মোবাইল অপারেটরগুলো তাদের গ্রাহকের তুলনায় প্রয়োজনীয় তরঙ্গ না রাখায় কলড্রপ হচ্ছে বলে সংসদকে জানিয়েছেন টেলিযোগোযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। এ বিষয়ে অপারেটরগুলোর সঙ্গে নিয়মিত কথা হচ্ছে এবং তারা নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের কাজ এ বছরের মধ্যে না করলে জরিমানাসহ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান মন্ত্রী। 

মঙ্গলবার একাদশ জাতীয় সংসদের অষ্টাদশ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী সংসদকে এসব কথা বলেন।

মোস্তফা জব্বার বলেন, মাননীয় সংসদ সদস্য গোটা দেশের সবার মনের কথাই প্রকাশ করেছেন। আমিসহ এখানে এমন কেউ নাই যে কল ড্রপের শিকার হন নাই। একই নম্বরে একাধিকবার কল করতে হয়। বহু জায়গাতে নেটওয়ার্ক তো পাওয়া যায়ই না। সত্যিকার অর্থেই এটি একটি বড় সমস্যা।

তিনি বলেন, ২০০৯ সালে আমাদের মোবাইল ব্যবহারকারী ছিল মাত্র ৪ কোটি। এখন এটি ১৮ কোটির উপরে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে আমাদের ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ছিলেন সাড়ে ৭ লাখ। এখন এটা ১৩ কোটি অতিক্রম করে গেছে। আমরা যেটা লক্ষ্য করেছি প্রাথমিকভাবে এই সমস্যাটা পাওয়ার পর আমাদের কাছে মনে হয়েছে এটা একটু শেকড়ে সন্ধান করি।

মন্ত্রী বলেন, শেকড়ে সন্ধান করে আমরা যেটা খুঁজে পেয়েছি সেটি হচ্ছে আমাদের মোবাইল অপারেটররা যেমন গ্রামীণফোনের ৮ কোটির উপরে গ্রাহক আছে, রবির ৫ কোটির উপরে, বাংলালিংকের প্রায় ৪ কোটির মতো গ্রাহক আছে। টেলিটকের সব থেকে কম আছে। এই যে তাদের যে পরিমাণ গ্রাহক তার সঙ্গে যে পরিমাণ স্পেকট্রাম তাদের দরকার অর্থাৎ বেতার তরঙ্গ তাদের নেওয়া দরকার তারা তার তিন ভাগের এক ভাগও নেয়নি।

তিনি বলেন, তাদেরকে আমরা চাপ দেওয়ার পর এ বছর ৩১ মার্চ ১৯০ মেগাওয়ার্স তরঙ্গ দিতে পেরেছি। এই তরঙ্গটা এখন পর্যন্ত তারা রোলআউট করতে পারেনি। আমাকে তারা আশ্বস্ত করেছে যে এই রোল আউটের বিষয়টা তারা ২০২২ সালের ডিসেম্বরের ভেতরে করতে পারবে। আমি প্রত্যাশা করি, স্পেকট্রামটা যদি রোল আউট করতে পারে তাহলে যে অবস্থাটা আশা করি পুরোটা না হলেও অন্তত বেশিরভাগ সমাধানটা হয়ে যাবে।

মোস্তফা জব্বার বলেন, আমরা কিন্তু এক সময় টু-জি যুগে ছিলাম। পরে থ্রি-জি হয়ে ফোর-জির যুগে প্রবেশ করেছি। এই ২০২১ সালে আমরা ফাইভ-জির যুগেও প্রবেশ করেছি। এই যে আমাদের টেকনোলজির দিকে যাত্রা সেইটার সঙ্গে আমাদের যে প্রতিষ্ঠানগুলো আছে সেই প্রতিষ্ঠানগুলো তাল মিলিয়ে এগিয়ে আসার সক্ষমতা অর্জন করেনি।

তিনি বলেন, তার মধ্যে একটা বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে যে করোনার সময়কালে বিশেষ করে ফিজিক্যালি কাজ করাটা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। ২০২২ সালের মধ্যে তারা তাদের নেটওয়ার্কের সম্পূর্ণ সম্প্রসারণ যদি না করে তাহলে আমাদের ব্যবস্থা নেওয়ার একটা এখতিয়ার আছে। আমরা জরিমানা করতে পারব। এর মধ্যে দুই তিনটা ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি।

মন্ত্রী বলেন, আগে যখন কল ড্রপ হতো এই কল ড্রপের জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়ার একটা প্রক্রিয়া শুরু করে বন্ধ করে দিয়েছিল। এরই মধ্যে আমরা নির্দেশ দিয়েছি যে কল ড্রপ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতিপূরণটা যাতে দেওয়া হয়। আরেকটা শুভঙ্করের ফাকি তাদের মধ্যে কাজ করতো। আমাদের বিপুল পরিমাণ ডেটা ব্যবহারকারী হয়েছে। এই ডেটা ব্যবহারকারীদের জন্য একটা জাস্ট প্যাকেজ ঘোষণা করে নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যেই প্যাকেজ শেষ। অতএব যে ডেটাটা অব্যবহৃত রয়ে গেছে সেই ডেটাটা ব্যবহার করতে পারতো না।

তিনি বলেন, আমরা এরইমধ্যে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং তারা এটিতে একমত হয়েছেন। যে আনলিমিটেড ডেটা প্যাকেজ যেন চালু করা হয়। এই আনলিমিটেড ডেটা প্যাকেজের যুগে আমরা কিন্তু প্রবেশ করেছি। এটা আমাদের জন্য একটি ইউনিক মডেল। 

মন্ত্রী বলেন, আমরা একটা দিকেই বেশি যেতে পারি। আমরা টেলিটককে যে পরিমাণ আমাদের আওতার মধ্যে আনতে পারি, বাকী তিনটা অপারেটরদের যেটা হয় জরিমানা করলাম বা যাই কিছু করলাম তারা তাতেই দৌড় মারে আদালতে। 

তিনি বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এইটা এবং আমরা এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সর্বশক্তি দিয়ে কাজ করছি। ইনশাল্লাহ, আমরা এই সমস্যা থেকে পুরো দেশবাসীকে উদ্ধার করার জন্য যা করণীয় আছে তার সবটাই আমরা করতে পারব।

এইউএ/আইএসএইচ