হাজার ভোটার সম্বলিত ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা, ১৫ হাজার ১ থেকে ৩০ হাজার ভোটার সম্বলিত ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা, ৩০ হাজার ১ থেকে ৫০ হাজার ভোটার সম্বলিত ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার এবং ৫০ হাজার ১ ও তদূর্ধ্ব ভোটার সম্বলিত ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় করতে পারবেন।

এছাড়া নির্বাচনী ব্যয় বাবদ, অনধিক ১৫ হাজার ভোটার সম্বলিত ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা, ১৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার ভোটার সম্বলিত ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা, ৩০ হাজার ১ হতে ৫০ হাজার ভোটার সম্বলিত ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৪ লাখ টাকা এবং ৫০ হাজার ১ ও তদূর্ধ্ব ভোটার সম্বলিত ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৬ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবেন।

কুসিকের ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটার রয়েছে ৩ নম্বর ওয়ার্ডে, ১৬ হাজার ৪৭৪ জন। আর সবচেয়ে কম ভোটার রয়েছে ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে, ৩ হাজার ৮৯৪জন। অর্থাৎ কাউন্সিলর প্রার্থীরা ওয়ার্ড ভেদে ব্যক্তিগত খাতে সর্বনিম্ন ১৫ হাজার ও সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা এবং নির্বাচন খাতে সর্বনিম্ন ১ লাখ টাকা ও সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবেন। ভোটের প্রচারপত্র বা প্রকাশনার মাধ্যমে অথবা অন্য কোনোভাবে ভোটারদের নিকট কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর অভিমত, লাখ্য বা উদ্দেশ্য উপস্থাপনের জন্য ব্যয়িত অর্থসহ তার নির্বাচন পরিচালনার জন্য দান, ঋণ, অগ্রিম জমা বা অন্য কোনোভাবে পরিশোধিত অর্থ 'নির্বাচনী ব্যয়' বলে গণ্য হবে।

আত্মীয়-স্বজনের (স্বামী বা স্ত্রী, মাতা, পিতা, পুত্র, কন্যা, ভ্রাতা বা ভগ্নি) কাছ থেকে ধার, কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার স্বেচ্ছা প্রদত্ত দান গ্রহণ করাকে ব্যয়ের উৎস দেখানো যাবে। এক্ষেত্রে কোনো উৎস থেকে কোনো অর্থ প্রাপ্ত হলে অর্থ প্রাপ্তির পর তাৎক্ষণিকভাবে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনকে জানাতে হবে। 

এদিকে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তার নির্বাচনী এজেন্ট ব্যতীত অন্য কারো মাধ্যমে নির্বাচন বাবদ কোনো অর্থ ব্যয় করতে পারবেন না। এক্ষেত্রে পুরো ব্যয় পরিচালনা করতে হবে তফসিলি ব্যাংকের নির্দিষ্ট একটি অ্যাকাউন্ট থেকে।

এসআর/এসকেডি